চন্দ্র আহত, চিন্তা মহাকাশীয় বর্জ্য

চন্দ্র আহত, চিন্তা মহাকাশীয় বর্জ্য

সিনেমা/বিনোদন/থিয়েটার
Spread the love


চাঁদে বাড়ছে পর্যটকদের দৌরাত্ম্য; পাল্লা দিয়ে মহাকাশীয় বর্জ্যও। উপগ্রহকে মহাজগতের ‘বিপন্ন ঐতিহ্য’-র তালিকাভুক্ত করা হল তাই।

‘মুন রকেট টু আর্থ… ট্যাঙ্ক ও অন্য-কিছু যন্ত্রপাতি চাঁদেই রেখে যাচ্ছি… অক্সিজেন প্রায় ফতুর… সুতরাং ওসব নিয়ে আর কালক্ষেপ করা যাবে না…’। পৃথিবীর জ্যোৎস্নাতে চাঁদে এভাবেই রকেট মেরামতির কাজটাজ সেরে ঘরে ফিরছিল টিনটিন আর ক্যাপ্টেন হ্যাডক। আর চাঁদে কী-কী রেখে যাওয়া হচ্ছে, খারাপ হয়ে যাওয়া রকেটের অক্সিজেন-অপ্রতুলতার দরুন, সেই সংক্রান্ত তথ্যের ফিরিস্তি আর্থ স্টেশনে পাঠিয়ে দায়িত্ব পালন করছিল প্রফেসর ক্যালকুলাস। সে-যাত্রায় প্রাণরক্ষার দায়ে নেহাতই নিরুপায় হয়ে কিছু সরঞ্জাম চাঁদের মাটিতে রেখে আসতে বাধ্য হয়েছিল টিনটিনরা। সুযোগ থাকলে চাঁদের ভূমি ও দৃশ্যদূষণে তারা মোটেই
অংশগ্রহণ করত না।

এ-কালের টিনটিন-হ্যাডকদের অবশ্য সেই নান্দনিক দায় নেই। দিব্যি তারা চাঁদে ঘুরে-ফিরে, মৌজ করে, পৃথিবীতে ফিরে আসছে উপগ্রহের মাটিতে দৃশ্যদূষণ ঘটিয়ে। এসবের জেরেই অতিষ্ঠ হয়ে চাঁদকে ‘বিপন্ন ঐতিহ্য’ রূপে ঘোষণা করা হল।

মন্দির-মসজিদ, গির্জা-মিনার, সমাধি-স্থাপত্য, শহর-সংস্কৃতি-সভ্যতা নয়, সম্প্রতি চাঁদকে ‘থ্রেটেন্ড হেরিটেজ সাইট’-এর লিস্টে ঢুকিয়েছে ‘ওয়ার্ল্ড মনুমেন্ট ফান্ড’ (ডব্লিউএমএফ)। তারা জানিয়েছে, অদূর আগামীতে চাঁদের ৯০টির বেশি গুরুত্বপূর্ণ অংশ অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। ‘গুরুত্বপূর্ণ অংশ’ এখানে শনাক্ত হয়েছে চাঁদের সঙ্গে পৃথিবীর সম্পর্কের নিরিখে। অর্থাৎ যে-অঞ্চলগুলিতে মহাকাশচারীরা নেমেছেন বা যে-অঞ্চলের মাটি পরীক্ষা করে উপগ্রহের ভূপ্রকৃতি, জলবায়ু, প্রাণসন্ধান সংক্রান্ত বিবিধ তথ্য মেলে-সেসব অঞ্চল। ‘ট্যাঙ্কুইলিটি বেস’ সেরকমই একটি অঞ্চল।

‘অ্যাপোলো ১১’ এই চত্বরে ল্যান্ড করার পর এখানকার মাটিকেই প্রথম ছুঁয়েছিলেন নীল আর্মস্ট্রং। এই অঞ্চলটির অস্তিত্ব এখন প্রায়-বিপন্ন। বিশ্বের অনেক ধনকুবেররই বেড়ানোর ‘হটস্পট’ হয়ে উঠেছে চাঁদের মাটি। বিভিন্ন দেশের সরকারও ধনবান নাগরিকদের চাঁদে যেতে ইন্ধন জোগাচ্ছে সরকারি কোষাগারে পুষ্টি জোগানোর লোভে।

‘ডব্লিউএমএফ’-এর প্রেসিডেন্ট বেনেদিক্তে দে ম্যুলহ জানাচ্ছেন, দিন-কে-দিন চাঁদে বেড়ে চলেছে মহাকাশীয় বর্জ্যের পরিমাণ। নভোচর নীল আর্মস্ট্রং ও এডউইন অলড্রিনের চাঁদে নামার পর সেই বিজয় মুহূর্ত ক্যাপচার করেছিল একটি মেমোরিয়াল ডিস্ক। একইভাবে নিজেদের চন্দ্র-পদার্পণের দুর্লভমুহূর্ত ধরে রাখতে চাঁদের মাটিতে মেমোরিয়াল ডিস্ক বসাচ্ছেন বর্তমান ধনকুবেররা। সেগুলো রয়ে যাচ্ছে চাঁদেই।

‘নাসা’-ও এই শতাব্দীর শেষে ‘আর্টেমিস মিশন’-এ চাঁদে মানুষ পাঠাতে বদ্ধপরিকর। শুধু তা-ই নয়, মার্কিন এই স্পেস এজেন্সি উপগ্রহের মাটিতে একটি স্থায়ী ‘সেটমেন্ট’-ও গড়তে চায়, যেখান থেকে মানুষ আর ‘ভায়া মুন’ নয়, সরাসরিই মঙ্গলে ‘ট্রাভেল’ করতে পারবে! ট্যুরিস্ট সামলাতে গিয়ে চাঁদের এখন চন্দ্রাহত অবস্থা! ‘বিপন্ন ঐতিহ্য’-র তকমা কি তাকে ফিরিয়ে দিতে পারে স্বস্তির শ্বাস?



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *