ধর্মের নামে বিভেদ নয়, পুজোয় বাঙালি অস্মিতা আর ঐতিহ্যের জয়গান গাইবে ‘পথের পাঁচালি’

ধর্মের নামে বিভেদ নয়, পুজোয় বাঙালি অস্মিতা আর ঐতিহ্যের জয়গান গাইবে ‘পথের পাঁচালি’

রাজ্য/STATE
Spread the love


সুলয়া সিংহ: ধর্মের নামে বিভাজন। বাংলা ভাষায় কথা বললেই ভিনরাজ্যে ‘হেনস্তা’। ভিন জাতি কিংবা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে মনকে বিষিয়ে দেওয়া। সমাজের এ ছবি তো নতুন নয়। কখনও তা প্রকট হয়েছে ভোটব্যাঙ্ককে সামনে রেখে, তো কখনও ক্ষমতা দখলের লড়াইকে কেন্দ্র করে। এদেশে এহেন পরিস্থিতি শিখর ছুঁয়েছিল দেশভাগের প্রাক্কালে। ১৯৪৬ সালে তোলপাড় হয়েছিল গোটা বাংলা। ধর্মকে ঢাল করে কেড়ে নেওয়া হয়েছিল বহু প্রাণ। কিন্তু সেই সময় হাতে-হাত রেখে মানুষকে বাঁচানোর তাগিদে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন কয়েকজন। রক্ষা পেয়েছিল বাংলার অস্মিতা। আর জন্ম নিয়েছিল এক নতুন সংঘের। সমাজ সেবী সংঘ। যারা দীর্ঘ ৮০ বছর ধরে নানা সমাজকল্যাণমূলক কাজের মাধ্যমে ক্লাবের সেই ঐতিহ্য আর প্রতিজ্ঞাকে আজও অক্ষুণ্ণ রেখেছেন। ঐক্যের জন্য তাঁদের সেই সংগ্রামকেই এবার বেছে নেওয়া হয়েছে পুজোর থিম হিসেবেও। আজ, ১৬ আগস্ট ‘ডিরেক্ট অ্যাকশন ডে’তেই হল যার ঘোষণা।

নিজেদের ৮০ তম বর্ষের পুজো সাজাতে সমাজ সেবী ক্লাব দায়িত্ব দিয়েছে শিল্পী প্রদীপ দাসকে। ইতিহাসের পাতা ঘেঁটে তাকে পুজোর মঞ্চে তুলে ধরতে পারদর্শী প্রদীপ। আর তাই ক্লাবের ঐতিহ্য আর ইতিহাসকে ফুটিয়ে তুলতে তাঁর হাতেই ব্যাটনটি ধরানো হয়েছে। শিল্পী বলছেন, “পুজো একটা বিরাট বড় প্ল্যাটফর্ম মানুষের কাছে সামাজিক বার্তাটা পৌঁছে দেওয়ার। সম্প্রতি যেভাবে কিছু কিছু ইস্যুতে বাংলায় অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা হয়েছে, তাতে আমার মনে হল, এই বিষয়ভাবনার বহিঃপ্রকাশটা খুব প্রয়োজন। তাছাড়া সমাজ গড়ার ক্ষেত্রে এই ক্লাবের অবদানও অনেকেরই হয়তো জানা নেই। সেটাও আশা করছি বোঝাতে পারব।”

সাংবাদিক সম্মেলনে সমাজ সেবী সংঘের পুজো উদ্য়োক্তারা। ছবি: শুভজিৎ মুখোপাধ্যায়।

 

থিমের নামও দেওয়া হয়েছে ভাবনার সঙ্গে মিলিয়ে। পথের পাঁচালি। সমাজ সেবী সংঘের দীর্ঘ পথচলার কাহিনিই এ বছর প্রতিফলিত হবে দক্ষিণ কলকাতার এই জনপ্রিয় মণ্ডপে। শনিবার থিমের উন্মোচনের অনুষ্ঠানে ইতিহাসের পাতা উন্মুক্ত করেন ইতিহাসবিদ তপতী গুহঠাকুরতা। জানান, এই পাড়ার বাসিন্দা লীলা রায়, অনিল রায়, সুভাষচন্দ্র বসুর দাদা শরৎচন্দ্র বসু, যদুনাথ সরকারের মতো ব্যক্তিত্বরা কীভাবে ১৯৪৬ সালের অশান্ত বাংলায় বাঙালিদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। পরবর্তীতে সম্প্রীতি আর ঐক্যের ডাক দিয়ে শুরু করেছিলেন দুর্গাপুজো। সেই ট্র্যাডিশনকে বয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্বে বর্তমানে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদেরই অন্যতম অরিজিৎ মৈত্র। বলেন, “দুর্গাপুজোয় শুধু নিজেদের পথচলার কথা বলেই আমরা শেষ করব না। এই এলাকার বিভিন্ন দিকের উন্নতি সাধনের জন্য একবছরের বিশেষ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। সৌন্দর্যায়ন থেকে দূষণমুক্ত পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে এগোবো আমরা। শিল্পী প্রদীপ দাসকেও এই উদ্যোগে আমরা পাশে পেয়েছি।” সমাজ সেবী ক্লাব যে নিজ কর্মকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে সুন্দরভাবে এগিয়ে যাবে, তেমনই বিশ্বাস ক্লাবের চিফ পেট্রন সৃঞ্জয় বোসের।

অতীতে আমজনতার কাজকে ‘কুর্নিশ’ জানিয়ে সমাজ সেবীকে অনেক পুরস্কার এনে দিয়েছেন প্রদীপ দাস। সুন্দরবন আর কলকাতার মধ্যে গড়েছেন ‘সেতু’। এবার রুপোলি পর্দার মতোই তাঁর ‘পথের পাঁচালি’ও সুপারহিট হবে কি না, তারই অপেক্ষা।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ






Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *