- পূর্বা সেনগুপ্ত
সবে বৈশাখের শুরু। কালচক্রের প্রথম মাস বাঙালির জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দিন আর রাতের মিছিলে ধরা দেয় ক্রমবিকাশের ক্রমগুলি। সেই বাঁশঝাড়ের হাওয়া খাওয়া দুপুর গ্রামবাংলা হারিয়ে ফেলেছে, তবে সেই উদ্বেগহীন মনের উৎসবের আনন্দের ভগ্নাংশ এখনও উঁকি দেয়। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলাজুড়ে শুরু হয়েছে গোষ্ঠবিহারীর মেলা। এ মেলা কেবল মেলা নয়, এখানে আছে আশ্চর্য এক সম্মেলনের বার্তা।
লক্ষ্মীকান্তপুর থেকে আসা আয়া মায়া আজ ব্যস্ত। ছুটি চায় সেন্টারের কাছে। গোষ্ঠে যাওয়ার নিমন্ত্রণপত্তর এসেছে। উন্মুখ হয়ে উঠি, নিমন্ত্রণপত্রটি কে পাঠিয়েছে, কাকে পাঠিয়েছে? একটি অঞ্চলে বেশ কয়েকটি সমৃদ্ধ পরিবার থেকে শুরু করে নানা ছোটখাট মন্দিরে রাধাকৃষ্ণ বিরাজমান। তিনি সমস্ত বছর সেবিত হন গৃহে বা ছোট মন্দিরে কিন্তু বৈশাখের শুরুতে তাঁর গোপাল রূপটি চাগার দিয়ে ওঠে, – মাঠে যেতে হবে।
সেই দ্বাপর যুগের মাঠে যাওয়ার স্মৃতি নিয়ে আলোড়িত হন ভক্ত। স্থানীয় বড় মন্দিরের প্রাঙ্গণ সেজে ওঠে মেলার উৎসবে। সেই বড় মন্দির থেকে অন্য মন্দির ও গৃহে পাঠানো হয় নিমন্ত্রণপত্র। গোষ্ঠ যাওয়ার ক্ষণ এসেছে এবার মেলায় আসতে হবে কিন্তু। মেলায় উপস্থিত হয়ে মেলার সম্মান বৃদ্ধি করতে হবে। নিমন্ত্রণপত্র পাওয়া পরিবার বা মন্দির তাঁদের বিগ্রহ নিয়ে উপস্থিত হন সেই বিরাট মেলাপ্রাঙ্গণে। সেখানে মণ্ডপে একসঙ্গে অনেক বিগ্রহ একত্রিত হন। কীর্তন আর পুজোর সঙ্গে চলে ব্যবসায়ীদের কেনাবেচা। এ যেন মহা সম্মেলনের ভূমি।
শ্রীকৃষ্ণ বিগ্রহের এই ভ্রাম্যমাণ রূপ আমরা বারবার, বিভিন্ন উৎসবে ও স্থানে দেখতে পাই। এর কারণটি কিন্তু লুকিয়ে আছে শ্রীচৈতন্যের বৈষ্ণবভাবনার প্রচারক শ্রীনিত্যানন্দের সংঘ ভাবনার মধ্যে। আচার্য শ্রীনিত্যানন্দ বুঝেছিলেন সংঘশক্তি ছাড়া কোনও মতবাদকেই প্রচার করা সম্ভব নয়। তাই তিনি এক অদ্ভুত ‘দ্বাদশ গোপালে’-র ধারণা প্রচার করেন। তিনি নিজের পার্ষদদের, একান্ত অনুরাগীদের মধ্যে বারোজনকে বেছে নিয়েছিলেন এবং তাঁদের নিয়ে গঠন করেছিলেন দ্বাদশ গোপালের ধারণা। এই দ্বাদশ জনকে তিনি গ্রামগঞ্জে পাঠিয়ে বৈষ্ণব ভাবনাকে ছড়িয়ে দেওয়ার ব্রতে নিযুক্ত করেছিলেন। মনে রাখতে হবে জাতপাত, বিশেষ করে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের গোঁড়ামি থেকে হিন্দু সমাজকে মুক্তি দিয়েছিলেন শ্রীচৈতন্যদেব, তাঁকেই বাস্তবে প্রয়োগ করেছিলেন শ্রীনিত্যানন্দ।
এই দ্বাদশ গোপালের ধারণা ও তার তাৎপর্য কী, সেই আলোচনার মধ্যে আমরা প্রবেশ করব না। আমরা দেখব, এঁদের মধ্যে যাঁরা প্রচারের সময় কৃষ্ণ বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করে একটি স্থানকে আরাধনার কেন্দ্র করে গিয়েছেন এবং সেই স্থান গুপ্ত বৃন্দাবন নামে আজও চিহ্নিত হয়। তবে এর সঙ্গে এটাও স্মরণে রাখতে হবে এ শুধু বিগ্রহ প্রতিষ্ঠার স্থান নয়, বৈষ্ণবধর্ম প্রচারও এই স্থানের অঙ্গ। সেই কারণেই প্রতিটি লীলাস্থানকে বলা হয় শ্রীপাট। কোথাও তা ‘পাটবাড়ি’ নামেও খ্যাত। এই সব স্থানে আছে একটি পবিত্র কুণ্ড, একটি পবিত্র বৃক্ষ ও তার সঙ্গে বিগ্রহের মৌলিক অবস্থান। এই লক্ষণগুলিকে নিয়ে আমরা আমাদের আলোচনা শুরু করব।
দ্বাদশ গোপালের প্রথম গোপাল রূপে যাঁর নাম উঠে আসে তিনি হলেন অভিরাম গোস্বামী। অভিরাম গোস্বামীকে একদিকে বলা হয় তিনি শ্রীচৈতন্যদেবের পার্ষদ। আবার রামদাস নাম নিয়ে তিনিই নাকি নিত্যানন্দের সহচর রূপেও বন্দিত। অভিরাম গোস্বামীর জীবনকাহিনী বড় অদ্ভুত। তিনি নাকি দ্বাপর যুগে ছিলে রাখাল সখা শ্রীদাম। বৃন্দাবন লীলায় কৃষ্ণসখা হওয়া সত্ত্বেও নাকি গৌড় লীলায় তিনি জন্মগ্রহণ করেননি। বৃন্দাবনের গোবর্ধন পর্বতে কৃষ্ণ সহ অন্যান্য সখাগণ ‘ধ্যান ধ্যান’ খেলা করছিলেন। এই অবস্থায় কৃষ্ণের কাছে গৌড়লীলা করার জন্য ডাক আসে তিনি সেই ডাকে সাড়া দিয়ে অন্যান্য গোপবালকদের আহ্বান করে নিজ সঙ্গে গৌড়লীলার সূচনা করেন। এই সময় কিন্তু শ্রীদাম সখাকে তিনি ডাকতে ভুলে যান। সেই কারণেই গৌড়লীলার প্রথমাংশে অভিরাম অনুপস্থিত।
এরপর দীর্ঘদিন অতিবাহিত হয়। হঠাৎ গৌড়চন্দ্রের শ্রীদামের কথা স্মরণে এলে তিনি নিত্যানন্দকে পাঠান বৃন্দাবনের গোবর্ধন পাহাড়ে। সেখান থেকে অনেক পরীক্ষা দিয়ে নিজের স্বরূপ সম্বন্ধে বিশ্বাস অর্জন করেন শ্রীনিত্যানন্দ। দ্বাপর যুগ অনুযায়ী অত্যন্ত লম্বা শ্রীদামকে দৈর্ঘ্যে ছোট করা হয়। কলির উপযোগী অভিরাম নিজ অঙ্গ থেকে শক্তি মালিনী দেবীকে সৃষ্টি করেন এবং তাঁকে এক সিন্দুকে আবদ্ধ করে ভাসিয়ে দেন নদীর জলে। যখন প্রয়োজন হবে নিজ শক্তিকে তখন ঠিকই তিনি খুঁজে নেবেন।
সিন্দুকে আবদ্ধ মালিনী দেবী নদীর স্রোতে ভাসতে ভাসতে উপস্থিত হন অধুনা হুগলি জেলার রাধানগর নামে গ্রামে। দ্বারকেশ্বর কানা নদীর খাতের দুই তীরে দুটি গ্রাম রাধানগর ও কৃষ্ণনগর। দুটি গ্রামে এখন অনেক উল্লেখযোগ্য মন্দির। এই কৃষ্ণনগর গ্রামের নাম ছিল কাজীনগর। পাশাপাশি গ্রাম দেবীর উল্লেখযোগ্য সতীপীঠ, রত্নাবলি। দেবী অন্ধকারে পূজিতা। পাশে ঘণ্টেশ্বর শিব দেবী মন্দিরের থেকে প্রাচীন বলে দাবি করা হয়। এই কাজীনগরে মালিনী দেবী ভাসতে ভাসতে উপস্থিত হলেন। জেলেরা তাঁকে উদ্ধার করলে তাঁর ঠাঁই হল কাজীর বাড়িতে।
কাজী তাঁকে কন্যাস্নেহে তাঁকে লালন-পালন করতে লাগলেন। এই অঞ্চলে শক্তিপীঠ থাকার দরুন অঞ্চলটি তান্ত্রিকদের কাছে সাধনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল ছিল। প্রখ্যাত তন্ত্রসাধক রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সমসাময়িক ব্যক্তিত্ব কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশের সাধনস্থলও ছিল এই ভূমি। এখনও কৃষ্ণানন্দ-পূজিত উপবিষ্ট কালীমূর্তির মন্দির দেখা যায়। যদিও তিনি একেবারেই গৃহদেবী। কৃষ্ণানন্দের উত্তরপুরুষদের পরিবারেই তিনি পূজিত হয়ে আসছেন। মন্দিরে দেবীর কাছে কিছু কামনা জানালে তাঁকে উদ্দিষ্ট ফুল যদি নীচে পড়ে যায় তবে সেই কামনা সিদ্ধ হবে বলে মনে করা হয়।
শৈশবে এই গ্রাম সংলগ্ন এলাকায় কিছুদিন থাকার সুবাদে এই বিগ্রহের ফুল পড়া অনুষ্ঠান সম্বন্ধে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আছে। অতি জাগ্রত এই মন্দিরের খোঁজ অনেকের কাছেই অজানা। তন্ত্রের প্রাধান্য কতটা গভীর ছিল তা কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশের নাম উচ্চারণের সঙ্গেই অনুধাবনযোগ্য। আবার একইসঙ্গে এই অঞ্চলে ইসলামের প্রাধান্যও আমরা দেখতে পাই। এই দুই প্রভাবকে খণ্ডিত করে বৈষ্ণব ভাবের স্থাপন ও তার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করা খুব সহজ কাজ ছিল না।
তাই অভিরামের এই পর্যায়ের কীর্তি অলৌকিকতায় পূর্ণ। বিশেষ করে এখানেই তিনি কাজীর ঘর থেকে মালিনী দেবীকে উদ্ধার করে বিবাহ করেন। এই কাজেও তাঁকে বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এই সমস্ত বাধা সহজ হয়ে হয়েছিল স্বয়ং শ্রীচৈতন্যদেব আগমনের ফলে। আমরা এই গ্রামে দুটি কৃষ্ণ মন্দিরের দেখা পাই। একজন কৃষ্ণভক্তের প্রতিষ্ঠিত কৃষ্ণ বিগ্রহ। আর অপরটি হল স্বয়ং কৃষ্ণ পার্ষদের প্রতিষ্ঠিত ও আরাধিত কৃষ্ণ বিগ্রহ, যে বিগ্রহ প্রতিষ্ঠার সময় কৃষ্ণাবতার শ্রীচৈতন্যদেবের আগমনে তা বিশেষ মাত্রা লাভ করেছিল যা বলার অপেক্ষা রাখে না।
হুগলি জেলার খানাকুল অঞ্চলের কৃষ্ণনগরে এই গুপ্ত বৃন্দাবন বিরাজিত। প্রায় ৫৫০ বছর আগে নির্মিত প্রাচীন গোপীনাথজিউ-এর অভিনব নবরত্ন মন্দির বিষ্ণুপুরের আদলকে মনে করিয়ে দেবে। ঢুকতেই বিরাট গেট। আনুমানিক চারশো বছর আগে নির্মিত হয়েছিল গোপীনাথজিউ-এর নতুন মন্দির। এই মন্দির স্থানীয় রায় পরিবার গঠন করেন। এই মন্দিরের সম্মুখে৷ চল্লিশটি থাম দিয়ে তৈরি এই নাটমন্দিরের মতো বড় নাটমন্দির খুব কম। এরই সঙ্গে এই কৃষ্ণনগর গ্রামে রয়েছে শ্রীশ্রীরাধাবল্লভজিউ মন্দির। এই মন্দিরটি টেরাকোটার চৌখুপি দিয়ে অলংকরণ করা।
গোপীনাথজিউ-এর মন্দির অভিরাম গোস্বামীর প্রতিষ্ঠিত আর শ্রীশ্রীরাধাবল্লভজিউ-এর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন আলাউদ্দিন হোসেন শাহের কর্মচারী যাদবেন্দ্র রায়চৌধুরী। ইনি খুব কৃষ্ণভক্ত ছিলেন। অভিরাম গোস্বামীর প্রতিষ্ঠিত ঐতিহাসিক মন্দির থাকা সত্ত্বেও সেই মন্দিরের খানিকটা আগের জমিতে তিনি কৃষ্ণমূর্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যাকুল হন। যদিও তিনি মন্দিরটি নির্মাণ করা শুরু করেছিলেন মাত্র। এরই মধ্যে হোসেন শাহের মৃত্যু হলে তাঁর পুত্র সিংহাসনে আরোহন করেন।
একদিন মিথ্যা গুজব তাঁর কানে এসে পৌঁছায়। গৌড়েশ্বর শুনতে পান যাদবেন্দ্র রায়চৌধুরীর মন্দির তার রাজধানীর তোরণের ইট দিয়ে তৈরি হচ্ছে। উন্মুক্ত তরোয়াল নিয়ে হাতির পিঠে চড়ে নবাব এই মন্দিরে আসেন এবং মন্দিরের কাজে রক্ষণাবেক্ষণে ব্যস্ত যাদবেন্দ্র রায়চৌধুরীর মাথা এক কোপে ধর থেকে পৃথক করে দেন। তখন সেই ধরহীন মুণ্ড বলে ওঠে কবিতার ছন্দে,
‘বড় সাধ রইল মনে
রাধামাধবকে প্রতিষ্ঠা
করতে অক্ষম হলাম
মন্দিরের সিংহাসনে।
ছিন্ন মুণ্ড কথা বলছে এবং সেই মুণ্ডের মুখে এই দেবতা প্রতিষ্ঠা না করতে পারার আক্ষেপ শুনে নবাব বুঝতে পারেন তার কাছে যে সংবাদ পৌঁছেছিল তা নিতান্তই ভুল। অনুতপ্ত নবাব তখন যাদবেন্দ্রের পুত্র কৃষ্ণরামকে এই মন্দির তৈরি করতে অনুরোধ করেন এবং মন্দির নির্মাণের জন্য যাবতীয় অর্থ প্রদান করেন বলে জানা যায়। এই মন্দির একচূড়াবিশিষ্ট, তিন খিলানযুক্ত মন্দির। টেরাকোটার ধাঁচ থাকলেও গায়ে টেরাকোটার কোনও কাজ আজ অবশিষ্ট নেই।
ঐতিহাসিক চরিত্র অভিরাম গোস্বামীর জন্ম হয় ১৪৭৮ খ্রিস্টাব্দে। তিনি ছিলেন দ্বাদশ গোপালের প্রথম গোপাল। কৃষ্ণভক্তদের কাছে অভিরাম গোস্বামী ত্রেতা যুগে ছিলেন ভরত। দ্বাপরে শ্রীদাম সখা আর কলিযুগে শ্রীচৈতন্য সখা অভিরাম আর নিত্যানন্দ পার্ষদ। শ্রীনিত্যানন্দ প্রভু ছিলেন দ্বাপরে কৃষ্ণের বড় ভাই। তাঁর সঙ্গে শ্রীদামের সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত মধুর। শোনা যায় বলরাম ও শ্রীদাম দুজনেই গোবর্ধন পর্বত পরিক্রমা করতেন দ্রুত। অন্যদের পক্ষে এতটা সহজ ছিল না। আবার শ্রীচৈতন্যদেব স্বয়ং নিত্যানন্দ প্রভুকে আদেশ করেন, যাতে তিনি বৃন্দাবন থেকে শ্রীদামকে গৌড়লীলায় সঙ্গী করার জন্য বঙ্গে নিয়ে আসতে পারেন। শ্রীদাম অভিরাম রূপে কেবল দ্বাপর আর কলি যুগকে সংযুক্ত করেননি। তিনি বাংলার কৃষ্ণ আরাধনা ও বৃন্দাবনের গোপবালকের ভক্তিমার্গকে এক সূত্রে বাঁধতে অবতীর্ণ হয়েছিলেন।
বাংলার বৈষ্ণব আন্দোলনে তাঁর উপস্থিতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কৃষ্ণনগর গ্রামে প্রথমেই গোপীনাথজিউ-এর মন্দির। বিরাট গেট দিয়ে ঢুকে বড় বকুল গাছ। শোনা যায় দ্বাপর যুগের মল্লিকাষ্ঠ দিয়ে এই বকুল গাছটি নির্মাণ করেছিলেন। এই বকুল বৃক্ষ ফুলে ফুলে শোভিত হয় বটে, কিন্তু কখনোই ফল হয় না। আবার পাশে রামকুণ্ড নামে একটি বিরাট পুষ্করিণী। সেই পুষ্করিণীতে অভিরাম গোস্বামী গোপীনাথজীউ-এর মূর্তি পেয়েছিলেন। সেই বিগ্রহ নিয়ে বকুল গাছের নীচে সামান্য আচ্ছাদনের মধ্যেই তিনি বিগ্রহ সেবা সম্পন্ন করতেন। এই সময় এক বৃদ্ধা সেই পথ অতিক্রম করে জগন্নাথ তীর্থে চলেছিলেন। স্বয়ং জগন্নাথ তাঁকে স্বপ্নদান করে গোপীনাথের জন্য মন্দির তৈরি করতে আদেশ করলে তিনি বিরাট মন্দির তৈরি করে দেন। সেই প্রাচীন মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয় এবং স্বয়ং শ্রীচৈতন্যদেব এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন ও স্থানটিকে গুপ্ত বৃন্দাবন নামে চিহ্নিত করেন। পরবর্তীকালে গ্রামের রায় পরিবার নতুন মন্দির নির্মাণ করেন। বিরাট নাটমন্দির যুক্ত এই মন্দির সত্যই খুব সুন্দর।
শোনা যায়, পূর্বে এই স্থান দিয়ে পূর্ণ স্রোত নিয়ে দ্বারকেশ্বর নদী বয়ে যেত। কিন্তু অভিরাম গোস্বামীর অভিশাপে এই নদী কানা নদীতে পরিণত হয়। কিংবদন্তী অনুসারে অভিরাম ধ্যানমগ্ন অবস্থায় বিগ্রহের বস্ত্র পরিষ্কার করছিলেন। এই সময় নদীর স্রোত এসে সেই বস্ত্র ভাসিয়ে নিয়ে গেলে তিনি অভিশাপ দিয়েছিলেন কানা নদী রূপে স্রোতহীন হবে তুমি।
পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে কৃষ্ণনগর নামে বেশ কয়েকটি স্থান আছে। অভিরাম গোস্বামীর প্রতিষ্ঠিত গোপীনাথ খানাকুল কৃষ্ণনগর গ্রামে প্রতিষ্ঠিত। এই স্থানকে খানাকুল বলা হত কারণ অভিরাম গোস্বামীর শক্তি মালিনী দেবী কাজীর বাড়ির খাবার বা খানা নাকি নদীর কুলে রেখে আসতেন। তাই এই স্থানটির নাম খানাকুল। খানাকুল যদিও রাজা রামমোহনের জন্মস্থান রূপে আজ খ্যাত কিন্তু প্রাচীনকালে এই স্থান এক মন্দির নগরী ছিল। একসঙ্গে এতগুলো জাগ্রত ও প্রসিদ্ধ মন্দিরের দেখা এখানেই মেলে। বিশেষ করে গোপীনাথের সঙ্গে অভিরাম গোস্বামীর দারুমূর্তি একটি বিশেষ মৌলিকতার দাবি রাখে।