স্টাফ রিপোর্টার: গত কয়েক দিন ধরে সোশাল মিডিয়ায় একটা পরিসংখ্যান ঘোরাফেরা করছে। অভিমন্যু ঈশ্বরণ ভারতীয় স্কোয়াডে সুযোগ পাওয়ার পর থেকে অন্তত জনা পনেরো ক্রিকেটারের টেস্ট অভিষেক হয়েছে। অথচ অভিমন্যুর ভাগ্যে জুটেছে শুধুই উপেক্ষা। বছরের পর বছর তাঁকে টিমের সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয়। সুযোগ দেওয়া হয় না। অনেক বছর পর টেস্ট টিমে প্রত্যাবর্তন ঘটেছে করুণ নায়ারের। টেস্ট অভিষেক হয়েছে সাই সুদর্শনের। অভিমন্যুকে উপেক্ষিত থাকতে হয়েছে। অথচ তার আগে ভারতীয় ‘এ’ দলের অধিনায়ক করা হয়েছিল বঙ্গ ওপেনারকে। ভারতীয় এ টিমের হয়ে রানও করেছিলেন। তারপরও টেস্ট টিমে জায়গা হয়নি তাঁর।
গত বছর অস্ট্রেলিয়া সফরেও তাই হয়েছিল। শোনা যায়, ওই সফরে ঠিকমতো ব্যাটিংও দেওয়া হত না অভিমন্যুকে। সব ক্রিকেটারের নেট হয়ে যাওয়ার পর আলাদা করে ব্যাটিং করতে যেতেন তিনি। বেশিরভাগ বোলাররা থাকতেন না। জনা কয়েক নেট বোলার আর থ্রোয়ারকে সঙ্গে নিয়ে শুধু ট্রেনিং করতেন অভিমন্যু। যা নিয়ে অনেকেই বলতে শুরু করে দিয়েছেন, তাহলে কি বাংলার ক্রিকেটার বলেই এই বঞ্চনা? রনজি ট্রফিতে প্রচুর রান করেছেন। ভারতীয় ‘এ’ দলের হয়ে রান করেছেন। তারপরও বারবার ব্রাত্য থাকতে হয়েছে তাঁকে। বাংলার কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্লা বলছিলেন, “অবশ্যই সুযোগ পাওয়া উচিত ছিল অভিমন্যুর। এ টিমের অধিনায়ক ছিল। ভালো পারফর্ম করেছে। তাহলে কেন ওকে সুযোগ দেওয়া হবে না? অনেকেই একটা কথা বলেন। অভিমন্যু নাকি সেমিফাইনাল-ফাইনালে রান করে না। তাঁদের উদ্দেশ্য বলব, এরকম অনেক ক্রিকেটার রয়েছে, যাঁরা সেমিফাইনাল-ফাইনাল এমনকী আরও অনেক ম্যাচেও রান করে ভারতীয় দলের হয়ে খেলেছে। তাহলে অভিমন্যু রান করার পরও কেন সুযোগ পাবে না?”
বাংলার প্রাক্তন ক্রিকেটার তথা রনজি জয়ী অধিনায়ক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় (যিনি আবার একটা সময় জাতীয় নির্বাচকও ছিলেন) অভিমন্যুর টিমে না থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন। সম্বরণের কথায়, “স্কোয়াড বাছাইয়ের পর নির্বাচকদের আর তেমন কোনও ভূমিকা থাকে না। প্রখম একাদশ কী হবে, সেটা পুরোটাই নির্ভর করে কোচ-অধিনায়কের উপর। মানছি ইংল্যান্ডের কন্ডিশনে ওপেনিংয়ে যশস্বী জয়সওয়াল আর লোকেশ রাহুল খুব ভালো খেলেছে। তবে তিন নম্বরে তো অভিমন্যুকে খেলানোই যেত। ওপেন আর তিন নম্বরের মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নেই। আমি তো বলব চতুর্থ আর পঞ্চম টেস্টে অভিমন্যুকে অবশ্যই খেলানো উচিত ছিল।”
বাংলার প্রাক্তন তারকা তথা অনূর্ধ্ব-১৯ টিমের কোচ সৌরাশিস লাহিড়ী বলেন, “অভিমন্যুর সঙ্গে যা হয়েছে, সেটা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। এখানে একটা কথা বলব, এতদিন যখন ওকে অপেক্ষা করতে হয়েছে, তখন যেন প্রাপ্য সুযোগ পায়, সেটা ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডকে দেখতে হবে। অভিমন্যুকে হঠাৎ করে বাদ দিয়ে দিলে চলবে না। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিরিজের মতো স্কোয়াডে অভিমন্যুকে রাখা হয়েছে। সেটা ও নিজেই অর্জন করেছে। যে ক্রিকেটারকে এতদিন অপেক্ষা করানো হয়েছে, তাকে যেন নিজেকে প্রমাণের জন্য যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া হয়।”
ছেলের সুযোগ না পাওয়া নিয়ে ফেটে পড়েছেন অভিমন্যুর বাবা আরপি ঈশ্বরণও। এক ইউটিউব চ্যানেলে রীতিমতো বিস্ফোরণ ঘটান তিনি। বলেন, “পারফরম্যান্সের বিচারে যারা অভিমন্যুর থেকে পিছিয়ে, তারা ওর আগে ভারতীয় টিমে সুযোগ পেয়েছে। ভারতীয় টেস্ট দলে সুযোগ পাওয়ার ব্যাপারে আইপিএল প্রাধান্য পাচ্ছে। আমি জানি না, এটা কেন হয়। আমার মত, রনজি, ইরানি, দলীপ ট্রফি আর ভারতীয় এ দলের পারফরম্যান্স দেখে টেস্ট টিম নির্বাচন করা উচিত। আইপিএল কখনও টেস্ট টিম নির্বাচনের মাপকাঠি হতে পারে না। ইংল্যান্ডে এ দলের হয়ে রান করেছে। দলীপ ট্রফিতে রান করেছে। ইরানি ট্রফিতে রান করেছে। ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট হঠাৎ করে মিডল অর্ডারের একজন ব্যাটারকে টপ অর্ডারে খেলিয়ে দিচ্ছে। অভিমন্যু সেখানে টপ অর্ডার ব্যাটার হয়ে তিন নম্বরে খেলতে পারবে না? এটা কোথায় লেখা রয়েছে? দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে তিন নম্বরে ব্যাট করতে নেমে সেঞ্চুরি করেছে। মিডল অর্ডারের ব্যাটার তিন নম্বরে ব্যাট করতে পারে, কিন্তু অভিমন্যু ওপেন করে বলে তিন নম্বরে খেলতে পারবে না?”