দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফিরে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রমাণ করে দিয়েছেন– তিনি যেভাবে চালাবেন, আপাতত মার্কিন বিদেশনীতি সেভাবে চলবে। ভারতের উপর দু’-দফায় মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপানো তারই প্রতিফলন। লিখছেন দীপঙ্কর দাশগুপ্ত।
দ্বিতীয় দফায় মার্কিন প্রেসিডেন্টের পদে বসার পর থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অন্যতম মুখ্য উদ্দেশ্য বোধহয় একটাই– যে কোনও অছিলায় ক্রমাগত ভারতের পিছনে লাগা, ব্যঙ্গ করা, হুমকি দেওয়া, ভারতকে অপমান করা এবং ভারতের জাতীয় স্বার্থ ধ্বংস করে আমেরিকার কায়েমি স্বার্থ পূরণের বেপরোয়া চেষ্টা চালানো। এবারের নির্বাচনী ইস্তাহারে ট্রাম্পের স্লোগান ছিল, ‘মেক আমেরিকা গ্রেট আগেন’ (‘মাগা’)। তিনি হয়তো বিরাট দেশপ্রেমী, নিজের দেশকে আবার ‘মহান’ করার উদ্যোগ তিনি নিতেই পারেন। কিন্তু নিজের দেশকে ‘মহান’ করতে গিয়ে যাবতীয় কূটনৈতিক শিষ্টতা ও স্বাভাবিক সৌজন্য বিসর্জন দিয়ে বিশ্বের প্রাচীনতম গণতান্ত্রিক দেশের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজস্ব মর্জিমাফিক বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশের সঙ্গে যে অযৌক্তিক আচরণ করছেন, তা কি আদৌ গ্রহণযোগ্য? রাশিয়া থেকে তেল কেনার দায়ে ভারতীয় পণ্যের উপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ মাশুল চাপিয়েছেন ট্রাম্প। ফলে ২৭ আগস্ট থেকে যাবতীয় আমদানির উপর কার্যকর হওয়া মোট শুল্কের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশ।
বিশ্বে এই হার সর্বোচ্চ।
‘মুক্ত বাণিজ্য’-র প্রধান প্রবক্তা আমেরিকা নিজেই হালে সম্পূর্ণ উল্টো পথে হাঁটছে। ট্রাম্পের অনুগতরা আর-এক কাঠি উপরে উঠে আমদানি শুল্কের উপর আরোপিত এই ‘জরিমানা’-কে ভারতের বিরুদ্ধে জারি করা ‘স্যাংশন’ বা ‘নিষেধাজ্ঞা’ বলে দাগিয়ে দিয়েছেন। অথচ, এই আমেরিকাই এক সময় বলেছে, বিশ্ব বাজারে তেলের দাম স্থিতিশীল রাখতে সবরকমভাবে চেষ্টা চালাতে হবে, দরকার হলে রাশিয়া থেকেও তেল কিনতে হবে। সেসব বেমালুম ভুলে গিয়ে মার্কিন ট্রেজারি সচিব স্কট বেসেন্টের অভিযোগ, সস্তা দরে রাশিয়ার তেল কিনে ভারত মুনাফা করছে।
ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো বলছেন, ভারত তো ক্রেমলিনের ‘ধোবিখানা’-র ভূমিকা পালন করছে। আধুনিক ‘লন্ড্রোম্যাটে’ টাকা ফেললে যেমন ময়লা কাপড় কাচা হয়, ঠিক তেমনই ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের দায়ে রাশিয়ার বাণিজ্যে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও মূল্যের বিনিময়ে ভারতকে তেল বেচে রাশিয়া পাপস্খালনের ফিকির খুঁজছে। কাজেই আমেরিকার ‘কৌশলগত অংশীদার’ হিসাবে স্বীকৃতি বজায় রাখতে হলে ভারতকে রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করতেই হবে। আর, ভাইস প্রেসিডেন্ট জে. ডি. ভান্স অবলীলায় বলে দিলেন, রাশিয়ার সঙ্গে আমেরিকার লড়াইয়ের ‘কোল্যাটারাল ড্যামেজ’ হল ভারত। এই শুল্ক বৃদ্ধি বা জরিমানা তারই প্রতিফলন। বাহ!
ভান্সের হিন্দু স্ত্রী উষা বালা চিলুকুরি তো আমেরিকার প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত ‘সেকেন্ড লেডি’। কিছু দিন আগে ভান্স সস্ত্রীক এসে ভারত সফর করে গেলেন। উষা আদতে অন্ধ্রের মেয়ে বলে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট দম্পতির কী খাতির! অন্ধ্রের গ্রামে কী উল্লাস!
মার্কিন প্রশাসনে ভারতীয় কোনও সংযোগ খুঁজে পেলেই ভারত আহ্লাদে আটখানা
হয়ে যায়। মার্কিন গোয়েন্দাপ্রধান তুলসী গ্যাবার্ডকে নিয়েও আদিখ্যেতা কম হয়নি।
কারণ, তিনি ‘শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা’ ছুঁয়ে শপথবাক্য পাঠ করেছিলেন। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনে
এমন সব কেষ্টবিষ্টু থাকতেও ভারতের আখেরে কোন লাভটা হল? ভারতের উপর ট্রাম্পের অন্যায্য শুল্ক চাপানোর কুযুক্তি খণ্ডনে পর্দার আড়ালে এঁরা কি কোনও ভূমিকা পালন করতে পারতেন না? অন্যদিকে, এ যেন সেই খনার বচনের দৃষ্টান্ত– নিজের বেলায় অঁাটিশুঁটি,
পরের বেলায় চিমটি কাটি।
আলাস্কায় ট্রাম্পের সঙ্গে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের বৈঠকের পরেই কিন্তু রাশিয়ার সাখালিন দ্বীপে তেল ও গ্যাস প্রকল্পে আবার মার্কিন ‘এক্সন’ মোবিল কোম্পানির অংশীদারিত্বে সবুজ সংকেত মিলেছে। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বছর তিনেক আগে এক্সন বিরাট লোকসানের বহর মাথায় নিয়ে ওই প্রকল্প থেকে সরে এসেছিল। ইউরোপে রাশিয়ার তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ অক্ষুণ্ণ রাখতেও ট্রাম্পের যখন মাথাব্যথার অন্ত নেই– এবং চিন যখন রাশিয়ার তেলের সর্বোচ্চ ক্রেতা– তখন তাদের ছেড়ে ভারতকেই শায়েস্তা করতে ট্রাম্প এত উদ্গ্রীব কেন? ভারতের ঘাড়ে বিরাট শুল্কের বোঝা চাপাতে গিয়ে ট্রাম্প উল্টে টিটকিরি দিয়েছেন, ভারত হল ‘ট্যারিফ কিং’– শুল্ক সম্রাট। এমন মন্তব্য একটা সুসভ্য দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের মুখে শোভা পায়!
ভারতের সঙ্গে অহেতুক এই শত্রুতার মধ্যেও ভারতকে আমেরিকা থেকে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস কেনার জন্য ওয়াশিংটনের নির্লজ্জ উমেদারি ও চাপ সৃষ্টির কমতি নেই। ভারতকে পদে পদে অপদস্থ করার মার্কিন তালিকাটি অতি দীর্ঘ। ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার পর আমেরিকায় অবৈধভাবে থেকে যাওয়া ভারতীয়দের যে অসংবেদনশীলতার সঙ্গে হাত-পা বেঁধে সামরিক বিমানে ফেরত পাঠানো হয়েছে, একটি ‘মিত্র’ রাষ্ট্রের কাছ থেকে সেই আচরণ অপ্রত্যাশিত। মে মাসের গোড়ায় ভারতের রফতানি করা অালফানসো আমের বিরাট চালান সম্পূর্ণ ছেঁদো যুক্তিতে আটকে দেওয়া হল সান ফ্রান্সিসকো, লস অ্যাঞ্জেলেস ও আটলান্টায়। সরেস আম, তাতে কোনও কীট বাসা বঁাধেনি, আমেরিকার বাজারে ঢোকার পথে বাধাই ছিল না। শুধু গন্ডগোল যে ‘পিপিকিউ২০৩’ ফর্মটি ঠিকমতো পূরণ করা হয়নি। আর সেই নথি দাখিলের দায়িত্ব ছিল নভি মুম্বইয়ে কর্তব্যরত মার্কিন বাণিজ্য দফতরের আধিকারিকের।
কিন্তু কে শোনে কার কথা! মুহূর্তে ভারতের পাঠানো আম বাতিল হয়ে গেল। তাতে ভারতীয় ব্যবসার ক্ষতির পরিমাণ অন্তত ৫ লক্ষ ডলার। এই যদি ওয়াশিংটনের আপেল কিংবা ক্যালিফোর্নিয়ার প্রুন্স বা আলুবোখরা ভারতীয় বন্দরে আটকে যেত, তাহলে তো দিল্লির গলা টিপে ধরে মার্কিন দূতাবাস ছাড়পত্র আদায় করত। এই ধরনের দ্বিচারিতা আমেরিকার মজ্জাগত। নিজের স্বার্থটি ছাড়া আমেরিকা কিচ্ছুটি বোঝে না।
তবু ২০০০ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সফরের সময় থেকে ভারত-মার্কিন সম্পর্কে যথেষ্ট উন্নতি ঘটতে শুরু করে। আমেরিকায় সন্ত্রাসবাদী হানায় টুইন টাওয়ার ধ্বংসের পর সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ভারতকে অংশীদার হিসাবে পাশে পায় আমেরিকা। পাকিস্তান যে সন্ত্রাসবাদীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল সে তো প্রমাণ হয়েই যায় অ্যাবোটাবাদের গোপন ঘঁাটিতে মার্কিন হানায় ওসামা বিন লাদেনকে খতমের ঘটনায়। ভারতীয় কূটনীতির তৎপরতায় কাশ্মীর-সহ ভারতের মাটিতে পাক-মদতপুষ্ট সন্ত্রাসের বর্বরতার কাহিনি সাক্ষ্যপ্রমাণ-সহ বারবার তুলে ধরা হয় ওয়াশিংটনের কাছে। কাজেই দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক প্রসঙ্গে ভারত ও পাকিস্তানকে একই বন্ধনীভুক্ত করার বিরুদ্ধে সফলভাবে দৌত্য করে দিল্লি। তার পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তান প্রসঙ্গ এড়িয়ে মহাকাশ থেকে ন্যানো টেকনোলজি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, গ্রিন এনার্জি, বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা-সহ নানা ক্ষেত্রে ভারত-মার্কিন সহযোগিতা গড়ে ওঠে। চিনের প্রভাব খর্ব করতে ‘কোয়াড্রিল্যাটেরাল সিকিউরিটি ডায়ালগ’ (কোয়াড) মঞ্চে অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও আমেরিকার সঙ্গে কূটনৈতিক সহযোগী হিসাবে শামিল হয় ভারত। যার লক্ষ্য: ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অবাধ ও মুক্ত পরিবেশ বজায় রেখে সার্বভৌমত্ব ও সীমান্তের মর্যাদা নিশ্চিত করা। আমেরিকার চোখে ভারতের গুরুত্ব বাড়ার আর-একটি দৃষ্টান্ত ‘ইউএস প্যাসিফিক কমান্ড’-এর নাম বদলে ‘ইউএস ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ড’ (ইউএস ইন্দো-প্যাকম) রাখা। বিশ্ব অর্থনীতি ও সামরিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সেটি ভারত মহাসাগর এলাকায় ভারতের গুরুত্ব বৃদ্ধির প্রতিফলন। বিগত ২৫ বছরে অসামরিক পারমাণবিক চুক্তি (ইন্দো-ইউএস সিভিল নিউক্লিয়ার ডিল)-সহ ভারত-আমেরিকার মধ্যে বহুমাত্রিক সহযোগিতার বহর ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে।
আশ্চর্যের বিষয়, দু’-দশকেরও বেশি সময় ধরে ভারত ও আমেরিকার রাষ্ট্রপ্রধান ও কূটনীতিকদের উপলব্ধি, অভিজ্ঞতা ও অধ্যবসায়ে তিল-তিল করে গড়ে তোলা পারস্পরিক মিত্রতা ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে একলহমায় ভেঙে চুরমার করে দিলেন ট্রাম্প দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসেই মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে। বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে তিনি ধরাকে সরা জ্ঞান করলেন। দেশের ভোটারদের তুষ্ট করতে আত্মম্ভরিতার পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে ট্রাম্প ভাবলেন, তঁার হুকুম আর হুমকিই বুঝি শেষকথা। প্রথমেই চটাতে শুরু করলেন ভারতকে। আলটপকা বলে দিলেন, ‘ভারতের মৃত অর্থনীতি’। মে মাসে পহেলগঁাওতে সন্ত্রাসবাদী হামলার প্রেক্ষিতে ভারত-পাক সংঘর্ষ নাকি তিনিই মধ্যস্থতা করে থামিয়েছেন বলে বারবার বিবৃতি দিলেন ট্রাম্প। পাকিস্তানের সেনাপ্রধান অাসীম মুনিরকে হোয়াইট হাউজে নিমন্ত্রণ করে খাওয়ালেন। পাকিস্তানে খনিজ তেল উত্তোলনে সহযোগিতার কথা ঘোষণা করে আবার ব্যঙ্গ করলেন, একদিন হয়তো ভারতকে তেল কিনতে হবে পাকিস্তানের থেকেই।
আর, এবারে তো ভারতে যে রাষ্ট্রদূতের নাম ঘোষণা করলেন সে-ও আর-এক কেচ্ছা। জানা গেল, দিল্লিতে রাষ্ট্রদূত হয়ে আসছেন ৩৮ বছরের এক মার্কিন ছোকরা সার্গিও গোর ওরফে সার্গিও গরখোভস্কি। যঁার জন্ম পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়নের তাসখন্দে। যোগ্যতা বলতে তিনি ট্রাম্পের পয়লা নম্বর চামচা। মার্কিন বিদেশ দফরের কোনও ‘কেরিয়ার ডিপ্লোম্যাট’ নন, ‘পলিটিকাল অ্যাপয়েন্টি’ অর্থাৎ একে রাজনৈতিক নিয়োগ বলতেও ব্যাকরণে বাধে। এত যুগ ধরে ভারতের গুরুত্ব বিবেচনা করে রিপাবলিকান বা ডেমোক্র্যাট নির্বিশেষে মার্কিন প্রেসিডেন্টরা ভারতে ‘হেভিওয়েট’ রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করে এসেছেন– যঁারা অভিজ্ঞতায়, পেশাদারিত্বে, পাণ্ডিত্যে উঁচুদরের এবং অবশ্যই প্রেসিডেন্টের আস্থাভাজন। জন কেনেথ গলব্রেথ, ড্যানিয়েল ময়নিহান থেকে শুরু করে টমাস পিকারিং, ফ্র্যাঙ্ক উইজনার, টিমোথি রোমার, রিচার্ড ভার্মা কিংবা কেনেথ জাস্টার– এঁদের দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের পাশাপাশি গোর তো কোনও তুলনাতেই আসেন না। সদ্য প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গার্সেটিও ছিলেন মেধাবী রোড্স স্কলার।
আরও অভূতপূর্ব ব্যাপার, ভারতে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের পদের সঙ্গে গোরের অতিরিক্ত দায়িত্ব– দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক দূতিয়ালি। পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, ভুটান, কাজাখস্তান, কিরঘিজস্তান, মালদ্বীপ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও উজবেকিস্তান– একসঙ্গে এতগুলি দেশের উপরও নজরদারি চালাবেন তিনি। অর্থাৎ, দিল্লি এত দিনের চেষ্টায় যা এড়ানোর চেষ্টা করেছে, সেই ভারত-পাকিস্তানকে আবার একই বন্ধনীভুক্ত করার পাকাপোক্ত ফন্দি বের করেছেন ট্রাম্প।
ওবামা-জমানায় আফগানিস্তান-পাকিস্তানের ‘বিশেষ দূত’ হিসাবে রিচার্ড হলব্রুককে নিয়োগ করে ভারত ও পাকিস্তানকে ঠিক এভাবেই একই বন্ধনীতে রাখার চেষ্টা হয়েছিল। দিল্লির প্রবল কূটনৈতিক তদ্বিরে আমেরিকার সেই চেষ্টা তখন সফল হয়নি। ভারত বা সংশ্লিষ্ট অঞ্চল সম্পর্কে বিন্দুমাত্র অভিজ্ঞতা বা জ্ঞান ছাড়াই গোরকে এমন এক গুরুদায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে যখন ভারত-মার্কিন সম্পর্ক পুরোপুরি তলানিতে। ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ পোস্টে গোরের নিয়োগ প্রসঙ্গে ট্রাম্প যে-মন্তব্য করেছেন সেটিও বিশেষ অর্থবহ। গোরকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেছেন, “বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল অঞ্চলে আমি এমন একজনকে দায়িত্ব দিয়ে পাঠাচ্ছি যঁাকে ‘মেক আমেরিকা গ্রেট আগেন’ সংক্রান্ত আমার ‘অ্যাজেন্ডা’ পূরণে আমি পুরোপুরি ভরসা করতে পারি।” অর্থাৎ, এখানে দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থ ও অগ্রগতি সুরক্ষিত করা নয়, বরং শুধুই আমেরিকার স্বার্থ পূরণই একমাত্র উদ্দেশ্য। সুতরাং আগামী দিনগুলিতে আমেরিকার প্রতি বিশ্বাস ফেরানোর কোনও জায়গা নেই।
আমেরিকার সঙ্গে বন্ধুত্ব যে ‘বড়র পিরীতি বালির বাঁধ’– সেই কথাটি বুঝেই ভারতকে এগতে হবে। বুঝতে হবে, ট্রাম্পের পুত্র গত জানুয়ারিতে পাকিস্তানে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের বিরাট আতিথেয়তা পেয়েছেন, আর সেখান থেকে ফিরে ট্রাম্পের কাছে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বলেছেন, আশ্চর্য দেশ পাকিস্তানে ‘রেয়ার আর্থ’ খনিজ পদার্থ এবং
তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবসায় হাজার-হাজার কোটি ডলার ব্যবসার সম্ভাবনা। তাছাড়া, ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবসা থেকে ফায়দা লোটার ব্যাপার তো আছেই। সুতরাং ট্রাম্প এখন পাকিস্তানকে কোলে তুলবেনই। অন্যদিকে, মার্কিন কৃষি ও দুগ্ধজাত পণ্যের জন্য দেশের বাজার খুলে দিতে অস্বীকার করায় ভারত এখন ট্রাম্পের কাছে দুশমন। নতুন মার্কিন রাষ্ট্রদূত গর দিল্লিতে এলে আমেরিকার স্বার্থ কীভাবে মেটানো যায় সেটিই হবে তাঁর প্রধান লক্ষ্য। আমেরিকার চাপ আর ট্রাম্পের পাগলামি ঠেকাতে এই মুহূর্তে প্রয়োজন ভারতের নিজস্ব শক্তি বাড়ানো ও পরিকাঠামোর স্থায়ী উন্নতি ঘটানো। আর অবশ্যই ২০২৮ সালের দিকে চেয়ে থাকা– যখন ক্ষমতার মঞ্চ থেকে বিদায় নেবেন ট্রাম্প। তবে তার আগেই হয়তো ট্রাম্পের ভ্রান্ত নীতির কুফল বুঝে গর্জে উঠবে আমেরিকা এবং পরবর্তী জমানায় আবার ফিরে আসবে স্বাভাবিকতা।
(মতামত নিজস্ব)
লেখক প্রাবন্ধিক
dipankar.dg62@gmail.com