সুমন করাতি, হুগলি: সেই পুরনো ছক। কিন্তু নতুন কায়দায়। প্রথমে নাবালিকাদের স্নান দৃশ্য লুকিয়ে মোবাইলবন্দি করা। তারপর তা ভাইরাল করার ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল। অতঃপর লাগাতার যৌন নির্যাতন। ভয়ংকর ঘটনার সাক্ষী হুগলি। এই ঘটনায় গ্রেপ্তার ২ অভিযুক্ত। এই ‘বাথরুম গ্যাং’য়ের মূল টার্গেট ছিল নাবালিকা ছাত্রীরা। দিনের পর দিন দল বেঁধে অত্যাচার চালাত এই গ্যাং। কিন্তু কেউ কিচ্ছুটি টের পায়নি। জানাজানি হওয়ার ভয়ে নির্যাতনের শিকার হওয়া কিশোরীরা সব মুখ বুজে সহ্য করেছে। এবার সাহস করে সেই ‘বাথরুম গ্যাং’য়ের কুকীর্তি প্রকাশ্যে এনেছে মগরা থানা এলাকার অষ্টম শ্রেণির এক নির্যাতিতা। গ্রেফতার হয়েছে গ্যাংয়ের মূল অভিযুক্ত সঞ্জিত দাওয়ান ওরফে ছোটকা ও আরেক সাগরেদ রোহিত অধিকারী ওরফে হুলো। তবে, দলের বাকিরা এখনও অধরা বলেই খবর।
বিষয়টি নিয়ে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাজ্যের শিশু কমিশন। সম্প্রতি কমিশনের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল হুগলির মগরা থানায় গিয়ে তদন্তকারী অফিসারদের সঙ্গে কথা বলে। ‘বাথরুম গ্যাং’য়ের তোলা অশ্লীল ভিডিও-সহ যাবতীয় কুকীর্তির প্রমাণ সংগ্রহের নির্দেশ দেয়। কমিশনের ভূমিকায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে নির্যাতিতার পরিবার। যদিও তাদের অভিযোগ, স্থানীয় একটি চক্র পুলিশকে ভুল বুঝিয়ে এই গ্যাংয়ের কুকীর্তিকে আড়াল করার মরিয়া চেষ্টা শুরু করেছে। ছোট ঘটনা বলে বিষয়টি লঘু করে দেখানোর চেষ্টা করছে। অথচ শুধু তাদের মেয়েই নয়, এলাকার একাধিক নাবালিকা এই ‘বাথরুম গ্যাং’য়ের লালসার শিকার। অথচ বাকিরা লোকলজ্জার ভয়ে সেই কথা প্রকাশ্যে আনছে না। কমিশনের গাইডলাইন মেনে পুলিশ অবশ্য তদন্ত শুরু করেছে। ঘটনাস্থল ঘুরে নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে সবরকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে শিশু কমিশনের একটি দলও।
ওই নির্যাতিতা জানায়, তাদের স্নানের জায়গা বাড়ির বাইরে। আর সে যখন স্নান করছিল সেই সময় লুকিয়ে তার স্নানের ভিডিও করা হয়। পরে তাকে ওই ভিডিও ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকি দিতে থাকে সঞ্জিত দাওয়ান ও তার সাগরেদরা ভয় দেখায়। কিন্তু সে রাজি হয়নি। এরপর একদিন সঞ্জিত তাকে তার বাড়িতে ডেকে নিয়ে যায়। সঞ্জিতের দেওয়া জল খাওয়ার পর আর কিছু জানতে পারেনি সে। প্রথমে বাড়িতে ভয়ে কিছু বলতে পারেনি। এরপর এই ভিডিও ভাইরাল করার হুমকি বাড়তেই থাকে। এরপর তাকে ভয় দেখিয়ে আরেক অভিযুক্ত হুলোর সঙ্গে অন্য কোথাও চলে যেতে বলা হয়। ওই নাবালিকাকে হুলো তার কাকার বাড়ি নিয়ে যায়। এরপর ওই নাবালিকা ফোনে তার মাকে সমস্ত ঘটনা জানায়। মগরা থানার পুলিশ গিয়ে ওই নাবালিকাকে উদ্ধার করে ও হুলোকে গ্রেপ্তার করে। এই বিষয়ে ওই নাবালিকার মা বলেন, “ছোটকাদের ভাইয়ের মতো দেখতাম। মেয়েদের বলতাম ওরা মামা হয়। আর এখন জানতে পারছি এরাই আমার মেয়েদের সর্বনাশ করেছে। আরও অনেকের সঙ্গে এসব ঘটনা ঘটিয়েছে। এদের কঠিন থেকে কঠিন সাজা হোক, এটাই চাই।”
এই ঘটনার বিষয়ে হুগলি জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ তথা বিশিষ্ট আইনজীবী নির্মাল্য চক্রবর্তী বলেন, “আমাদের মানবিক সরকার সব সময় মহিলাদের পাশে থেকেছেন। মেয়েদের স্নানের ভিডিও ভাইরাল করার ভয় দেখিয়ে যৌন হেনস্তা জঘন্য থেকে জঘন্যতম অপরাধ। আমরা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব যাতে এই ঘটনায় যারা যুক্ত তাদের অবিলম্বে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করে কঠিন সাজার ব্যবস্থা করা হোক।”