দূষণেও রাজনীতি

দূষণেও রাজনীতি

শিক্ষা
Spread the love


দিল্লির ৭০টি আসনে ৫ ফেব্রুয়ারির ভোটের লক্ষ্যে দানখয়রাতির হরেকরকমের প্রতিশ্রুতির প্রতিযোগিতা চলছে আপ, বিজেপি ও কংগ্রেসের মধ্যে। ভোটে এ ধরনের প্রতিশ্রুতি, প্রতিপক্ষকে ব্যঙ্গবিদ্রুপ ইত্যাদি এ দেশের রাজনীতির দস্তুর। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে অন্য সব বিষয় ছাপিয়ে ওই তিন দলের চাপানউতোরের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে যমুনার দূষণ। যমুনার জলে দূষণ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

কিন্তু ভোট প্রচারে সাধারণ মানুষের চোখে ঠেকছে সেই জল দূষণ নিয়ে তিন প্রধান রাজনৈতিক দলের তিন মহারথীর মধ্যে প্রায় কলতলার ঝগড়া। সূচনাটা অবশ্য আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালই করেছিলেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, হরিয়ানার বিজেপি সরকার যমুনার জলে বিষ মেশাচ্ছে। প্রতিবেশী রাজ্যের জন্যই দিল্লিবাসীকে যমুনার বিষাক্ত জল খেতে হচ্ছে। একটি রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ ঘিরে উথালপাতাল শুরু হয় রাজনীতিতে। হরিয়ানায় কেজরির বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছে।

কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বিষাক্ত জল পাঠিয়ে হরিয়ানার মানুষ দেশের প্রধানমন্ত্রীকে মেরে ফেলতে পারে বলে কথা কীভাবে একজন বলতে পারেন, তা নিয়ে তিনি কটাক্ষ করেন। দিল্লির প্রাক্তন আপ মুখ্যমন্ত্রীর হরিয়ানা সরকারকে অপমান করার অভিযোগের পাশাপাশি তাঁকে কার্যত সনাতন বিরোধী বলে দেগে দেওয়ার চেষ্টা করেন প্রধানমন্ত্রী।

লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা একটি ভিডিওতে দিল্লিতে যমুনার হতশ্রী ছবি তুলে ধরেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে যমুনায় দূষণ ছড়ানোর একটি বিবরণ পেশ করেছেন তিনি। বিজেপি ও কংগ্রেসের লাগাতার আক্রমণের জবাবে কেজরিওয়াল প্রকাশ্যে যমুনার জল খেতে রাহুল গান্ধি এবং অমিত শা-কে পালটা চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন। তাঁর এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে হোক বা না হোক, হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী নায়েব সিং সাইনি প্রকাশ্যে যমুনার জল পান করে কেজরিওয়ালকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, জাঠভূমের সরকার মোটেই যমুনার জলকে বিষাক্ত করে না।

এই রাজনৈতিক আকচা-আকচির মধ্যে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমারের সঙ্গেও দ্বৈরথে নেমেছেন কেজরি। দিল্লির আরও অনেক সমস্যার সঙ্গে অন্যতম যমুনার দূষণও। কিন্তু এই ইস্যুতে রাজনীতির লড়াই যতটা জমে উঠছে, সমস্যা সমাধানে তৎপরতা ততটা চোখে পড়ছে না। দিল্লিতে ২০১৩ সাল থেকে একটানা ক্ষমতায় রয়েছে আপ। গতবছর পর্যন্ত দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন কেজরিওয়াল। কাজেই প্রতি নির্বাচনে যমুনার জলকে দূষণমুক্ত করতে তাঁর প্রতিশ্রুতি কেন বাস্তবায়িত হয়নি, সেই কৈফিয়ত তাঁর কাছে চাওয়াই যায়।

আবার কেন্দ্রে ২০১৪ সাল থেকে একটানা ক্ষমতায় রয়েছে মোদি সরকার। এই নিয়ে তৃতীয়বার তিনি প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে। তাঁর নাকের ডগায় ভারতের সনাতন সংস্কৃতি এবং পরম্পরার সঙ্গে যুক্ত যমুনার জল পরিষ্কার না হওয়ার বিষয়টি দেখার খানিকটা দায়িত্ব তাঁর সরকারেরও। অথচ মোদি এবং কেজরিওয়াল নিজেদের গাফিলতি বেমালুম এড়িয়ে যাচ্ছেন। যমুনার দূষণের দায় কংগ্রেসেরও। কারণ ওই দলটি দীর্ঘ সময় দিল্লি ও কেন্দ্রের সরকারে ছিল।

আপ এবং বিজেপি যে সমস্ত প্রতিশ্রুতি সামনে রেখে কংগ্রেসকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল, তার সিকিভাগও বাস্তবায়িত করেনি। যমুনায় দূষণ সেগুলির অন্যতম। সবক্ষেত্রেই স্থানীয় ইতিহাস, সংস্কৃতির সঙ্গে নদীর সম্পর্ক থাকে। কায়রোর নীলনদ, নিউ ইয়র্কের হাডসন কিংবা লন্ডনের টেমসের মতো দিল্লির সঙ্গে যমুনার সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। দিল্লির মধ্যে মাত্র ২২ কিলোমিটার যমুনার গতিপথ। যা যমুনার মোট দৈর্ঘ্যের ২ শতাংশেরও কম। অথচ যমুনার জল দূষণের প্রধান কারণ দিল্লি।

নিকাশিনালার মাধ্যমে যাবতীয় নোংরা এবং দূষিত সামগ্রী যমুনায় মেশে। নিয়মিত পরিষ্কার না করার কারণ একমাত্র দিল্লি সরকারই বলতে পারে। ভোটের পরও যদি যমুনার জল দূষণ নিয়ন্ত্রণে আনার ব্যাপারে শুধু মুখে মারিতং রাজনীতি চলতে থাকে, তাহলে তার চেয়ে দুর্ভাগ্যের কিছু থাকবে না।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *