ট্রেনের ‘নিত্যযাত্রী’ হনুমান! খড়গপুর-হাটিয়া প্যাসেঞ্জারে পবনপুত্রের যাতায়াত ভাইরাল

ট্রেনের ‘নিত্যযাত্রী’ হনুমান! খড়গপুর-হাটিয়া প্যাসেঞ্জারে পবনপুত্রের যাতায়াত ভাইরাল

ইন্ডিয়া খবর/INDIA
Spread the love


সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: হনুমানের ট্রেন ট্রাভেল? নাকি ডেলি প্যাসেঞ্জারি? যাই হোক না কেন, কথাগুলো অদ্ভুত ঠেকলেও এটাই খাঁটি বাস্তব। প্রায় ফি দিন খড়গপুর-হাটিয়া প্যাসেঞ্জারে রাঁচি ডিভিশনের সিল্লি থেকে রাঁচি পর্যন্ত ট্রেনের সিটে চড়ে যাওয়া-আসা করে একটি হনুমান। সিল্লি থেকে রাঁচি যাওয়ার পথে প্রায় ৫৩ কিলোমিটার রোজ যাতায়াত করে পবনপুত্র! ৫০ কিলোমিটারের বেশি এই দীর্ঘ পথে একাধিক স্টেশন পড়ে। তার মধ্যে টাটি সিলওয়ে, নামকুম স্টেশনে প্রায় সব ট্রেন স্টপেজ দেয়। কিন্তু ওই প্যাসেঞ্জার ট্রেন থেকে নামে না হনুমান। রাঁচি ঢোকার সময় সুবর্ণরেখা নদী পেরলে তবেই সিট ছাড়ে সে। চলে আসে ওই প্যাসেঞ্জার ট্রেনের দরজায়। যে দরজায় সে থাকে, তার উল্টোদিকে প্ল্যাটফর্ম পড়লে ঠিক সেখানেই নামে ওই হনুমান। আবার ওই ট্রেনে ফিরে আসে। এটাই যেন ওই হনুমানের রুটিন হয়ে গিয়েছে। তার এই ট্রেনে ডেলি প্যাসেঞ্জারির এই ভিডিও এখন রীতিমতো ভাইরাল। ঝাড়খণ্ডের তরুণ কবি শিবরাম কুমার নিজের মোবাইলে ভিডিওটি তুলে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করতেই ভাইরাল হয়ে যায়।

কিন্তু পবনপুত্রের এই আচরণ কি সত্যিই বিস্ময়কর? নাকি কোন বৈজ্ঞানিক বা জৈবিক ব্যাখ্যা রয়েছে? এই বিষয়ে কথা হচ্ছিল পুরুলিয়া বনবিভাগের ডিএফও অঞ্জন গুহর সঙ্গে। তাঁর কথায়, “এই ঘটনা শুধুই বিস্ময়কর নয়। এর পিছনে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও রয়েছে। বেশ কয়েকটি কারণে হনুমান এই আচরণ করতে পারে।” এক এক করে সেই কথাই বলছিলেন তিনি। প্রথমত, হনুমান, বাঁদরের মতো বন্যপ্রাণে ‘মেমরি ইনপ্রিন্টিং’ অর্থাৎ মনে রাখার বিষয়টি জোরালো হয়। সেই কারণেই হয়তো একই ট্রেনে যাওয়া আসা করে। প্রায় একই সময়ে। এমনকি হয়তো নির্দিষ্ট আসনেও বসে।

রোজ ট্রেনের একই সিটে যাতায়াত করে হনুমানটি। ছবি: প্রতিবেদক।

দ্বিতীয়ত, মানুষ যেমন খাওয়া, বাসস্থান বা অন্য কিছুর জন্য ঘুরে বেড়ায়। তেমনই বন্যপ্রাণের মধ্যেও এরকম একটি প্রবণতা রয়েছে ব্যাপকভাবেই। ওই হনুমান নির্দিষ্ট কোনও জায়গাতে গিয়ে কোনও খাবার পায় বা সেখানকার জল হয়তো তার খুব পছন্দের। অথবা কোনও পরিচিতজনের সঙ্গে তার দেখা হয়। এমন কিছু বিষয় রয়েছে, যেখানে তার আকর্ষণের কেন্দ্র। তৃতীয়ত, হনুমান, বাঁদরের মস্তিষ্ক অনেকটাই মানুষের মত। তারা বড্ড মানুষ ঘেঁষা হয়। সেই সঙ্গে যাতায়াতে তারা নিরাপদ মনে করে। চতুর্থত,এই ধরনের বন্যপ্রাণ ভীষণ অনুকরণপ্রিয় হয়। মানুষজনের নকল করে। মানুষজন যেমন ট্রেনে উঠছে। সিটে বসছেন। তা দেখে হনুমানটিও ট্রেনে ওঠে এবং মানুষের মতোই বসে পড়ে।

এছাড়া কোন বায়োলজিক্যাল নিড বা জৈবিক চাহিদা থেকেও প্রতিদিন ৫০ কিলোমিটারের বেশি রাস্তা ট্রেনে যাতায়াত করে সে। তরুণ কবি বলছিলেন, “এমন ঘটনা আমি কোনদিন শুনিনি, দেখিওনি। আমি সম্প্রতি খড়গপুর-হাটিয়া ট্রেনে রাঁচি যাচ্ছিলাম। হনুমানের এমন আচরণ দেখে আমি ভিডিও করি। ট্রেনে ওঠা, সিটে বসা শুধু নয়। ওই যাত্রাপথে মাঝখানে দুটি স্টেশনে ট্রেনটি স্টপেজ দিলেও সেখানে নামে না। রাঁচি ঢোকার আগে বসার আসন থেকে সোজা দরজায় গিয়ে বিপরীত দিকে প্লাটফর্ম পড়লে সেখানেই নামে।” এই হনুমান ফি দিন সিল্লি থেকে ওই ট্রেনের সময় অনুযায়ী সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে ট্রেনে চড়ার জন্য যেন প্রস্তুত থাকে। বেলা বারোটা নাগাদ ওই ট্রেন পৌঁছয় রাঁচি। আবার যখন বিকাল বেলায় সাড়ে তিনটে নাগাদ ওই ট্রেন ছাড়ে তখন আবার রাঁচি স্টেশনে ওই হনুমান ট্রেনে চড়ে বসে। সাড়ে চারটের পর আবার সিল্লিতে নেমে যায়।

রাঁচি ঢোকার সময় সুবর্ণরেখা নদী পেরলে তবেই সিট ছেড়ে দরজা আসে সে। ছবি:প্রতিবেদক।

একই কথা বলছেন ওই দুই স্টেশনে হকাররাও। হনুমানের এমন যাত্রীসুলভ আচরণে নানান মন্তব্য করছেন। কেউ বলছেন, “এমন সহযাত্রী পেলে রোজ ট্রেনে চড়তে মন্দ লাগত না।” আবার কারও কথায়, “মানুষ ও বন্যপ্রাণের সহাবস্থান আজও সম্ভব। যদি আমরা একে অপরকে স্থান দিই।” আর এর বড় উদাহরণ এই হনুমানই!



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *