নিজের প্রথম ফিচার ফিল্ম ‘বেলা’, মুক্তির আগে একান্ত আলাপচারিতায় অনিলাভ চট্টোপাধ্যায়। শুনলেন শম্পালী মৌলিক।
সাংবাদিকতা করেছেন দীর্ঘ সময়, একাধিক পোর্টাল চালান, ‘হ্যাংলা হেঁশেল’ ম্যাগাজিন করেন, ‘দাদাগিরি’-র মতো শো প্রোডিউস করেছেন, অনুরাগ বসুকে নিয়ে ‘কে হবে বিগেস্ট ফ্যান’ করেছেন, জিৎ-কে নিয়ে ‘ইসমার্ট জোড়ি’-ও করেছেন। এ ছাড়া বেশ কিছু শর্ট ফিল্ম করেছেন, লম্বা গ্রাফ। ফিচার ফিল্ম করার ইচ্ছাটা কীভাবে?
…আমরা যারা সাংবাদিকতা করেছি, দিনের শেষে কিন্তু মানুষের গল্পই বলি। জীবনকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়, সেই গল্পই বলি। কখনও সাফল্য বা ব্যর্থতার গল্প। গল্প বলার ইচ্ছে সবারই থাকে। আমি দু’বছর আগে একটা উপন্যাসও লিখেছিলাম। শর্ট ফিল্ম করেছিলাম। সিনেমায় গল্প বলার একটা ইচ্ছে ছিল। তারপর মনে হল এবার সময় হয়েছে বড় পর্দায় কাজ করার। মনে হল এই মিডিয়ামে আমি ট্রাই করতেই পারি।
সাংবাদিকতা-লেখালিখির জগৎ থেকে এক সময় অ্যাকশন-কাট-এর মধ্যে এসে পড়া, কখনও অন্য জগৎ থেকে এসে পড়েছেন এমন মনে হয়েছ। যেহেতু সিনেমা পরিচালনা ভিন্ন বিষয়।
…না তেমন মনে হয়নি। বরং সবাই ভীষণভাবে গ্রহণ করেছে। বিভিন্ন সময়ে কোনও দরকার পড়লে শিবুর (শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়) কাছে পরামর্শ নিই। আমার সিনেমা করা উচিত, এটা যেমন শিবু আমাকে বারবার বলেছে, আবার রিঙ্গো খুব বলত, ‘তোমার সিনেমা করা উচিত।’ ট্রেলার লঞ্চের আগের দিন মাঝরাতে কৌশিকদাকে (গঙ্গোপাধ্যায়) মেসেজ করেছিলাম, যদি আসতে পারে। সেদিন বড়মার পুজো ছিল, আসতে পারেনি, মেসেজ করে জানিয়েছিল। যে জেনেছে, সবাই ছবির বিষয়ে খোঁজ নিয়েছে। বুম্বাদা (প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়) ইতিমধ্যে ট্রেলারটা শেয়ার করেছে। জিৎও বলেছে করবে। দেবকে ট্রেলার পাঠালাম, সঙ্গে সঙ্গে বলল, ‘আমি শেয়ার করব।’ প্রায় সকলেই পাশে রয়েছেন। (হাসি)
এক সময় শহরতলি থেকে উঠে এসেছেন। সেই জেদটাই কি সাফল্যের চাবিকাঠ।।
…দেখো, সাফল্য কি না জানি না (হাসি)। লড়তে ভালো লাগে। নতুন কিছু করতে ভালো লাগে।
এ তো বিনয় হয়ে গেল।
…না, না, আমার মনে হয়, সাফল্য বলে ওইরকম কিছু হয় না। ভালো লাগে নতুন কিছু করতে। নিজেকে নতুন নতুন ক্রিয়েটিভ জোনে দেখতে ভালো লাগে। কমফর্ট জোন থেকে বেরলেই ক্রিয়েটিভিটি তৈরি হয়, মনে হয়। সেই চেষ্টাই করি।
নিজের প্রথম ছবি ‘বেলা’ নিজেই প্রযোজনা করলেন কেন? অনিলাভ চট্টোপাধ্যায়ের তো যোগাযোগ কিংবা প্রযোজকের অভাব নেই।
…আমার মনে হয়, এতগুলো বছর সাংবাদিকতা করেছি, নন-ফিকশন করেছি। সেদিন মণিদার সঙ্গে গল্প হচ্ছিল যে, ‘আমার পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়স। এখন যদি তোমাকে বলি আমি ফিকশন করব, তুমি আমাকে বিশ্বাস করবে না। তার চেয়ে যদি একটা ছবি করে একজন প্রযোজকের কাছে যাই, তখন লোকে বিশ্বাস করবে।’ আমি সেটা সহজে পেতেও চাইনি। তার জন্য শর্ট ফিল্ম করেছি। শেষ শর্ট ফিল্ম ‘মেসি’ বেশকিছু পুরস্কারও পেয়েছে। নিজেই প্রথম প্রযোজনা করে জমিটা তৈরি করতে চাই।
প্রথম ছবির বিষয় হিসাবে বেলা দে-কে বেছে নেওয়ার কারণ কী? নবীন প্রজন্ম খুব বেশি জানে না তাঁর সম্বন্ধে।
…না, ঠিকই, পুরনো প্রজন্মই জানে। দুটো কারণ বলছি, বাংলা ছবির দর্শকদের বড় অংশ হল, প্রবীণ প্রজন্ম। হল-এ গিয়ে সার্ভে করে এটা বুঝেছি। নতুন প্রজন্মের মধ্যে বাংলা ভাষার প্রতি লয়ালিটি ভীষণ কমে গিয়েছে। খুব দুঃখের বিষয় হলেও, এটা সত্যি সেই জায়গা থেকে দেখি, প্রবীণ প্রজন্মই বাংলা ভাষার জন্য কষ্ট পায়, পড়ে, আন্দোলন করে। ম্যাক্সিমাম প্রবীণ প্রজন্মই বাংলা ছবির জন্য হল ভরায়। সেইখানে একটা সংযোগ পাব মনে হয়েছিল। দু’নম্বর, বেলার গল্পটা অসাধারণ।
আচ্ছা…
…এতগুলো বছর ধরে তখন ‘হ্যাংলা’ ম্যাগাজিন করেছি, দেখেছি বাড়িতে যারা রান্না করে, সামান্য রেকগনিশন পেলে, তাদের জীবন বদলে যায়। মা-কাকিমাদের তো আমরা সেই রেকগনিশন দিইনি, তাদের রান্না খেয়েছি, হয়তো ভালো হয়েছে বলেছি, এটুকুই। কিন্তু রান্নার মাধ্যমে তাদের আত্মপরিচয় তৈরি হতে পারে, সেটা ভাবা হয় না সচরাচর। মানে আমার মা, বা আমার বাবার স্ত্রী ছাড়াও তো নিজস্ব পরিচয় আছে তাঁর। সেটা কিন্তু বেলা দে সেই যুগে অত বছর আগে বলেছিলেন। ‘হ্যাংলা’ করতে গিয়ে আমি সেটা দেখলাম। হয়তো ম্যাগাজিনের পাতায় একটু রেসিপি বা ছবি বেরিয়েছে, সে কিন্তু ভবিষ্যতে রেস্তরাঁ করেছেন বা হোম শেফ হয়েছেন, বা রান্না শেখান, কিংবা ইউটিউব চ্যানেল খুলেছেন। বহু মহিলাকে এমন দেখেছি। এটা আজকের দিনে সম্ভব হয়েছে। বেলা দে সেটাই, যিনি একটা রেডিও শো-এর মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নের চেষ্টা করেছিলেন। ‘মহিলা মহল’ সেই সময় নারীর বাইরের জানলাটা খুলে দেয়।
পিরিয়ড ফিল্ম করার অনেক ঝক্কি। বেলা দে-র চরিত্রে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকে বেছে নেওয়ার কারণ কী?
…ঋতুকে বেছে নেওয়ার প্রধান কারণ, লার্জার দ্যান লাইফ প্রেজেন্স আছে, সেটা ম্যাটার করে। চরিত্রটার ভার ঠিকভাবে টেনে নিয়ে যাওয়া, ঋতুর মতো ভারী নাম সেটা পারবে।
বেলা দে-কে কেন্দ্র করে সেই যুগে অনেক চরিত্র রয়েছে। যেমন– বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, ইন্দিরা দেবী, আর কাদের দেখা যাবে?
…নীলিমা সান্যালকে পাবে, যিনি আকাশবাণীর খবর পড়তেন দিল্লি থেকে। কাজী সব্যসাচীকে দেখতে পাবে। নীলিমা সান্যালের চরিত্রে বাসবদত্তা, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের চরিত্রে দেবপ্রতিম দাশগুপ্ত, ইন্দিরা দেবী করেছে খুব ইন্টারেস্টিং নাম– মধুজা বন্দ্যোপাধ্যায় (হাসি)। আর মীর আছে, জগন্নাথদা (বসু) আছে, আরও অনেকে। ক্রমশ প্রকাশ্য।
বাংলা ছবির ভালো সময় চলছে বলা যায়, ‘ধূমকেতু’-র পর দর্শক সমাগম বেড়েছে, সঙ্গে প্রাইম টাইমে বাংলা ছবি শো পাচ্ছে।
নিজের প্রথম ছবি ‘বেলা’-র বাণিজ্য নিয়ে কতটা আশাবাদী?
…আশাবাদী বলেই এগিয়েছি। আশা তো রাখতেই হয়। চেষ্টা করছি মানুষের কাছে পৌঁছনোর বিভিন্নরকমভাবে। ২৯ আগস্ট অর্থাৎ আগামী শুক্রবার ছবি রিলিজ। এটাই বলব, প্রত্যেকের বাড়িতে একজন ‘বেলা’ আছেন। তাঁরা যদি হল-এ গিয়ে ছবিটা দেখেন, মনে হয় না হতাশ হবেন। নিজের সঙ্গে শুধু মিল পাবেন না, সাহসও পাবেন।
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় কিছু জানিয়েছেন ট্রেলার দেখে?
…এখনও না, সৌরভের মায়ের শরীর ঠিক নেই, ফলে অন্যরকম মনের অবস্থা ওর। প্রিমিয়ারে আসবে বলেছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন