উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ একটা সময় যশস্বী জয়সওয়াল, মুশির খান, সরফরাজ খানের মতো পরিচিত ক্রিকেটারের সঙ্গে চুটিয়ে ক্রিকেট খেলেছেন আরিয়ান। আর আজ তিনি লিঙ্গ পরিবর্তন করায় বিশ্ব ক্রিকেটে অচ্ছুত। কারণ আইসিসির নিয়মে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের ক্রিকেট খেলার স্বীকৃতি নেই। তাই পুরুষ থেকে মহিলা হয়ে যাওয়া আরিয়ান আজ ক্রিকেট থেকে বাইরে। আরিয়ান লিঙ্গ পরিবর্তন করে আজ সে অনয়া।
প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার ও ব্যাটিং কোচ সঞ্জয় বাঙ্গারের একমাত্র পুত্র আরিয়ান বাঙ্গার। আরিয়ানও এক সময় নামজাদা ক্রিকেটার ছিলেন। তিনি পাল্লা দিয়ে ক্রিকেট খেলতেন যশস্বী জয়সওয়াল, মুশির খান, সরফরাজ খানের মতো ক্রিকেটারদের সঙ্গে। তা কিছু বছর আগে পর্যন্ত। তবে আরিয়ান এখন অনয়া! বাঙ্গারপুত্র হরমোন প্রতিস্থাপন অস্ত্রোপচার (Hormone Substitute Remedy) বা এইচআরটি (HRT) করিয়ে রূপান্তরকামী হয়েছেন। দীর্ঘ ১১ মাসের এই পরিবর্তনের লড়াইয়ের গল্প গতবছর নভেম্বরে ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করেই নেটপাড়ায় চর্চায় এসেছিলেন অনয়া।
সম্প্রতি অনয়া বিদেশ থেকে ভারতে ফিরেছেন। তিনি এক সংবাদ মাধ্যমে শুনিয়েছেন পুরুষ থেকে নারী হয়ে ওঠার গল্প। এই চলার পথে তাঁকে কোন কোন প্রতিকূলতা ও চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তাঁর বর্ণনা দিতে গিয়ে তুলে ধরেছেন একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। অনয়া জানালেন লিঙ্গ পরিবর্তনের পর তাঁকে ঠিক কতটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। বেশ কয়েক জন ক্রিকেটার তাঁকে তাঁদের নগ্ন ছবি পাঠাতেক। এমনকি এক জন প্রাক্তন ক্রিকেটার যৌন সম্পর্কের প্রস্তাবও দিয়েছিলেন।
কাজের সূত্রে বেশির ভাগ সময় ইংল্যান্ডে থাকেন অনয়া বাঙ্গার। সম্প্রতি ভারতে এসেছিলেন। সেই অভিজ্ঞতা খুব মধুর ছিল না তাঁর জন্য। তাঁর স্বপ্ন ছিল বাবার মতো ক্রিকেটার হবেন। খেলা শুরুও করেছিলেন। কিন্তু লিঙ্গ পরিবর্তন করার পর জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন শেষ হয়ে গিয়েছে সঞ্জয় বাঙ্গারের সন্তানের। ২৩ বছরের আরিয়ান ছোট থেকে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। ইসলাম জিমখানা ক্লাবের হয়ে খেলতেন তিনি। পরে চলে যান লন্ডনে। সেখানে গিয়ে লিস্টারশায়ারের হিঙ্কলে ক্রিকেট ক্লাবের হয়েও খেলতেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। এখন ম্যাঞ্চেস্টারে থাকেন অনয়া।
অনয়া জানিয়েছেন কী ভাবে পুরুষ থেকে নারী হয়ে উঠেছেন। তিনি জানান, “আমার যখন আট-ন’বছর বয়স, তখন মায়ের আলমারি থেকে টেনে টেনে ওঁর পোশাকগুলো বার করতাম। সেগুলো পরতে চাইতাম। পরতামও। তার পর আয়নায় নিজেকে দেখতাম। মনে মনে নিজেকে মেয়ে ভাবতাম। বলতাম, আমি মেয়ে। আমি মেয়ে হতে চাই। সেই সময় আইনি কারণে লিঙ্গ পরিবির্তন করতে পারিনি। ২০১১ সালে লিঙ্গ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেই। সেই মতো ‘হরমোনাল রিপ্লেসমেন্ট সার্জারি’ হয়। ১০ মাস ধরে সেই প্রক্রিয়া চলেছে।” অনয়া বলেন, “আমি যে মনে মনে নারী হতে চাই, সেটা কাউকে বলতে পারিনি যাহেতু বাবার একটা পরিচিতি আছে। অবশেষে নিজের সিদ্ধান্তেই টিকে থেকেছি। নিজেকে ভালবেসেছি। নিজেকে নিয়ে আমি গর্বিত।”
অনয়া বলেন, “ভারতে গিয়েছিলাম কিছু দিন আগে। এক প্রাক্তন ক্রিকেটারকে আমার নিজের কথা বলেছিলাম। তিনি আমাকে বলেছিলেন, গাড়ির মধ্যে চলো, তোমার সঙ্গে শুতে চাই।” তিনি আরও বলেন, “আমি যেমন অনেকের সাহায্য পেয়েছি, তেমনই অনেক হেনস্থার শিকারও হয়েছি। কিছু ক্রিকেটার আমাকে নগ্ন ছবি পাঠাত। এক জন সকলের সামনে গালিও দিয়েছিলেন। সেই তিনিই আবার আমার পাশে বসে আমার সঙ্গে ছবিও তুলতে চেয়েছিলেন।”