ঠাকুমার ঝুলি আর আজকের ছোটবেলা

ঠাকুমার ঝুলি আর আজকের ছোটবেলা

ব্লগ/BLOG
Spread the love


 

  • গৌতমী ভট্টাচার্য

আমরা যখন ছোট ছিলাম, আমাদের জন্য কত কিছুই না ছিল। কিন্তু এখন? ওদের মনে চিরকাল দাগ কেটে যায় তেমন কিছু আর কই!

ওদের জন্য সেভাবে লেখালেখি করা হয় না। বড়দের জন্য ভিড় করা লেখায় ছোটরা আজকাল বেশ কোণঠাসা হয়ে পড়ছে। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার,  সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত,  সুকুমার রায়, লীলা মজুমদার, সুখলতা রাও, ভবানীপ্রসাদ মজুমদার, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়দের লেখা আজও আমাদের মনে হিন্দোল জাগায়। মজাদার ছন্দোবদ্ধ ছড়া বা গদ্য ছোট থেকে বড় সকলের কাছেই পছন্দের। এই সাহিত্যিকদের এসব অমর সৃষ্টির হাত ধরেই আমাদের পথচলা।

ছোটবেলায় মা-ঠাকুমার মুখে রূপকথার গল্প শুনে আমরা রাতে শুতে যেতাম। সোনার কাঠি, রুপোর কাঠি আমাদের চোখে স্বপ্নের আলোড়ন তুলত। এখন শিশুরা সে স্বপ্ন দেখে না। কারণ তারা রূপকথার গল্প পড়ে না। বা শুনতে পায় না। বাবা-মায়ের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে পূরণ করার তাগিদে ছোটরা আজকাল নিজেদের ‘অস্তিত্ব’ হারিয়ে ফেলছে। ‘ব্যস্ততা’র জীবনে রূপকথারা লোহার সিন্দুকে বন্দি। শৈশবের প্রাণভোমরাকে প্রযুক্তিবিদ্যা আটক করে নিয়েছে। সেলফোনের প্রতি অদম্য আকর্ষণ বড়দের পাশাপাশি ছোটদেরও সমানভাবে গ্রাস করেছে। আমরা ছাপা বই থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিয়েছি কিন্তু ট্যাব বা সেলফোন বা কম্পিউটারের ওপর নির্ভরতা সমানে বাড়িয়ে চলেছি। শিশুদের জন্য সবসময় বড় মাঠ প্রয়োজন। সবুজ মাঠ। যে মাঠে খেলাধুলো করলে ওদের মনের মধ্যেও সবুজ ভাব অনেকটা বেড়ে যাবে। ছোটদের নিজস্ব একটা জগত আছে। সেই জগতে দায়বদ্ধতার বাইরে অতি অবশ্যই ওদের কিছুটা সময় ছেড়ে দেওয়া প্রয়োজন। যাতে ওরা নিজেরা নিজেদের বুঝতে পারে। নিজের মনের সঙ্গে অপরের মনের ভেদাভেদ মানিয়ে নিতে পারে। ওর সমবয়সি বন্ধুটির আচার-আচরণ কথাবার্তার সঙ্গে পরিচিত হতে পারে। জীবনে অনেক আনন্দ আছে। শৈশবের আনন্দ সবচেয়ে মধুর।

শিশু মন সহজ-সরল-ফুলের মতো সুন্দর। অথচ বয়স বৃদ্ধি পেলে আমরা আমাদের অতীতের এই সৌন্দর্যকে ভুলে যাই। ভাবনার উন্নতির প্রসার ঘটাতে গিয়ে ছন্দময় শৈশবকে ভুলে যাই। শৈশবের চাহিদা, আশা-আকাঙ্ক্ষাকে মনে রাখি না। তাই যাঁরা লেখালেখি করেন তাঁদের ভাষা হয়ে যায় গুরুগম্ভীর। আর খুদে পড়ুয়ারা অবহেলিত হতে থাকে। ওদের জন্য কোনও নতুন লেখা তৈরি হয় না। ওরাও কিন্তু ওদের নিজস্ব জগতের ছন্দময়তায় পড়তে চায়। তাই ওদের মতো করে গল্প, কল্পবিজ্ঞান আরও বেশি বেশি প্রকাশ হওয়া প্রয়োজন।

আসলে কল্পনার জগতে প্রবেশের সুযোগ না থাকায় ছোটরা কল্পনা করতেই ভুলে যাচ্ছে। তার পরিণতিতে ওরা আজকাল খুব তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যাচ্ছে। ওদের মনের সুকুমার বৃত্তিগুলি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই ঠাকুমার ঝুলির মতো রত্নভাণ্ডারগুলিকে ওদের সামনে ভালোভাবে তুলে ধরার উদ্যোগ আরও বেশিভাবে নিতে হবে। ওদের ভালোভাবে রাখার দায়িত্ব কিন্তু আমাদেরই। ছোটরা ভালো থাকলেই বড়রা থাকবে।

(লেখক বাচিকশিল্পী, ছড়াকার)



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *