অর্ণব আইচ: জমা রাখা পুরনো অস্ত্র পাচারে আরও অন্তত পাঁচটি বন্দুক বিপণির উপর নজর গোয়েন্দাদের। দাঁ-দের বিপণির মতো ওই দোকানগুলি থেকেও একই পদ্ধতিতে অস্ত্র পাচার হয়েছে, এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না গোয়েন্দারা। এ ছাড়াও দাঁ বিপণি থেকে কতজনের কাছে বেআইনিভাবে অস্ত্র পাচার হয়েছে, সেই তথ্যও জানার চেষ্টা করছে রাজ্য পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স। এবার পাচার হয়ে যাওয়া ওই অস্ত্রগুলির সন্ধানে চলছে এসটিএফের তল্লাশি। রহড়ার মধুসূদন মুখোপাধ্যায়ের মতো কয়েকজন এজেন্ট বা অস্ত্র কারবারির মাধ্যমে সেগুলি পাচার হয়েছে, এমন সম্ভাবনা পুলিশ উড়িয়ে দিচ্ছে না। এ ছাড়াও নাগাল্যান্ড ও মণিপুরের ‘ভুয়া লাইসেন্স’-এ দাঁ-দের দোকান থেকে অস্ত্র পাচার হয়েছিল কি না, সেই তথ্যও জানার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা।
রহড়া থেকে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় রাজ্য পুলিশের এসটিএফের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন কলকাতার শতাব্দীপ্রাচীন প্রসিদ্ধ বন্দুক বিপণি দাঁ পরিবারের তিন সদস্য। এসটিএফের জেরার মুখে দাঁ পরিবারের তিন ভাইয়ের দাবি, তাঁদের দোকান প্রত্যেক মাসে পরিদর্শন করত পুলিশ। প্রতে্যকটি অস্ত্রের স্টক মিলিয়ে দেখা হত। যে আধিকারিকরা পরিদর্শন করতেন, তাঁদের সইও রয়েছে রেজিস্টার খাতায়। এ ছাড়াও যে অস্ত্রগুলি বাইরে বিক্রি করা হয়েছে, সেগুলি বিক্রি করা হয়েছে বৈধভাবেই। যদিও দাঁ ভাইদের এই দাবি খতিয়ে দেখছেন রাজ্য এসটিএফের গোয়েন্দারা। কিন্তু এখানেই অসঙ্গতি দেখছে এসটিএফ।
গত মাসে রহড়ার একটি আবাসনের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় প্রচুর অস্ত্র। এর মধ্যে যেমন বেআইনি পিস্তল ছিল, তেমনই ছিল একনলা, দোনলা বন্দুক, রাইফেল ও পাম্প গান। এগুলি দাঁ-সহ কলকাতার বিভিন্ন বৈধ দোকান থেকেই অবৈধভাবে পাচার হয়েছে বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় মধুসূদন মুখোপাধ্যায় নামে এক ব্যক্তিকে বারাকপুর কমিশনারেটের পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ওই ব্যক্তি নিজের ফ্ল্যাটে রীতিমতো বেআইনি অস্ত্রের দোকান খুলে বসে। ওই ব্যক্তি চাহিদা অনুযায়ী ওই বন্দুকগুলিও চোরাপথে পাচার করেছিল বাইরে। কিন্তু অস্ত্রগুলি পাচারের সময় মধুসূদন ক্রেতাকে কোনও নথি দেয়নি। আবার কখনও বন্দুকগুলি বৈধ বলে দাবি করে জাল নথি দিয়েছে বলে খবর পেয়েছেন এসটিএফের গোয়েন্দারা। ফলে জেরার সময় দাঁ ভাইদের বক্তব্যে অসঙ্গতি রয়েছে বলে দাবি এসটিএফ আধিকারিকদের।
এদিকে, দাঁ-দের দোকান ছাড়াও শহরের আরও কয়েকটি বন্দুকের দোকানে নিজেদের অস্ত্র জমা রেখেছেন অনেকেই। হয় ওই অস্ত্রগুলির লাইসেন্সের মেয়াদ ফুরিয়েছে, না হয় কোনও সরকারি বাধায় সেগুলি জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কেউ আর নেননি সেগুলি। ওই পুরনো অস্ত্রগুলি সারিয়ে তুলে ও পালিশ করে বাইরে পাচার করা হয়েছে, এমন সম্ভব। তাই ওই অস্ত্রের দোকানগুলির উপর নজরদারি শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।