দেবশংকর বণিক চৌধুরী, লন্ডন: কলকাতা থেকে বহু দূরে। পুজো পুজো গন্ধ সেভাবে টের পাই না। তবে বিদেশে পুজো মানে অন্যরকম অভিজ্ঞতা। প্রথমেই বলি পুজোর নাম প্রয়াস আদিশক্তি হান্সলো প্রবাসী আরবিবিএ আড্ডা হ্যাম্পস্টেড পার্ক। ঠিক এই নামগুলো আমার কাছে অচেনা ছিল গত বছর। কারণ, পুজোর মাত্র কয়েকদিন আগেই বিদেশে আসা। হঠাৎ বন্ধুর মারফত জানতে পারি বাঙালি অ্যাসোসিয়েশন আই বুকের নাম। প্রতি বছর তারা পুজো পরিক্রমা করে। জানামাত্রই আই বুককে প্রস্তাব দিই পুজো পরিক্রমায় অংশ নেওয়ার জন্য। তবে ততক্ষণে সিট সব বুকড। আমি কাকুতি মিনতি করি। সব শুনে একটি টিকিট ব্যবস্থা হয়। সপ্তমীতে সারাদিন ঘুরি। বাসে ওঠামাত্রই জল আর চকোলেট দেওয়া হয়। আমার খুব অবাক লাগল। দেখি সকলে সপ্তমীতে অষ্টমী, নবমীর অঞ্জলি দিচ্ছেন।
যেহেতু সপ্তাহান্তে পুজো তাই অদ্ভুত নিয়ম। দেখলাম ক্রিকেট গ্রাউন্ডে তাঁবুতে পুজো হচ্ছে। কোথাও লোকজন আড্ডা দিচ্ছেন। কোথাও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছে। সঙ্গে রয়েছে দেদার খাওয়াদাওয়া। ধোসা থেকে গুজরাটি, বাঙালি থালি কী নেই? আমরা এখান থেকে গেলাম প্রবাসী আদিশক্তিতে। তাদের থিম দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। অভয়ার বিচার চেয়ে থিম ছিল। এখানে ইউএসপি ফিশ ফ্রাই। কলকাতার পুজোর কথা মনে পড়ে গেল। আপনজনের ফিশফ্রাই। ঠিক যেন কলকাতার ম্যাডক্স স্ক্যোয়ার। বলে রাখা ভালো, আমি বিজয়গড়ের ছেলে। বিজয়গড় ভারতচক্রের পুজো দেখে কেটেছে ছোটবেলা। তাই কলকাতার কথা মনে পড়ে সবসময়।
হ্যাম্পস্টেড পার্কের পুজোয় দুবেলা অঞ্জলি, আরতির পর ভোগ বিতরণ হয়। কুমারী পুজো হয়। কুমারী পুজো নিয়ে এখানে অনেক কৌতূহল রয়েছে। এখানে টেমসে নৌকোয় ঘোরানো হয় প্রতিমাকে। তারপর স্টোরেজ বক্সে রেখে দেওয়া হয়। ভাড়া করে রেখে দেওয়া হয় প্রতিমা। কারণ, প্রতিবছর প্রতিমা কেনা সম্ভব নয়। ক্যামডেনের পুজোয় যাওয়া হয়নি আমার। এখানেও বিজয়া সম্মিলনী হয়। বাঙালি পোশাক, বাঙালি খাওয়া দাওয়ায় মেতে ওঠেন সকলে। কলকাতার পুজো, খাওয়াদাওয়া, আড্ডাকে খুব মিস করি। তবে বিদেশে একেবারে নতুন অভিজ্ঞতা। জীবন তো আর থেমে থাকে না…।