অভিষেক চৌধুরী, কালনা: শিশুশ্রম ও কিশোরদের উপর অমানবিক অত্যাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার হল গুজরাটের ব্যবসায়ী। বেতন ও মোবাইলের লোভ দেখিয়ে গুজরাটে নিয়ে গিয়ে কিশোরদের উপর অমানবিক অত্যাচারের ঘটনায় কালনা থানার পুলিশ গ্রেপ্তার করল মূল অভিযুক্তকে। ধৃতের নাম অজিত মোল্লা ওরফে হাপাল। তার বাড়ি কালনার শিকারপুরে। ধৃতকে বুধবার কালনা আদালতে তোলা হয়। বিচারক তাকে ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। পুলিশ জানায়, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।
কালনার গ্রামের গরিব খেতমজুর পরিবারগুলির অসহায়তার সুযোগে অর্থ ও মোবাইল দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে কিশোরদের গুজরাটে নিয়ে গিয়ে অমানবিক অত্যাচার চালানোর অভিযোগ ওঠে ৩৬ বছর বয়সি অজিত মোল্লা ওরফে হাপালের বিরুদ্ধে। সেখানে থাকা সিটি গোল্ড গয়নার দোকানে শিশুশ্রমের বিনিময়ে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকার মুনাফা লাভ করত এই হাপাল। অভিযোগ, মাসে পাঁচ-ছয় হাজার টাকা পারিশ্রমিক দেওয়ার নাম করে নিয়ে গেলেও তা তাদের মিলত না। ঠিকমতো তাদের খেতে এমনকী ঘুমোতেও দিত না বলে অভিযোগ। কুড়ি-বাইশ ঘন্টা ধরে কাজ করার পরেও তার পছন্দমতো কাজ না হলে কপালে জুটত লোহার রড দিয়ে মারধর ও আগুনের ছ্যাঁকা। সেইসব কিশোরদের খোঁজ নিতে পরিবারের লোকজন ফোন করলে হাপাল তাদের পাশে দাঁড়িয়ে থাকত। অত্যাচারের ঘটনা কোনোভাবেই যাতে কেউ জানতে না পারে সেজন্য তাদের প্রাণে মারার হুমকিও দেওয়া হত বলেই অভিযোগ।
এভাবে বছরের পর বছর ধরে এলাকা থেকে কিশোরদের অর্থ ও মোবাইলের ‘ফাঁদে’ ফেলে ‘শিকার’ ধরার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। এই কারণে বছরে দু-তিনবার সে কালনার শিকারপুর গ্রামের বাড়িতে আসত। এছাড়া অন্য সময়ে এজেন্ট মারফত মোটা টাকার লোভ দেখিয়ে কিশোরদের নিয়ে যেত। কয়েকদিন আগে সেখান থেকে মরণাপন্ন এক কিশোর কালনার বাড়িতে ফিরে আসতেই সেইসব ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। সেখানে গিয়ে সাতবছর আগে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া আরও এক কিশোরের পরিবার তার বিরুদ্ধে কালনা থানায় অভিযোগ জানায়। তারপরই এক কিশোরের উপর অত্যাচারের অভিযোগ সামনে আসে। কালনা থানার পুলিশ রাজকোটে গিয়ে ঘটনার তদন্তে নামে। অভিযুক্ত হাপালকে গ্রেপ্তার করে। কালনা এসডিপিও রাকেশ কুমার চৌধুরী বলেন, “গুজরাট পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া ওই অভিযুক্তকে ওখানকার আদালতের অনুমতি নিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। কালনায় নিয়ে আসা হয়েছে। তাকে আদালতের নির্দেশে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। ”