চিকিৎসা করিয়ে ফেরার পথে ট্রেন দুর্ঘটনা, আলিপুরদুয়ারে ছেলেকে হারিয়ে একাই ফিরলেন মা

চিকিৎসা করিয়ে ফেরার পথে ট্রেন দুর্ঘটনা, আলিপুরদুয়ারে ছেলেকে হারিয়ে একাই ফিরলেন মা

জীবনযাপন/LIFE STYLE
Spread the love


রাজকুমার, আলিপুরদুয়ার: মাকে নিয়ে বেঙ্গালুরুতে চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন আলিপুরদুয়ারের ছেলেটি। সোমবার ফেরার কথা ছিল। ফেরা হল বটে! কিন্তু কফিনবন্দি হয়ে। রবিবার কটকের কাছে কামাখ্যা এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হওয়ায় ছেলেকে হারিয়ে মা ফিরলেন একাই। দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে বছর বাইশের শুভঙ্কর রায়ের। আলিপুরদুয়ারের জেলা প্রশাসন এই খবর নিশ্চিত করেছে।এ তো বিনা মেঘে বজ্রপাত! স্বভাবতই গভীর শোকের আবহ। কাকা, পিসিরা কেঁদে উঠছেন বারবার। এমনটা যে ঘটতে পারে, কেউ দুঃস্বপ্নেও কল্পনা করেননি।

কটকে ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত আলিপুরদুয়ারের শুভঙ্কর রায়। নিজস্ব ছবি।

আলিপুরদুয়ারের ৪ নং ওয়ার্ডের নেতাজি রোড মধ্যপাড়ার বাসিন্দা শুভঙ্কর রায়। মা চিত্রা রায়কে বেঙ্গালুরুতে চিকিৎসা করিয়ে সোমবার বাড়ি ফেরার কথা ছিল। কিন্তু ফেরা হল না। বেঙ্গালুরু-কামাখ্যা এক্সপ্রেস ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় বাংলার ছেলে বছর বাইশের শুভঙ্কর রায়ের। বাড়িতে শুভঙ্করের কাকা বিমল রায় ও পিসি মঞ্জু রায় রয়েছেন। দুজনেই কেঁদে কেঁদে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন। শুভঙ্করের পিসি মঞ্জু রায় বলেন, “দুপুর ১২ টাতেও ওর মার সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে। তখন ও বলল যে ট্রেন দুর্ঘটনা হয়েছে। কিন্তু শুভঙ্করকে পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু ওকে আমরা আর পাব না, কোনওদিন তা ভাবতেও পারিনি। আমাদের ছেলেটা খুব ভাল। মাকে চিকিৎসা করাতে এই নিয়ে তিনবার বেঙ্গালুরু গেল।”

মৃত যুবকের বাড়িতে জেলা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। নিজস্ব ছবি।

পরিবার সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, ছোটবেলায় শুভঙ্করের বাবার মৃত্যু হয়। সামান্য স্টিলের ফ্যাক্টরিতে কাজ করে সংসার চালান শুভঙ্কর। এই অবস্থাতেও মায়ের হার্টের চিকিৎসার জন্য বেঙ্গালুরুতে নিয়ে যায়। শুভঙ্করের কাকা বিমল রায় বলেন, “২২ বছরের ছোট ছেলে আমাদের। ও সবেমাত্র নিজের পায়ে দাঁড়াচ্ছে। ভগবান ওকে এখনই নিয়ে গেল।” এদিন ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরেই আলিপুরদুয়ার থানা ও জেলা প্রশাসনের কর্তারা শুভঙ্করের বাড়িতে যান। আলিপুরদুয়ার পুরসভার চেয়ারম্যান বাবলু কর, এলাকার বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল, এলাকার কাউন্সিলর-সহ অন্যান্যরা বাড়িতে গিয়ে শোকাহত পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে। স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছে গোটা পাড়া। প্রতিবেশী খোকন তরফদার বলেন, “এই ছেলের এভাবে মৃত্যু হবে, স্বপ্নেও ভাবা যায় না। এত ভালো ছেলে! এইটুকু বয়সে মৃত্যু আমরা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না।”

রেল দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, বেঙ্গালুরু-কামাখ্যা এক্সপ্রেসের বি ৬ কামরায় বাড়ি ফিরছিল শুভঙ্কর ও তাঁর মা। শুভঙ্করদের ট্রেনের টিকিটে ওই একই পিএনআর নম্বরে (৪৩১৬৮১৮৩৬০) আরও দুই যাত্রী ছিলেন। ৬৫,৬৬,৬৭ ও ৬৮ নম্বর বার্থে তাঁরা ফিরছিলেন। উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের ডি আর এম অমরজিত গৌতমের কথায়, “বেঙ্গালুরু-কামাখ্যা এক্সপ্রেসে নিউ কোচবিহার স্টেশনের ১১৭ যাত্রী আছেন। ওই ট্রেনে নিউ আলিপুরদুয়ার স্টেশনে ৩৪ জন যাত্রীর নামার ছিল। বিশেষ ট্রেনে যাত্রীরা ফিরছেন, তাঁদের স্টেশনে নামানোর জন্য আমরা বিশেষ ব্যবস্থা করেছি।”

দেখুন ভিডিও:



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *