বাঙালি ফুটবল-পাগল। অথচ ডার্বিতে খাঁটি বাঙালি স্কোরার এখন বিলুপ্তপ্রায়। সেই অভাবের সংসারে আশার আলোর নাম সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার কল্যাণীর ডার্বিতে ম্যাচ সেরা হলেন আসানসোলের এই বঙ্গসন্তান। মাঠ ছাড়ার আগে বড় ম্যাচের নতুন নায়ক একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন ‘সংবাদ প্রতিদিন‘-কে। সেখানে নিজের লাল-হলুদ স্বপ্ন থেকে মোহনবাগানের দিমিত্রির সঙ্গে দ্বন্দ্ব-সব নিয়েই অকপট সায়ন। শুনলেন শিলাজিৎ সরকার।
প্রশ্ন: ডার্বিতে করা গোল মা-বাবাকে উৎসর্গ করলেন। ওঁদের সঙ্গে কথা হয়েছে ম্যাচের পর?
সায়ন: মা-বাবা খেলা দেখেছে, গোলটাও দেখেছে। ওরা খুব খুশি। কাল কলকাতা আসছে। একসঙ্গে সারাদিন ঘুরব।
প্রশ্ন: ডার্বিতে গোলের অনুভূতি কেমন?
সায়ন: দুর্দান্ত। তবে ডার্বিতে গোল করে মরশুমের একটা লক্ষ্য পূরণ হল সবে। এখনও অনেকটা পথ যেতে হবে। আমি আবার সিনিয়র দলে জায়গা করে নিতে চাই। সেজন্য কলকাতা লিগে ভালো খেলার উপর জোর দিচ্ছি। গতবার লিগে পাঁচটা গোল করেছিলাম। এবার তার থেকে একটা হলেও গোল বেশি করতে চাই। সঙ্গে যত বেশি সম্ভব অ্যাসিস্ট।
প্রশ্ন: কল্যাণীতে তো দিনটা স্বপ্নের মতোই কাটল আপনার জন্য….
সায়ন: (প্রশ্ন শেষের আগেই) আমার সব আশা কিন্তু পূরণ হয়নি।
প্রশ্ন: যেমন?
সায়ন: আমি ভেবেছিলাম গোপাল ভাঁড়ের সঙ্গে নাচব। গোপাল ভাঁড় আমার খুব প্রিয়। দুপুরে-রাতে খাওয়ার সময় গোপাল ভাঁড়ের ভিডিও দেখি। ম্যাচ শেষে ভেবেছিলাম একসঙ্গে নাচব। সেটা জেসিন আগেই করে ফেলল। তাছাড়া পায়ে ব্যথাও করছিল তখন।
প্রশ্ন: এখন পা কেমন আছে আপনার?
সায়ন: এখন একটু ঠিক আছে। বরফ দিয়ে রাখছি পায়ে। যেভাবেই হোক পরের ম্যাচের আগে ফিট হতে হবে। কারণ এই ম্যাচগুলোই আমাকে ফের সিনিয়র দলে ফেরাতে পারে।
প্রশ্ন: যদি এখনই সিনিয়র দলে ডাক আসে, মানসিকভাবে তৈরি আছেন?
সায়ন: ইস্টবেঙ্গলের জার্সিতে আমি সব জায়গায় খেলার জন্য তৈরি থাকি। যেখানেই খেলি না কেন, নিজের সেরাটা দেওয়াই লক্ষ্য থাকে। তবে আমি জানি, সিনিয়র দলের হয়ে খেলতে হলে আরও উন্নতি করতে হবে। সেজন্য একবেলা দলের সঙ্গে প্র্যাকটিস করার পর অন্যবেলায় একা অনুশীলনে যাই। সেখানে নিজের স্কিল উন্নত করার চেষ্টা করি। তাছাড়া নেইমারের ভিডিও দেখে অনেক কিছু শেখার চেষ্টাও করি। নিজের খেলার ভুলভ্রান্তি শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করি। ম্যাচে যেমন একটা মুভ আমি মন মতো করতে পারিনি। বল নিয়ে দৌড়ে বের হব নাকি পাস দেব সেটা নিয়ে দ্বিধায় ছিলাম। এবার টিম বাসে হোস্টেলে ফেরার সময় ইউটিউবে নেইমারের ভিডিও দেখে সেটা ক্লিয়ার করার চেষ্টা করব।
প্রশ্ন: সিনিয়র দলের ডার্বিতে দিমিত্রি পেত্রাতোসের মুখোমুখি হলে কী করবেন?
সায়ন: দিমিত্রি সেদিন আমাকে ওভাবে ধাক্কা মারবে ভাবতে পারিনি। তাছাড়া আমি তো কিছু করিওনি ওকে। ফলে ধাক্কা মারার কোনও কারণ ছিল না। তবে ফের মুখোমুখি হলে আমি ওর সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করব না। আমি ওকে স্কিলে হারাতে চাই।
প্রশ্ন: কলকাতা লিগের মাঝে আপনি ইস্টবেঙ্গলে এলেন কীভাবে?
সায়ন: সেবার কালীঘাট এমএসের হয়ে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ভালে খেলেছিলাম। সেটা নীতু স্যরের (দেবব্রত সরকার) নজরে পড়ে। উনি আমাকে অজিত স্যরের থেকে চেয়ে নিয়েছিলেন। তারপরই সেবছর ইস্টবেঙ্গলে সই করি।
প্রশ্ন: ডার্বিতে গোলের স্বপ্ন তো সবারই থাকে। সেটা পূরণ হল। আপনার কাছে স্বপ্নের ম্যাচ কোনটা?
সায়ন: আমার কাছে স্বপ্নের ম্যাচ অবশ্যই ভারতের জার্সিতে খেলা। আমি চাই, ভবিষ্যতে একদিন আমার করা গোলেই ম্যাচ জিতে ভারত বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন করবে। এর থেকে বড় কিছু হতে পারে না।