দৌড়ঝাঁপ বন্ধ, শিশু শান্ত! বিরূপ আচরণ দেখলেই সর্তক হোন, জানাচ্ছেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা

দৌড়ঝাঁপ বন্ধ, শিশু শান্ত! বিরূপ আচরণ দেখলেই সর্তক হোন, জানাচ্ছেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা

সিনেমা/বিনোদন/থিয়েটার
Spread the love


কে না চায় বাড়ির খুদেটি সবাইকে মাতিয়ে রাখুক। বাড়িতে বাচ্চা থাকা মানেই যেন একরাশ আনন্দ সারাক্ষণ ছড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু চনমনে শিশু চুপ মেরে গেলে ব্যাপারটা সিরিয়াসলি নিন। অনেক কারণ লুকিয়ে থাকতে পারে এই লক্ষণের পিছনে। সতর্ক করছেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের পেডিয়াট্রিক বিভাগের প্রধান ডা. মধুমিতা নন্দী।  সুমিত রায়

শিশু মানেই একটা অদ্ভুত চঞ্চলতার স্রোত যেন। যে চঞ্চলতা শৈশবকে আরও প্রাণবন্ত করে,
হেঁটে-চলে, দৌড়ঝাঁপ করে, লাফালাফিতে মাতিয়ে রাখতে পারলেই সন্তান স্বাভাবিক আছে এটা বোঝা যায়। তবেই না মনে হলে বাড়িতে একটা ফুটফুটে শিশু রয়েছে। যেখানে শৈশবের পেলব স্পর্শে যেন খুশির জোয়ার বয়ে যায়। তবে হঠাৎ করেই যদি নিস্তব্ধতা নেমে আসে, হইহই করে খেলে বেড়ানো শিশু যদি সহসা নিশ্চুপ হয়ে যায়! শান্ত হয়ে পড়ে তবে চিন্তা আছে বই কী! চঞ্চলতা শিশুর সুস্থ স্বাভাবিক থাকার লক্ষণ। প্রকৃত যারা শান্ত স্বভাবের তাদের ছাড়া বাকিদের চনমনে থাকাটাই স্বাভাবিক। তাই এর বিরূপ কিছু দেখলে সাবধান হতে
হবে। কিছুতেই যদি শিশু আগের অবস্থায় ফিরে না আসে, তা হলে সতর্ক হোন।

কী করবেন তখন?

শিশুরা নিজে থেকে বোঝে না তাদের সমস্যা। তবে এইভাবেই হাবেভাবে বুঝিয়ে দেয় যে তারা ঠিক নেই। একদম শিশু কেন, ৭-৮ বছর বয়স অবধিও এমন হঠাৎ পরিবর্তন এলে নজর দিন।

নজরে থাকবে যেগুলি

সাধারণত কোনও নতুন পরিবেশে গেলে বা নতুন মানুষের সঙ্গে দেখা হলে অনেক সময় শিশু চুপ মেরে যায়। অথবা খুব লাফালাফি করে ক্লান্ত হয়ে গেলে সেটা নিয়ে তেমন মাথা ঘামানোর
প্রয়োজন নেই।

তবে চিন্তার কারণ হয়ে উঠবে যদি–

  • চনমনে শিশু হঠাৎ করেই সারাদিন ঝিমিয়ে থাকছে, খেলা করছে না, কথা বলছে না।
  • যে শিশু এক মুহূর্ত চুপ করে বসে না, সে যদি চুপচাপ হয় বসে আছে বা শুয়ে আছে।
  • আপাতদৃষ্টিতে কোনও কারণ চোখে না পড়লেও শিশু সব সময় ঘ্যান ঘ্যান করেই যাচ্ছে বা কান্নাকাটি করছে।
  • সারাক্ষণ প্রশ্ন করতে থাকা শিশু একেবারে চুপচাপ হয়ে গেলে সাবধান হতে হবে।
  • শিশু ঘুম থেকে ওঠার সময় ক্লান্তি চোখে পরলে সাবধান। যে একঝটকায় উঠে পড়ত, সে
  • যদি শত ডাকাডাকিতেও না ওঠে তা হলে সাবধান হতে হবে।
  • শিশু যে কাজগুলো করে আনন্দ পেত সেগুলো করতে অনীহা।
  • প্রিয় খাবার খেতেও বিরক্তি।
  • কোথাও যেতে না চাওয়া। হতে পারে খুব ভালো লাগার জায়গাও বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
  • যে শিশু টয়লেট পেলে বাথরুমে গিয়ে করত, সে হঠাৎ করেই আবার বিছানায় করতে শুরু করতে পারে। এমন হলে তা খুবই অ্যালার্মিং।
  • ঠিক উল্টোটাও হতে পারে- শান্ত শিশু হঠাৎ করেই ভীষণ রেগে উঠছে, জিনিসপত্র ছোড়াছুড়ি শুরু করে, মা-বাবার উপর বিরক্ত প্রকাশ করতে থাকলে সাবধান হোন।

হঠাৎ চরিত্র বদলের আড়ালে

নানা শারীরিক কারণ লুকিয়ে থাকতে পারে। এমন দেখলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এটা ফেলে রাখার বিষয় একেবারেই নয়। দরকার পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করে এই সমস্যার উৎস খুঁজে বের করা। না হলে পরবর্তীকালে নানা শারীরিক কুপ্রভাব চোখে পড়ে। দায়ী শারীরিক অসুস্থতা। কোনও ব্যাকটিরিয়াল বা ভাইরাল সংক্রমণ মেনিনজাইটিস সেপসিস কোনও চোট বা ব্যথা।

চিকিৎসা দরকার?
অবশ্যই। শুধুমাত্র পেটে ব্যথা-মাথা ব্যথায় নয়, শিশুর চারিত্রিক অস্বাভাবিকতাও একটা বৃহৎ পরিসরে অসুখের পূর্বাভাস। শান্ত শিশুকে আবার আগের মতো চনমনে করে তুলতেই হবে। কোনওরকম অস্বাভাবিকতাকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। অভিভাবকদের শিশুদের প্রতি তাই বিশেষ নজর রাখা খুবই প্রয়োজন। এর পেছনে যদি কোনও শারীরিক সমস্যা থাকে তবে পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে চিকিৎসা করা সম্ভব। আর মানসিক কারণ খুঁজে পেলে সে ক্ষেত্রে শিশুর কাউন্সেলিং দরকার। সঙ্গে বাবা-মা ও পরিবারের অন্য সদস্যদেরও কাউন্সেলিংয়ে অংশগ্রহণ করতে হবে।

শিশুকে শেখান

শিশুকে কোনও নতুন পরিবেশে নিয়ে যাওয়ার আগে সেখানকার ব্যাপারে আগে থেকে মানসিক প্রস্তুতি দরকার। এখন বেশিরভাগ বাবা-মায়েরাই কাজে বেরিয়ে যান। শিশু বাড়িতে থাকে আয়ার কাছে অথবা প্লে স্কুলে। এমন পরিবেশে থাকলে শিশু কেমন থাকে,
কাদের সঙ্গে কাটাচ্ছে এ বিষয়গুলি মা-বাবার খুব ভালো করে খেয়াল রাখা দরকার। শিশুর চারপাশে যাঁরা থাকেন তাঁদের উপর চোখ বন্ধ করে ভরসা করা ঠিক নয়। যৌন নির্যাতন চেনা-পরিচিতির মধ্যেই ঘটে। শিশু একটু বুঝতে শিখলে তাকে গুড টাচ, ব্যাড টাচ বোঝান। সব কথা মা-বাবাকে জানাতে হবে সেটাও শেখাতে হবে। এসব ছোটখাটো বিষয়গুলোই কিন্তু শিশুর বেড়ে ওঠার পথে বড় সমস্যার কারণ হতে পারে। তাই মা-বাবারা সজাগ থাকুন ও শিশু শান্ত হয়ে পড়লে তাকে চনমনে রাখার চেষ্টা করুন।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *