- সুমন মল্লিক
বাইশ বছর আগের কথা৷ বুকে আগুন আর চোখে স্বপ্ন নিয়ে তখন সবে শিলিগুড়িতে এসেছি পাকাপাকিভাবে থাকার জন্য৷ পড়াশোনার মধ্যেই ছিলাম তখন৷ হায়দরপাড়ায় একটি বাড়িতে ঘরভাড়া নিয়ে থাকতাম৷ বাড়ির মালিক ছিলেন একজন অশীতিপর বিধবা বৃদ্ধা৷ বাড়িটিকে পাড়ার সবাই ‘বুড়ির বাড়ি’ বলত৷ উত্তরদিকে বাড়িটির মূল অংশ ছিল৷ তার দোতলায় মালকিন থাকতেন৷ নীচে ছেলেমেয়েকে নিয়ে থাকতেন এক দম্পতি৷ পশ্চিম দিকের ছোট্ট দোচালায় একজন মধ্যবয়স্ক ছেলে বোনকে নিয়ে থাকত৷ আর পূর্ব দিকের দোচালার দুটি ঘরে এক বয়স্ক দম্পতি থাকতেন৷ একটি ঘরে আমি থাকতাম৷ পূর্বদিকের দোচালায় বাথরুমটি কমন ছিল৷ আমার একটি ঘরের ভাড়া ছিল এগারোশো টাকা৷ কারেন্টের খরচ ওর মধ্যেই ধরা ছিল৷
হোটেলের খাবার আমার সহ্য হল না৷ পেটের সমস্যায় ভুগতে শুরু করলাম৷ বয়স্ক দম্পতির বোধহয় আমাকে দেখে দয়া হল৷ শেষপর্যন্ত তাদের কাছেই খেতে শুরু করলাম৷ সকাল, দুপুর ও রাত – মাসে আড়াই হাজার টাকা৷ কিন্তু সন্ধেবেলা পড়াশোনার সময় পেটে ইঁদুর দৌড়োতে লাগল৷ রোজ রোজ তো আর মুড়ি, বিস্কুট বা চানাচুর ভালো লাগে না৷ একদিন সহ্য করতে না পেরে কাছেই মোড়ের এক গলির চায়ের দোকানে ছুটে গেলাম৷ গরম গরম দুটো শিঙাড়া ঠুসে চায়ের কাপ হাতে নতুন শহরের লোকজন দেখতে লাগলাম৷
এরপর থেকে প্রায় প্রতিদিন সন্ধেবেলা গোবিন্দ কাকার ওই চায়ের দোকানে বসাটা একটা রুটিন হয়ে গেল৷ পেটে খিদে নিয়ে কি আর বিদ্যে হয়? একদমই হয় না৷ রোজ সন্ধেবেলা প্রায় আধ ঘণ্টা গোবিন্দ কাকার দোকানে বসতাম৷ খাওয়ার ফাঁকে সকালের বাসি খবরের কাগজও দেখা হয়ে যেত৷
হায়দরপাড়া থেকে সুভাষপল্লি, অনেকটাই সময় লাগত সাইকেল করে স্কুলে যেতে৷ প্রথম প্রথম রোজই রাস্তা হারিয়ে ফেলতাম৷ মফসসলের ছেলে হঠাৎ বড় শহরে এলে এমনটাই তো হওয়া স্বাভাবিক৷ একদিন গল্পে গল্পে গোবিন্দ কাকাকে অসুবিধের কথাটা জানালাম৷ আমি ততদিনে কাকার ‘রেগুলার কাস্টমার’ হয়ে গিয়েছি৷ অসুবিধের কথাটা শুনেই কাকা বলল, ‘প্রথম প্রথম এমন হয়৷ আশির দশকে আমি যখন এখানে আসি আমারও হত৷ রাস্তাঘাট গুলিয়ে ফেলতাম৷ আমার বাবা জুয়া খেলে খেলে ফকির হয়ে গিয়েছিল৷’ তারপর বিড়িতে লম্বা টান দিয়ে কাকা বলল, ‘একটা সহজ বুদ্ধি দিই৷ মনে রেখো৷ প্রত্যেক মোড়ে কোনদিকে যাচ্ছ তার একটা চিহ্ন রাখবে৷ বাড়ি, গাছ, দোকান, যা খুশি৷ তিন-চার দিন করো, দেখবে আস্তে আস্তে রাস্তাঘাট মনে থাকবে৷’ গোবিন্দ কাকার দেওয়া এই বুদ্ধিটা রাস্তা মনে রাখার ক্ষেত্রে দারুণ কাজে এসেছিল৷ জীবনের একটা শিক্ষা বলা যায়৷
২
একটা বছর কেটে গেল এভাবেই৷ পড়াশোনাতেই ডুবে থাকতাম৷ নতুন শহরে বন্ধুও তেমন হয়নি৷ বন্ধু বলতে স্কুলের সহপাঠী হাতেগোনা কয়েকজন৷ তাদের সবাই হায়দরপাড়া থেকে অনেকটা দূরে থাকত৷ কাজেই স্কুল বাদে আমার গল্প করার, আড্ডা দেওয়ার লোক ছিল ওই একজনই, গোবিন্দ কাকা৷ ভাড়াবাড়িতে কারও সঙ্গেই গল্প করে মজা পেতাম না৷
একদিন দোকানে গল্পে গল্পে উঠে এল কাকার পরিবারের প্রসঙ্গ৷ স্ত্রী-ও দোকানে তাকে সাহায্য করত৷ তিন বছর আগে ক্যানসারে মারা গিয়েছে৷ চিকিৎসায় খরচ হয়েছিল ভালোই৷ বড় ছেলে প্লাম্বারের কাজ করে৷ বিবাহিত৷ ছেলেমেয়ে হয়নি৷ মেজো ছেলে মার্বেল মিস্ত্রি৷ আর ছোট ছেলে টুয়েলভে পড়ছে সায়েন্স নিয়ে৷ পড়াশোনায় খুব ভালো৷
এক বছরে শহরের অনেক কিছুই চেনা হয়ে গিয়েছিল৷ ছুটির দিনে সিনেমা দেখতে যেতাম পায়েল বা উর্বশী সিনেমাহলে৷ সঙ্গ দিত অনিন্দ্য৷ অনিন্দ্যও মফসসল থেকে শিলিগুড়িতে এসেছিল লেখাপড়ার জন্য৷ তবে আমার মতো পাকাপাকিভাবে আসেনি৷ আমরা একই স্কুলে পড়তাম৷ সুভাষপল্লিতে ভাড়া থাকত অনিন্দ্য৷ তখন শিলিগুড়িতে যেমন বৃষ্টি হত, তেমনই ঠান্ডাও পড়ত প্রবল৷ হাতে টাকা না থাকলে বা কম থাকলে, ছুটির দিন বিকেলে হয় আমি অনিন্দ্যর ওখানে চলে যেতাম, না হলে অনিন্দ্য আমার এখানে চলে আসত৷ প্রবল বর্ষা কিংবা শীতেও এটা চলত৷ অনিন্দ্য এলে আমরা আগে গোবিন্দ কাকার দোকানে বসে আড্ডা দিতাম৷ দোকানে ভিড় না থাকলে অনেক সময় কাকাও আড্ডায় যোগ দিত৷ কাকার কাছে আমরা শিলিগুড়ির পুরোনো গল্প শুনতাম৷
গোবিন্দ কাকা গল্পের ঝাঁপি খুলে বসলে তার থেকে বেরিয়ে আসত শিলিগুড়ির গুন্ডা-মস্তানদের কাহিনী, খালপাড়ার নানা গল্প, রাজনৈতিক হানাহানির কিসসা৷ সব গল্পই ছিল শিলিগুড়ির আলোর ভেতর লুকিয়ে থাকা অন্ধকার নিয়ে৷
এক ছুটির দিন বিকেলে দেখি গোবিন্দ কাকার দোকানে ঝাঁপ বন্ধ৷ অনিন্দ্য এসেছে৷ দোকানে বসতে হয়৷ পাশের দোকানে জিজ্ঞেস করে জানতে পারি, কাকার বড় ছেলে জেলে৷ মদ খেয়ে বৌকে এমন মারা মেরেছে, হাসপাতাল পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া যায়নি৷ ঘরেই মারা গিয়েছে৷
৩
মাসখানেক হল শীতের প্রবলতা কমেছে৷ পুবের জানলা খুললেই বসন্তের মিষ্টি মৃদু বাতাস এসে ঘর ভরিয়ে দেয়৷ আমার পড়ার টেবিলে তখন স্কুলের বইপত্রের ভেতর ঢুকে থাকত নানা কবিতা ও গল্পের বই৷ থাকত একটি ডায়েরিও৷ ওতে অবসর সময়ে কবিতা লেখার চেষ্টা করতাম৷
সন্ধেবেলা একদিন গোবিন্দ কাকার দোকানে গিয়ে বসেছি চায়ের কাপ হাতে৷ কাকার বড় ছেলে তখনও জেলে৷ গোবিন্দ কাকার মুখে হাসি বা কথা কিছুই নেই৷ আমি অনেকক্ষণ ধরে কাকার কথা শোনার জন্য অপেক্ষা করলাম৷ চা-ও অন্যদিনের তুলনায় আস্তে খাচ্ছিলাম৷ কাকা কথা না বলায় আমিই বললাম, ‘বড় ছেলের এখন কী খবর কাকা?’ কিছুক্ষণ চুপ থেকে কাকা বলল, ‘বড়টাকে খেলো মদ আর মেজোটাকে খেল মেয়েবাজি৷ দুটাই জাহান্নামে যাক৷’ গলায় একাধারে ঘৃণা ও আক্ষেপ৷
‘মেজো ছেলের আবার কী হল?’
‘দু’দিন হল বাড়ি আসে না৷ আজ জানলাম একটা মেয়েকে নিয়ে নাকি পালিয়েছে৷ আমার মানসম্মান ধুলোয় মিশে গেল এই ক’দিনে৷’
‘কাকা, তোমার ছোট ছেলের খবর কী?’ কথার মোড় ঘোরাবার জন্য জিজ্ঞেস করলাম৷
কাকার কপালের ভাঁজগুলো যেন এবার খানিকটা মিলিয়ে গেল৷ চায়ের কাপ ধুতে ধুতে বলল, ‘আগামী মঙ্গলবার ওর জয়েন্টের রেজাল্ট৷ দেখি কী হয়৷ আমার তো পোড়া কপাল৷ ছেলে পরীক্ষা তো ভালোই দিয়েছে৷ দেখি, ওর কপালে কী আছে৷’ কথার শেষে একটা দীর্ঘশ্বাস শোনা যায়৷
৪
বিকেলে ঘুমের অভ্যেসটা আমার তখন থেকেই ছিল৷ স্কুল থেকে ফিরে খাওয়ার পর ঘণ্টা দেড়েক ঘুমোতাম৷ সেরকমই একদিন ঘুম থেকে উঠে মনে পড়ল, আজ মঙ্গলবার৷ গোবিন্দ কাকার ছোট ছেলের জয়েন্টের রেজাল্ট বেরোনোর কথা৷ হাতমুখ ধুয়ে কাকার দোকানে হাজির হলাম৷
আমাকে দেখেই কাকার মুখে প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠল৷ একটা হাসি কতকিছু বলে দেয়৷ সেই হাসির ছোঁয়া লাগল আমার মুখেও৷ গরম গরম চা আর শিঙাড়া আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে গোবিন্দ কাকা বলল, ‘আজকে কিন্তু পয়সা নেব না৷’ মুখে তখনও সেই হাসি৷
‘কিন্তু আমার তো আগের মাসেরও বাকি…’
‘ওসব আজ থাক৷ আজকে পয়সা দিও না তুমি৷ কত লোক আসে দোকানে৷ একমাত্র তুমিই আমার ছোট ছেলের খবর নিয়েছিলে৷’
‘বুঝতে পেরেছি৷ তা কেমন হল রেজাল্ট?’
‘১১২-তে আছে৷ মেডিকেলে৷ ছেলে বলল, সরকারি কলেজে হয়ে যাবে৷’ বলতে বলতে কাকার মুখে হাসিটা আরও ছড়িয়ে পড়ে৷ চোখ দুটি উজ্জ্বল হয়ে ওঠে৷
আমি ঘরে ফিরে মনে মনে বলি, যাক, লোকটার একটা ছেলে অন্তত তাকে শান্তি দিতে পারল৷ এবার সে ডাক্তার হবে৷ কাকার শেষ জীবনটা সুখে কাটবে৷ একজন সামান্য চা বিক্রেতার ছেলে ডাক্তার হবে৷ ভাবা যায়! এসব তো শুধু গল্পে শুনেছি৷ আজ নিজের চোখে দেখলাম৷
৫
শীতের শুরু ও শেষ দিকে আমি একটু অসুস্থ হয়ে পড়ি৷ সাইনাস ও সর্দিকাশির সমস্যায় ভুগি৷ এটা অনেক আগে থেকেই আমার একটা অসুবিধে৷ একটু বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাওয়ায় বেশ কিছুদিন ঘর থেকেই প্রায় বেরোলাম না৷ স্কুলও যাইনি৷ জ্বর ছিল কয়েকদিন৷ যাদের কাছে খেতাম তারাই সন্ধেবেলা চা-টিফিন দিত৷ ওষুধপত্র আমার কাছে থাকতই৷ অনিন্দ্য আসত সময় পেলে৷ গোবিন্দ কাকার শিঙাড়া নিয়ে আসত৷ ঘরে বসেই গল্প হত৷ অনিন্দ্য বলেছিল, কাকা আমার খোঁজ নিয়েছে ওর কাছে৷ মুখে তার হাসি ছিল না৷
টেবিলে বেশ কয়েকদিন বসতে পারিনি৷ যখন একটু ভালো লেগেছে পড়েছি৷ স্কুলের পড়ার পাশাপাশি অন্যান্য বই পড়েছি৷ কিন্তু লেখালেখি হয়নি একলাইনও৷ ইতিমধ্যে বসন্ত বিদায় নিল৷ দিন বড় হচ্ছে৷ আগের মতো ঝুপ করে সন্ধে নামছে না৷ এই সময় আমি জানলার পাশে দীর্ঘক্ষণ খাটে হেলান দিয়ে আঁধার ঘনানো এবং তার মাঝে একে একে লাইট জ্বলে ওঠা দেখতাম৷
কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠার পর একদিন বিকেলে গোবিন্দ কাকার দোকানে গিয়ে বসলাম৷ কাকার মুখ থমথমে৷ পরিচিত সেই হাসি নেই মুখে৷ আমাকে দেখে হাসার চেষ্টা করল ঠিকই, কিন্তু হাসতে পারল না৷ আমি বুঝতে পারলাম কিছু একটা হয়েছে৷ জানতে চাইলাম কী হয়েছে৷ কাকা বিষণ্ণ বদনে বলল, ‘ছোট ছেলেটা কলকাতার ভালো একটা কলেজে ভর্তি হয়েছিল৷ কিন্তু হস্টেলে এমন মার মেরেছে… বাড়ি চলে এসেছে৷’
‘সে কী! কে মেরেছে? কেন?’
‘র্যাগিং করেছে ওকে৷ উঁচু ক্লাসের ছেলেরা৷ এভাবে কেউ অত্যাচার করে!’
‘কলেজে কমপ্লেন করেনি?’
‘না৷ এত ভয় পেয়েছে যে পরের দিনই পালিয়ে চলে এসেছে৷ আমি বুঝিয়েছি অনেক৷ বলেছি, চল কলেজে গিয়ে কথা বলি৷ ও যাবে না৷ এত ভয় পেয়েছে, রাতে ঘুমের মধ্যেও বিড়বিড় করে কী যেন বলে আর কেঁপে কেঁপে ওঠে৷’
‘তাহলে এখন কী করবে বলে ভাবছ?’
‘দেখি কিছুদিন৷ আমার তো মাথাই কাজ করছে না৷’
৬
মাস ছয়েক কেটে গেল৷ গোবিন্দ কাকার ছোট ছেলে আর কলকাতা গেল না৷ কোনওভাবেই তাকে রাজি করানো যায়নি৷ দেখা হলেই কাকা আমার কাছে আফসোস করত৷ আমি চিন্তা করতে মানা করতাম৷ সান্ত্বনা ছাড়া তখন আর কী বা দেওয়ার ছিল আমার৷
সামনে পরীক্ষা থাকায় সবকিছু বন্ধ করে পড়ায় মনোনিবেশ করলাম৷ টানা কয়েক সপ্তাহ এভাবেই চলল৷ সন্ধেবেলা আর বেরোতাম না৷ বইখাতা, নোটপত্রে মুখ গুঁজে থাকতাম৷ পরীক্ষা শেষ হবার পর একদিন গোবিন্দ কাকার দোকানে গিয়ে দেখি ঝাঁপ বন্ধ৷
পরের দিনও গিয়ে দেখি দোকান বন্ধ৷ পরপর বেশ কিছুদিন দোকান বন্ধ থাকায়, একদিন পাশের দোকানে খবর নিলাম৷ জানতে পারলাম, গোবিন্দ কাকা দোকানটা ছেড়ে দিয়েছে৷ ছোট ছেলে নাকি ভীষণভাবে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছিল৷ ওর পেছন লেগে না থাকলে হয় না৷ ছেলেকে অনেক সময় দিতে হয় গোবিন্দ কাকাকে৷ তাই অনেক চিন্তাভাবনা করে শেষে দোকানটা ছেড়ে দেয়৷
এসব শোনার পর একটা অদ্ভুত বিষণ্ণতা আমাকে ঘিরে ধরল৷ বারবার মনে পড়তে লাগল কাকার চা আর শিঙাড়ার কথা৷ মনে পড়তে লাগল কাকার অনাবিল হাসিমাখা একেকটি কথা৷ মনে পড়তে লাগল তার চোখে দেখা ছেলের ডাক্তার হবার সেই তীব্র স্বপ্নের কথা৷
৭
দুটো বছর কেটে গিয়েছে৷ আমি স্কুল শেষ করে তখন শিলিগুড়ি কলেজে৷ বন্ধুদের সঙ্গে সিনেমা দেখতে গিয়েছি পায়েল সিনেমা হলে৷ টিকিট কাটার পর বাইরে দাঁড়িয়ে গল্প করছি আমরা৷ একজন বৃদ্ধ লোক সামনে এসে টেনে টেনে একটু অন্যভাবে বলল, ‘চা লাগবে চা… গরম চা আছে৷’ লম্বা উশকোখুশকো চুল, গাল ভর্তি দাড়ি, মলিন ও জীর্ণ পোশাক৷ লোকটি হঠাৎ আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘বাবু, ভালো আছ? চিনতে পেরেছ আমাকে?’
কণ্ঠস্বর চিনতে আমার অসুবিধে হল না৷ আমাকে ‘বাবু’ বলে আর কে-ই বা ডাকবে এই শহরে! এ তো গোবিন্দ কাকা! কাকাকে একটু পাশে নিয়ে গিয়ে বললাম, ‘এ কী অবস্থা কাকা! কেমন আছ তুমি?’ দাড়ির ফাঁকে সেই অমলিন হাসিটুকু নিয়ে গোবিন্দ কাকা বলল, ‘আমার তিনটে ছেলেই জাহান্নামে চলে গিয়েছে৷ আমিও সেখানেই যাওয়ার অপেক্ষা করছি৷’ কথা শেষ করেই গোবিন্দ কাকা ‘চা লাগবে চা… গরম চা আছে’ বলতে বলতে উলটোদিকে চলে গেল৷ আমি দেখলাম, একজন ভাগ্যহীন, হেরে যাওয়া বাবা ধীরে ধীরে ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছে৷