স্টাফ রিপোর্টার: কাজ করিয়েছে কিন্তু টাকা দেয়নি কেন্দ্র। কেবলমাত্র দু’টি প্রকল্পের বকেয়া টাকার পরিমাণ যা দাঁড়িয়েছে, তার অঙ্ক চোখ কপালে তুলে দেওয়ার মতোই। একশো দিনের কাজ ও প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা প্রকল্প বাবদ কেন্দ্রের কাছে রাজ্য পাবে ৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি!
সম্প্রতি রাজ্যের এক বাসিন্দা তথ্য অধিকার আইন বা আরটিআই করে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এই দুই প্রকল্পের বকেয়া কত তা জানতে চান। সেই প্রশ্নের উত্তরেই কেন্দ্র জানিয়েছে, বকেয়ার অঙ্ক পার হয়ে গিয়েছে তিন হাজার কোটি টাকারও বেশি। তার সঙ্গে আরও একটি তথ্যও মিলেছে। কেন্দ্র জানিয়েছে, এই দুই প্রকল্পে গত তিন বছরে একটি টাকাও রাজ্যকে দেওয়া হয়নি। ২০২২ সালের ৯ মার্চের পর থেকে রাজ্যের প্রাপ্য টাকা বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
নদিয়ার রানাঘাটের ঘোষ কলোনির বাসিন্দা সিন্থল ঘোষ কেন্দ্রের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা’ ও ‘মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান গ্যারান্টি আইন’ বা ‘মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারেন্টি অ্যাক্ট (এমজিএনরেগা)’–দুই প্রকল্পের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের কাছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কত টাকা বাকি রয়েছে? একইসঙ্গে তাঁর প্রশ্ন ছিল, রাজ্য সরকারকে এ বাবদ কত টাকা দিয়েছে কেন্দ্র?
এই দুই প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের এমজিএনরেগা বিভাগের সিপিআইও এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর মনোজকুমার মীনা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশাবলি না মানায় ‘মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান গ্যারান্টি আইন ২০০৫’-এর বিধান অনুযায়ী এই টাকা আটকে রাখা রয়েছে। বিশদ হিসাব বলছে, ২০২২ সালের ৮ মার্চ থেকে অ্যাডমিন খাতে ১,৭৬১.৬৬ লাখ, মেটিরিয়াল কম্পোনেন্ট খাতে ২১,৪৩৫৭.১১ লাখ এবং ওয়েজ কম্পোনেন্ট খাতে ১৪,৫৭২২.৩৭ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে। লাখের এই হিসাব কোটিতে করলে তা প্রায় ৩৬১৮.৪১ কোটি টাকারও বেশি।
রাজ্যকে বঞ্চনার ধারা এখানেই শেষ নয়, সম্প্রতি রাজ্যসভায় এক প্রশ্নের উত্তরে যে পরিসংখ্যান কেন্দ্রের তরফে দেওয়া হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, দেশে সব থেকে বেশি বকেয়া প্রাপ্য রয়েছে এ রাজ্যেরই। একশো দিনের কাজ থেকে পানীয় জল প্রকল্প, বাড়ি তৈরি থেকে রাস্তা নির্মাণ, সব ক্ষেত্রেই টাকা বন্ধ করে রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার।
বারবার এ নিয়ে সরব হয়েছে রাজ্য সরকার। একশো দিনের টাকা দিতে বলেছে কলকাতা হাই কোর্টও। কিন্তু তারপরও একটি টাকাও দেয়নি কেন্দ্র। অথচ রাজ্য সরকার এই দুই প্রকল্পের অর্থ উপভোক্তাদের হাতে তুলে দিয়েছে রাজ্যের ভাঁড়ার থেকেই।
সমাজমাধ্যমে একটি তালিকা তুলে দিয়ে কেন্দ্রের এই বঞ্চনায় সরব তৃণমূল কংগ্রেস সাফ জানিয়েছে, অন্ধ্রপ্রদেশ, বিহার, উত্তরপ্রদেশ দফায় দফায় তাদের প্রাপ্য টাকা পাচ্ছে। কেবলমাত্র সম্পূর্ণ টাকা বন্ধ বাংলার জন্য। কেন্দ্রের ইচ্ছাকৃত বৈষম্যের লক্ষ্য এ রাজ্য। আইনে বাধ্য হলেও টাকা বন্ধ করে রাখা হয়েছে। তৃণমূল বলছে, বিজেপির বিভাজনমূলক রাজনীতিকে ধারাবাহিকভাবে প্রত্যাখ্যান করার জন্যই বাংলাকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। ‘কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশাবলি না মানায়’ টাকা আটকে রাখার যুক্তি উড়িয়ে তৃণমূলের জবাব, বাংলায় খুব কম সংখ্যক জাল জব কার্ড মিলেছে। কেন্দ্র অনিয়মের কথা বললেও এটাতেই স্পষ্ট, তাদের দাবি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত।