জঙ্গলমহলে বাড়ছে হাতি-মানুষ সংঘাত, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বৈঠকে বনদপ্তর

জঙ্গলমহলে বাড়ছে হাতি-মানুষ সংঘাত, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বৈঠকে বনদপ্তর

জীবনযাপন/LIFE STYLE
Spread the love


সুনীপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: জঙ্গলমহলে হাতি থাকবে। আর এই পরিস্থিতিতে হাতি-মানুষের সংঘাত এবং ক্ষয়ক্ষতি ঠেকাতে বনদপ্তর মূলত দু’টি রাস্তায় হাঁটবে। কম সময়ের (শর্ট টার্ম) এবং স্থায়ী (লং টার্ম) সমাধানের লক্ষ্যে এগোচ্ছে বনদপ্তর। আর এর জন্য কয়েক কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে ঝাড়গ্রাম বনদপ্তর। বুধবার রাজ্য বনদপ্তরের শীর্ষ আধিকারিকরা ঝাড়গ্রামের কেন্দ্রীয় নার্সারিতে ঝাড়গ্রাম-সহ মোট চারটি বনবিভাগের আধিকারিকদের নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন। জানা গিয়েছে, এই বৈঠকে হাতি সমস্যা নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। গত এক মাস ধরে প্রায় প্রতিদিন হাতির আক্রমণে যেমন প্রচুর ঘর ভেঙেছে তেমনই মানুষের আহত হওয়ার ঘটনা সামনে এসেছে। আর তারপরেই এদিন একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন রাজ্য বনদপ্তরের আধিকারিকেরা।

এদিন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল,মুখ্য ওয়ার্ডেন (বন্যপ্রাণ) সন্দীপ সুন্দ্রীওয়াল,অতিরিক্ত প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ দক্ষিণবঙ্গ) নীলাঞ্জন মল্লিক, ঝাড়গ্রামের ডিএফও উমর ইমাম, খড়্গপুরের ডিএফও মনীষ যাদব, রূপনারায়নের ডিএফও শিবানন্দ রাম, এডিএফও মেদিনীপুর কানু চক্রবর্তী-সহ প্রমুখ। বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, অবিলম্বে সমস্যা সমাধানের লক্ষে (শর্ট টার্ম) ঝাড়গ্রাম, মানিকপাড়া এবং গিধনি রেঞ্জের জঙ্গল লাগোয়া গ্রাম এবং জঙ্গল গুলিকে পাওয়ার পাল্স ফেনসিং (সৌর বিদ্যুৎ চালিত) দেওয়া হবে। ঝাড়গ্রাম এবং মানিকপাড়া রেঞ্জের অধীন কুসুমঘাঁটি,কুসুমডাঙা, ঘটিডুবা,জারালাটা,জোয়াল ভাঙা সহ মোট দশ টি জঙ্গল লাগোয়া গ্রামকে চিহ্নিত করে পাওয়ার পাল্স ফেনসিং দেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, প্রতিটি গ্রামকে একেবারে আলাদাভাবে পাওয়ার ফেনসিং দিয়ে ঘেরা হবে। মোট দশ কিমি এলাকার জুড়ে আলাদাভাবে গ্রামগুলিকে ঘেরা হবে। এর জন্য বনদপ্তর আদিবাসী উন্নয়ন দপ্তরের কাছে প্রায় ৭০ লক্ষ টাকার প্রস্তাব দিয়েছে। কয়েক বছর আগে ঝাড়গ্রাম শহরকে হাতির হাত থেকে সুরক্ষিত রাখতে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে পাওয়ার ফেনসিং দিয়েছিল ঝাড়গ্রাম বনদপ্তর। কিন্তু সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বহু জায়গায়তে তা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আর তাই এবার বনদপ্তর ফেনসিং দেওয়ার পাশাপাশি রক্ষণাবেক্ষণের উপর জোর দিচ্ছে। অন্যদিকে, জামবনি ব্লকের গিধনি বনাঞ্চলের ঝাড়খন্ড রাজ্য লাগোয়া এলাকার ৪০ কিমি জঙ্গল এলাকায় প্রায় ষাট লক্ষ টাকা ব্যয়ে পাওয়ার প্লাস ফেনসিং দেবে। এর আগে দলমা হাতির দলকে আটকাতে বেলপাহাড়ির ঝাড়খণ্ড রাজ্য এলাকায় প্রায় পঁয়তাল্লিশ কিমি ট্রেঞ্চ কাটা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে তা মজে গিয়েছে। এবার বনদপ্তর ট্রেঞ্চ কাটার রাস্তায় হাঁটবে না। কারণ হিসেবে বনআধিকারিকেরা জানিয়েছেন, ট্রেঞ্চ বর্ষার সময় জমির ভূমি ক্ষয় করে। যা জমির জন্য ক্ষতিকারক। তাই দ্রুত সমস্যা সমাধানে পাওয়ার ফেনসিং এর ব্যবস্থা। এর সাথে হাতির নিকটে গিয়ে ছবি তোলা, ভিডিও করা, রিলিস বাননো মতো কাজ যাতে লোকজন না করে সেই জন্য টানা সচেতনতামূলক প্রচার চালানো এবং তাতেও মানুষ সচেতন না হলে কড়া আইনি পদক্ষেপ করবে দপ্তর।

লং টার্ম বা স্থায়ী সমাধান করতে হাতির সারা বছরের খাদ্যের সংস্থান এবং বেশ কয়েক মাস ধরে হাতির দলকে নির্দিষ্ট জায়গায় আটকে রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, সারাবছর জঙ্গলগুলি পর্যাপ্ত খাদ্যের যোগান যাতে থাকে সেই জন্য একলক্ষ চারা গাছ লাগানোর লক্ষ মাত্রা নেওয়া হয়েছে। বনদপ্তরের চারটি নার্সারিতে সেই সব গাছ তৈরি হয়েছে। বেল,কাঁঠাল,আম, গলগলি, ডুমুর,বাঁশ-সহ হাতির পছন্দের গাছ লাগানো হবে। এর সাথে জামবনি ব্লকের গিধনি বনাঞ্চলের সাড়ে চার হাজার হেক্টর জায়গা জুড়ে হাতির দলকে তিন থেকে চার মাস আটকে রাখার জন্য কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। এই জায়গা জুড়ে হাতির খাবারের জন্য প্রচুর গাছ এবং ১৬ টি পুকুর খনন করা হবে। ইতিমধ্যে পাঁচটি পুকুর খনন করার কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। বাকি এগারোটি পুকুর খনন হবে। এর মধ্যে একটি বেশ অনেকটা আকারের জলাশয় হবে। আর এর জন্য ঝাড়গ্রাম বনদপ্তর দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে। কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। আর এই ভাবে হাতি মানুষের অবস্থান বজায় রেখে বনদফতর জোর করে হাতির দলকে পরশি রাজ্যে ফেরাবে না। বরং তাদের থাকার উপযোগী পরিবেশ গড়ে তোলার উপর জোর দিচ্ছে। রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল, মুখ্য ওয়ার্ডেন (বন্যপ্রান) সন্দীপ সুন্দ্রীওয়াল বলেন “হাতি হল আমাদের জাতীয় হেরিটেজ এনিম্যাল।হাতি থাকবে। জোর করে ড্রাইভ করানো ঠিক নয়। এখানকার মানুষ জন হাতিকে ভালোবাসে তাদের অত্যাচার করে না। কিন্তু যাতে হাতি এবং মানুষের সহবস্থান ঠিক থাকে এবং ক্ষতি যাতে কম হয় সেজন্য বনদপ্তর শর্ট এবং লং টার্ম ব্যবস্থা নিচ্ছে। পাওয়ার পাল্স ফেনসিং থেকে শুরু করে হাতির সারা বছরের খাদ্যের সংস্থান করতে জঙ্গলগুলিকে সেই অনুযায়ী গাছ লাগিয়ে সমৃদ্ধ করা হচ্ছে।”



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *