অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসের অভিযোগ ছিল, হরভজন সিং তাঁকে বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্য করেছেন। তা মিটেও যায় পরে। কিন্তু বর্ণবিদ্বেষী মনোভাব জারি রয়েইছে।
বলিউডের ‘বিখ্যাত’ কাপুর পরিবারের প্রত্যেকেই নাকি পার্টিঅন্তপ্রাণ। কখন সন্ধের মেহফিল জমে উঠবে সুরা ও আহ্লাদী অনুপানে, তার জন্য নাকি কাপুররা প্রহর গোনেন। ‘খুল্লামখুল্লা’ আত্মজীবনীতে ঋষি কাপুর শুনিয়েছিলেন মজার একটি গল্প। ভারতীয়দের পার্টি বলতে– প্রথমে ভরপুর মদ্যপান, তারপর ডিনার। কিন্তু আইপিএলের সুবাদে ঋষির দেখা হয় একজন বিশিষ্ট অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারের সঙ্গে– যাঁর, ‘ড্রিঙ্কিং হ্যাবিট’, এত অন্যধারার যে, ঋষি অবাক না-হয়ে পারেননি। সেই অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারটি রাতের খাওয়া সন্ধে সাতটার মধ্যে শেষ করে ফেলেন। তারপর পার্টিতে আকণ্ঠ মদ্যপান শুরু হত। ঋষি কাপুরের আক্ষেপোক্তি– এক পেট খাবার খেয়ে মদ খেতে শিখলাম কই? সেই অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারের নাম অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস। দাপুটে পারফরমার, মেজাজেও তিরিক্ষি।
২০০৭-’০৮ সালে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে চলা ‘বর্ডার গাভাসকর ট্রফি’ (‘বিজেটি’) সিরিজ তেতেপুড়ে উঠেছিল অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসের সঙ্গে হরভজন সিংয়ের মনোমালিন্যে। সাইমন্ডস অভিযোগ করেছিলেন, হরভজন তাঁকে বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্য করেছেন, ‘বাঁদর’ বা ‘মাঙ্কি’ বলে অপমান করেছেন। জল এত ঘুলিয়ে উঠেছিল যে, এই ঘটনা ‘মাঙ্কিগেট স্ক্যান্ডাল’ বলে পরিচিতি পায়। শেষে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন শচীন তেন্ডুলকর। তাঁর বয়ান বা ‘স্টেটমেন্ট’ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিল বিতর্কের অবসানে।
কালের নিয়মে এ-ই হরভজন সিং ও অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস ২০১১ সালের আইপিএলে একত্রে সই করেন মুম্বই ইন্ডিয়ান্স দলে। হরভজন জানিয়েছেন: গোড়ার দিকে অস্বস্তি ও আড়ষ্টতা ছিল না এমন নয়। পরে আমরা দু’জনেই লম্বা, লম্বা সময় ধরে কথা বলেছিলাম, তারপর আর বিভেদ করার মতো কিছু ছিল না, দু’জনেই পরস্পরের বন্ধু হয়ে উঠি, টিমমেট হয়ে পরস্পরের দিকে বাড়িয়ে দিয়েছিলাম সাহায্যের হাত।
বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্য, শত্রুমনোভাবাপন্ন হয়ে ওঠা, এবং সেখান থেকে ডায়ালগের মাধ্যমে সবকিছু মিটিয়ে নেওয়া– ক্রিকেটে যেভাবে সম্ভব হয়েছে– সেভাবে কি সম্ভব সমাজের বৃহত্তর ক্ষেত্রেও ঘটা? সম্প্রতি, অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে হিন্দু মন্দির ভাঙচুর করে সেখানে ‘গো হোম ব্রাউন…’ লিখে দেওয়া হয়েছে। এর আগে অ্যাডিলেডে একজন ভারতীয় ছাত্রকে ‘ফাক… ইন্ডিয়ান’ বলে মারধর করা হয়। এসবই বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্যের প্রকৃত দৃষ্টান্ত। বিচলিত হওয়াই স্বাভাবিক। প্রগতিশীলতার লক্ষণ এতে রয়েছে কি? ‘হোয়াইট সুপ্রিমেসি’ উপনিবেশ গঠনের অন্যতম উপাদান, যার মাধ্যমে আধিপত্য কায়েম করা ও জারি রাখার প্রয়াস করা হয়েছিল সুকৌশলে।
কিন্তু বিশ্ব যত ‘মুক্ত চিন্তা’ ও ‘সার্বিক স্বাধীনতা’-র পক্ষে ঝুঁকেছে, তত আমরা মেনে নিয়েছি যে, চামড়ার রং দিয়ে একজন মানুষের প্রতি অন্য মানুষ রোয়াব দেখাতে পারবে না। মহাত্মা গান্ধী থেকে নেলসন ম্যান্ডেলা কম তো চেষ্টা করেননি অবচেতনের এই বর্ণবাদী মনোভাব বদলে ফেলতে, তবে সাফল্য যে অধরা– অস্ট্রেলিয়া দেখাল।