সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত পদত্যাগ করে দেশ ছাড়তে রাজি ছিলেন না। কিন্তু উন্মত্ত জনতার হাত থেকে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশ ছাড়তে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। সেনা ও আওয়ামি লিগের নেতারা যখন তাঁকে পদত্যাগের কথা বলেন তখন ক্ষোভে মুজিবকন্যা বলেছিলেন, “আমাকে গুলি করে গণভবনেই কবর দিয়ে দিন।” বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের হাসিনার বিরুদ্ধে চলা মামলার শুনানি এমনটাই জানালেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন হাসিনা। বোন রেহানাকে নিয়ে তড়িঘড়ি চলে আসেন ভারতে। দেশ ছাড়ার পর থেকে দিল্লিতে বসেই একাধিকবার বার্তা দিতে দেখা গিয়েছে হাসিনাকে। রেহানা-সহ তাঁকে খুনের ষড়যন্ত্র ফাঁস করেছিলেন তিনি। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো সূত্রে খবর, গতকাল মঙ্গলবার আদালতে তাজুল ইসলাম জানান, ৪ আগস্ট রাতে গণভবনে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসেছিলেন হাসিনা। উপস্থিত ছিলেন সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ আধিকারিকরাও। তখন নানা তর্ক-বিতর্ক হয়। পরের দিন সকালে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ তাঁর হাতের বাইরে বেরিয়ে যায়। ৫ আগস্ট হাসিনাকে পদত্যাগের কথা বলেছিলেন পার্লামেন্টের স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী। সেনাপ্রধানও ইস্তফা দেওয়ার কথা বললে তখন রেগে গিয়ে হাসিনা বলেছিলেন, “আমাকে গুলি মেরে গণভবনেই খবর দিয়ে দাও।”
উল্লেখ্য, গত বছরে জুলাই মাসে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের দাবিতে উত্তাল হয়ে বাংলাদেশ। আন্দোলনে নামে ছাত্ররা। প্রাণ ঝরে অন্তত ৬০০ জনের। এই ছাত্র আন্দোলনকে হাতিয়ার করেই ছক কষা হয়েছিল হাসিনাকে গদিচ্যুত করার। অনেক রিপোর্টেই দাবি করা হয়, পাকপন্থী জামাত উসকানি দিয়েছে আন্দোলনে। পাশাপাশি কলকাঠি নেড়েছে আমেরিকা, চিন। তবে ৫ আগস্ট শেষ মুহূর্তে পর্যন্ত ইস্তফা দিতে রাজি ছিলেন না হাসিনা। একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, সেদিন মাত্র ৪৫ মিনিটের নোটিসেই নাকি বাংলাদেশ ছাড়তে বাধ্য হন মুজিবকন্যা। জাতির উদ্দেশে ‘শেষ বার্তা’ দেওয়ার অনুমতি পর্যন্ত তাঁকে দেয়নি ফৌজ। কারণ ততক্ষণে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ‘গণভবনে’র দিকে রওনা দিয়েছে উন্মত্ত জনতা। যাঁদের নিয়ন্ত্রণ করা সেনাবাহিনীর পক্ষে সম্ভব ছিল না। কার্যত প্রাণ বাঁচাতে সেদিন বোনকে নিয়ে দেশ ছাড়েন হাসিনা।
এই মুহূর্তে মুজিবকন্যার প্রত্যর্পন নিয়েই দিল্লি ও ঢাকার মধ্যে টানাপড়েন তুঙ্গে। কারণ হাসিনার বিরুদ্ধে একাধিক গণহত্যার মামলা-সহ শতাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। জারি করা হয়েছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও। তাই মুজিবকন্যাকে ফেরত চেয়ে দিল্লিকে চিঠি পাঠায় মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার। যার কোনও উত্তর দিতে চায়নি বিদেশ মন্ত্রক। পরে হাসিনার ভিসা বাতিল করে দেয় ঢাকা। কিন্তু তাঁর দিল্লিতে থাকার মেয়াদ বাড়িয়ে দেয় ভারত। এনিয়ে দুদেশের মধ্যে সংঘাতের আবহ আরও বাড়ে।