ধৈর্যের পাঠই হোক অস্থির সময়ের বন্ধু

ধৈর্যের পাঠই হোক অস্থির সময়ের বন্ধু

শিক্ষা
Spread the love


রাহুল দাস

ভোরের আলো যখন পৃথিবীকে জাগিয়ে তোলে, কিন্তু তখনও মানুষের মনের ভেতর আলাদা এক সূর্যোদয় ঘটে। কারও সকাল শুরু হয় চিন্তায়, কারও একেবারে নতুন পরিকল্পনায়। কেউ আগের দিনের ব্যর্থতার বোঝা নিয়ে নতুন দিন শুরু করেন, আবার কেউ আশার আলো নিয়ে পথ চলেন। কিন্তু যেভাবেই হোক দিনের শুরু, দিনভর টিকে থাকার একমাত্র সত্যিকার মন্ত্র হল- ধৈর্য। এই ধৈর্যই মানুষকে দিশা দেখায়, লড়াই শেখায় এবং শেষপর্যন্ত সাফল্যের কাছে পৌঁছে দেয়।

আমরা প্রতিদিনের চারপাশেই ধৈর্যের চিহ্ন খুঁজে পাই। দেখি একজন গৃহশিক্ষক ছাত্রের ভুলকে রাগ নয়, শেখানোর সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করছেন। দেখি ট্রাফিক পুলিশকে, যিনি রোদ-বৃষ্টি-ঝড় উপেক্ষা করে শৃঙ্খলার বার্তা ছড়াচ্ছেন। দেখি অভাবী সংসারের এক গৃহবধূকে, যিনি সামান্য উপকরণ দিয়েই পরিবারের জন্য হাসিমুখে রান্না করেন। দেখি শ্রমজীবী মানুষকে, যিনি শত সীমাবদ্ধতার পরও নতুন দিনের সংগ্রামে নামতে ভয় পান না। আর দেখি পরীক্ষার্থীর জেদে, যিনি একাধিকবার ব্যর্থ হওয়ার পরও আবার বই হাতে তুলে নেন।

এই সহজলভ্য প্রযুক্তির যুগে- যেখানে এক ক্লিকে ছবি, কয়েক সেকেন্ডে খবর, এক ট্যাপে উত্তর- সেখানে ধৈর্য যেন বিলীন হতে বসেছে। সামান্য সম্পর্কের সমস্যা হলেই ভাঙন, পরীক্ষায় ব্যর্থ হলে হতাশা, কর্মক্ষেত্রে চাপে ভেঙে পড়া- সবই প্রমাণ করে ধৈর্য হারানোর প্রবণতা কতটা বেড়ে গিয়েছে। তবুও সবটা এতটা হতাশার নয়। কারণ এখনও অসংখ্য তরুণ-তরুণী আছেন, যাঁরা নীরবে ধৈর্যের সাধনা করছেন। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বারবার ব্যর্থ হয়েও কেউ হাল ছাড়ছেন না। কেউ গবেষণায় নিজেদের জীবন উজাড় করে দিচ্ছেন, শিল্প-সাহিত্য বা বিজ্ঞানের ভুবনে অনন্ত ধৈর্যের আলোয় এগিয়ে যাচ্ছেন।

ক্রীড়াজগতে যেমন নীরজ চোপড়া আঘাত কাটিয়ে টোকিও অলিম্পিকে সোনা জিতেছেন। মাত্র ১৮ বছর বয়সে রিফাথ শাহরুক ধৈর্যের ফলেই বানিয়েছিলেন বিশ্বের ক্ষুদ্রতম উপগ্রহ ‘কালামস্যাট’। ব্যবসার দুনিয়ায় বিদিত আত্রে ছোট উদ্যোগ থেকে বছরের পর বছর ধৈর্যের সাধনায় গড়ে তুলেছেন সফল প্রতিষ্ঠান মিশো। সংগীতের আঙিনায় প্রতীক কুহাড় ধৈর্য ধরে এক দশক নিজের স্বকীয়তা রক্ষা করে আজকের দিনে তরুণ প্রজন্মের প্রিয় কণ্ঠে পরিণত হয়েছেন। মহেন্দ্র সিং ধোনির গল্পও এখানে প্রাসঙ্গিক। ছোট শহরের ছেলেটি রেলের চাকরি করার পরও ক্রিকেটকে ছাড়েননি। বহু বছরের ধৈর্য, ব্যর্থতা ও নিরলস চেষ্টা তাঁকে এনে দিয়েছে বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়কের আসন। স্টার্টআপ জগতেও একই চিত্র— বাইজুস বা ওলার মতো সংস্থাগুলো একদিনে দাঁড়ায়নি, এর পেছনে আছে ধৈর্যের দীর্ঘ সাধনা। আমাদের আশপাশে এমন অনেকেই আছেন- যাঁরা ধৈর্যের জোরে অনবরত এগিয়ে চলেছেন জীবনপথে।

এই সব বাস্তব উদাহরণ আমাদের মনে করিয়ে দেয়- ধৈর্যই আসল শক্তি। দ্রুত সাফল্যের প্রলোভন অনেককে ভেঙে দিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু অন্যদিকে এক বিশাল অংশ ধৈর্যকে আঁকড়ে ধরে ধাপে ধাপে স্বপ্নকে বাস্তব করছে। তাই আজকের সময়ে ধৈর্যের শিক্ষা আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই এর অনন্ত প্রয়োজন। ধৈর্য এক অদৃশ্য শক্তি, যা মানুষকে শুধু সাফল্যের কাছেই নিয়ে যায় না, বরং তাকে করে তোলে দৃঢ়, স্থিতিশীল আর মানবিক।

(লেখক অক্ষরকর্মী। তুফানগঞ্জের বাসিন্দা।)



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *