ঠকে যাওয়াদের দুঃখ ভোলার ঠিকানা চাই

ঠকে যাওয়াদের দুঃখ ভোলার ঠিকানা চাই

শিক্ষা
Spread the love


 

  • সঞ্জয় মল্লিক

গ্রামের একটি মেয়ে বুকে পাথর নিয়ে জীবনের সব মুছে ফেলার চেষ্টা করে। কারণ বিয়ের প্রলোভন দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক ও প্রতারণা। এক কলেজ পড়ুয়া রাতে চোখের জলে বালিশ ভিজিয়ে ভাবে সে এই পৃথিবীতে বেমানান। দীর্ঘদিনের সম্পর্ক অস্বীকার করেছে তার প্রেমিকা।

দুজন সম্পর্কে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। হঠাৎ একজন কথা রাখার প্রয়োজনীয়তাকে ধুলোয় মিশিয়ে তৃতীয়জনের জন্য অর্থ, শরীর ও মন সর্বস্ব ঢেলে দেয়। গুছিয়ে নেয় বাড়ি, গাড়ি। সর্বস্ব ত্যাগ করে একজনকে জীবনে আনলেন, সেই মানুষই জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলল। কাছের একজন মানুষকে টাকা ধার দিয়ে টাকা তো পেলেনই না, উলটে মানুষটির কাছে পর হয়ে গেলেন!

বন্ধু কোনও সংস্থা বা কাজে যুক্ত হতে চাইছে। আপনি আপনার সার্কেলে তাঁকে যুক্ত করলেন। কিছুদিন পর সেই বন্ধুই আপনার তৈরি সার্কেল থেকে আপনাকে বের করার ফন্দিতে নামল। এজেন্টের সঙ্গে ভালো সম্পর্ককে গুরুত্ব দিয়ে কোথাও তিল তিল করে জমানো টাকা সঞ্চয় করলেন। হঠাৎ দেখলেন সেই সংস্থাও নেই, সেই মানুষটিও নেই! ব্যস্ততায় কোনও মেসেজ ক্লিক করলেন বা অচেনা নম্বরের ফোন রিসিভ করলেন। হয়তো ভুলে কিছু শেয়ারও করলেন। দেখলেন মুহূর্তেই টাকা উধাও।

এরকম হাজারো ঠকে যাওয়ার গল্প তরাই-ডুয়ার্স সহ উত্তরবঙ্গের সব জায়গায়। হয়তো বা গোটা দেশেই। আসলে ঠকানো খুব সহজ। কারণ ঠকানোর জন্য কঠিন, বিশ্বাসঘাতক, নিষ্ঠুর, মিথ্যেবাদী ও অমানবিক হলেই হয়। আর এটা সহজেই হওয়া যায়। কিন্তু ঠকে যাওয়া খুব কঠিন। কারণ ঠকে যাওয়ার জন্য একটি সহজ, সরল, সৎ ও বিশ্বাসী মন লাগে। যেটা সবার থাকে না! আর মিথ্যেবাদী ও অমানবিক সমগোত্রীয় মানুষ যখন ঠকে যায়, তখন তারা তার বদলা নেয় ঠকিয়ে বা প্রতিহিংসা করে। ফলস্বরূপ হিংসা, খুন।

কিন্তু ঠকে যাওয়া সহজ, সরল, সৎ ও বিশ্বাসী মানুষগুলোর কিছু করার থাকে না! তাদের সাজানো বাগান ভেঙে টুকরো হয়। ঠকতে ঠকতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যায়। তারা নীরবে দীর্ঘশ্বাসে চোখের জল ফেলে বিনিদ্র রাত জাগে। বড়জোর অভিমান, অভিযোগ জমা দেয় সময়ের কাছে। অনেকে দুঃসহ যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে খারাপ সিদ্ধান্তও নেয়। বেশিরভাগ পরিবার ও দায়িত্বের কথা ভেবে লড়াই করে। কিন্তু বেঁচে থাকায় প্রাণ থাকে না। এ বেঁচে থাকা যেন মৃত্যুর চেয়েও কষ্টকর।

ঠকে যাওয়া মানুষের কান্নায়-দীর্ঘশ্বাসে আজ বাতাস ভারী। তাদের মনের কথা কাউকে বলার, কষ্ট ভোলার জায়গা নেই! কষ্ট ভুলতে তাদের বেঁচে থাকার কোনও পৃথিবী নেই! ঠকে যাওয়াদের এমন কোনও ঠিকানা নেই, যেখানে সব ঠকে যাওয়া মানুষগুলো একত্রিত হবে! নিজেরা নিজেদের কথা, দুঃখ ও জীবনের গল্প ভাগ করে হালকা হবে। একজন ঠকে যাওয়া মানুষ আরেকজন ঠকে যাওয়া মানুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বেঁচে থাকার অক্সিজেন খুঁজে পাবে। কোনও মানুষকে পৃথিবী ছাড়তে হবে না। একজন ঠকে যাওয়া মানুষের জন্য মলম হয়ে অপর এক ঠকে যাওয়া মানুষ থাকবে। ঠকে যাওয়া সহজ সরল মানুষগুলোর এমন একটি ঠিকানা হতে পারে না কি?

(লেখক কোচবিহারের শিক্ষক ও সাহিত্যিক)



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *