চোখের আলোয়…মৃন্ময়ী মূর্তি ছুঁয়ে দেবীদর্শন হুগলির দৃষ্টিহীন কচিকাঁচাদের!

চোখের আলোয়…মৃন্ময়ী মূর্তি ছুঁয়ে দেবীদর্শন হুগলির দৃষ্টিহীন কচিকাঁচাদের!

বৈশিষ্ট্যযুক্ত/FEATURED
Spread the love


সুমন করাতি, হুগলি: ঈশ্বরের ভাগাভাগি নেই। তিনি সকলের। মন তেমন শ্রদ্ধায় আর্দ্র হয়ে থাকলে ঠিক তাঁর কৃপা মেলে। অনেক অধরাই ধরা দেয় ক্ষুদ্র এ জীবনের পরিসরে। আর সেখানেই ঈশ্বরের সঙ্গে ভক্তের মেলবন্ধন ঘটে। সামনে দুর্গোৎসব। চার ছেলেমেয়ের জননীই তো শুধু নন মা দুর্গা। তিনি জগৎজননী। ছোট সন্তানদের কাছে তিনি মা হয়ে ধরা দেবেন না, তা কি হয়? হয় না। মণ্ডপ আলো করে তিনি বিরাজ করেন, সে তো শুধুই ভক্তদের জন্যই। কিন্তু চোখে যাদের জন্মাবধি আঁধার, তারা কীভাবে দর্শন পাবেন দেবী দুর্গার? সেও দেবীরই কৃপা। ‘স্পর্শ’ নামক ইন্দ্রিয়েই তারা হয়ে ওঠেন চক্ষুষ্মান! তেমনই হল হুগলিতে। তবে মণ্ডপে দুর্গাদর্শন নয়, কুমোরপাড়ায় গিয়ে মৃন্ময়ী মূর্তি ছুঁয়ে হুগলির খুদে দৃষ্টিহীন ছেলেমেয়েরা অনুভব করলেন মাতৃস্নেহ, দেবী মাহাত্ম্য। সৌজন্যে জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ সুবীর মুখোপাধ্যায়।

রাত পেরলেই মহালয়া, সূচনা হবে দেবীপক্ষের। সকলে মেতে উঠবে পুজোর আনন্দে। কিন্তু ধৃতিমান দত্ত, রুদ্রনীল সরকার, সাগুন হাঁসদা, অনীক মণ্ডল, বৈদূর্য্য, বৈশালী, অনুষ্কাদের মতো আরও অনেকের কাছে পুজোর আনন্দ যেন ফিকে। দৃষ্টিই যে নেই! কীভাবে আর পাঁচজনের মতো মণ্ডপে মণ্ডপে ‘দুগ্গা মা’কে দেখবে? কিন্তু ওদের যা আছে, তা নেই সিংহভাগেরই। ওরা অন্তর্দৃষ্টি দিয়েই দুর্গাদর্শন করে, অনুভব করে আনন্দ। পুজোর সময় পুজোর প্যান্ডেলে গেলেও মাকে ছুঁয়ে দেখার বা অনুভব করার সুযোগ থাকে না এই কচিকাঁচাদের। কিন্তু সেই কারণে তাদের যাতে কোনওভাবে মন খারাপ না হয়, সেই ব্যবস্থা করেছেন জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ সুবীর মুখোপাধ্যায়। দৃষ্টিহীন খুদেদের কুমোরপাড়ায় নিয়ে গিয়ে মা দুর্গাকে ছুঁয়ে পুজোর আনন্দ উপভোগ করালেন তিনি। আর কিছুদিন বাদেই মা যাবে বিভিন্ন মণ্ডপে বা বনেদি বাড়ির ঠাকুর দালানে।কিন্তু এই দৃষ্টিহীন শিশুরা পুজোর দিনগুলোতেও আজকে যেভাবে মাকে স্পর্শ করে অনুভব করলো ঠিক সেইভাবেই পুজোর দিনগুলোতেও অনুভব করবে।

জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষের উদ্যোগে তাদের দুর্গাদর্শন। নিজস্ব ছবি।

শুক্রবার উত্তরপাড়া মাখলা এলাকার দৃষ্টিহীন স্কুলের বাচ্চাদের চণ্ডীতলা এলাকার পটুয়াপাড়ায় নিয়ে যান সুবীরবাবু। এদিন তাঁর সঙ্গে সাথে ছিল জেলা জনশিক্ষা অধিকর্তা সুদীপ্তা মজুমদার-সহ স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষিকারা। মা দুর্গাকে এভাবে স্পর্শ করার সুযোগ পেয়ে আনন্দে তখন অনেকেরই চোখে জল। কেউ কেউ গান গাইছে। সে এক অন্য আমেজ! আর তাদের এই আনন্দ দেখে এলাকার মানুষজনও অনুভব করলেন, পুজো উদযাপন কেবলই একমাত্রিক নয়, তার নানা দিক আছে। এ যে অন্য পুজোর আনন্দ।

সুবীর মুখোপাধ্যায় বলেন, ”ওদের দৃষ্টি নেই। অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে মাকে অনুভব করে। মাকে একটু ছুঁয়ে দেখতে চায়। কিন্তু পুজোর সময় প্যান্ডেলে পৌঁছেও মাকে ছুঁয়ে দেখতে পারে না। কারণ আমাদের শাস্ত্রীয় বিধি। মা ওদের কাছে অধরা রয়ে যায়। তাই মাতৃ পক্ষের ঠিক প্রাক্কালে শিশির ধোয়া শারদ প্রাতে মাখলা‌ দুই ব্রেল স্কুলের দৃষ্টিহীন ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে পটুয়াপাড়ায় এলাম। ঘুরে ঘুরে ওদের ছুঁয়ে দেখালাম ঠাকুর। ওরা ছুঁয়ে ছুঁয়ে অনুভব করল গণেশ ঠাকুরের শুঁড়, বাহন ইঁদুর, কার্তিকের ময়ূর, লক্ষ্মীর পেঁচা, মা সরস্বতীর বীণা আর হাঁস, মহিষাসুর, মায়ের রাজ রাজেশ্বরী সাজ আর মায়ের পা দু’খানি। এইটুকুতেই কী আনন্দ ওদের! ফেরার পথে ফুড প্যাকেট, এক বোতল জল দিলাম। বিদায় দিলাম যেন দূরের সহযাত্রী।” এভাবে পুজোর আমেজ উপভোগ করে খুবই খুশি স্কুলের কচিকাঁচারা। তারা বলছে, ”সত্যি! পুজো তো শুরু হয়ে গেছে। আজ মা দুর্গাকে ধরে দেখলাম। এটা আমাদের কাছে অন্য আনন্দের। মনের চোখ দিয়ে দেখলাম মায়ের অপূর্ব সুন্দর রূপ!”

দেবী-স্পর্শে ওদের মুখে হাসির ফোয়ারা। নিজস্ব ছবি।

এরপর মৃন্ময়ী থেকে চিন্ময়ীরূপে মূর্তি মন্ডপে যাবে। কিংবা বাড়ির পূজার দালানে। আসবে সপ্তমী-অষ্টমী-নবমী। মায়ের পূজা হবে, ঢাক বাজবে। ওদের অনুভূতিতে থেকে যাবে মায়ের সেই স্পর্শ। তারপর দশমীর রাতে বিসর্জনে দেবীও ডুব দেবে ওদের মতো অতল অন্ধকারে…ওরা খুঁজবে তখন মাকে স্পর্শ করা হাত দুটি।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ






Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *