সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গণবিদ্রোহের আগুনে জ্বলছে নেপাল। চাপের মুখে সোমবার গভীর রাতে সরকার সোশাল মিডিয়া থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও দেশের তরুণ তুর্কীদের আন্দোলনে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি রাজধানী কাঠমান্ডু-সহ একাধিক শহরে। এই আবহে ব্যাপক জনরোষের মুখে পড়ে ইস্তফা দিয়েছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি। পাশাপাশি, পদত্যাগ করেছেন উপপ্রধানমন্ত্রী-সহ নেপালের আরও ৯ মন্ত্রী। কিন্তু শুধুমাত্র সোশাল মিডিয়ায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের জেরেই কি নেপালে ছড়িয়ে পড়েছে বিদ্রোহের আগুন নাকি এর নেপথ্যে রয়েছে আরও কোনও কারণ?
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ওলি সরকারের বিরুদ্ধে আগে থেকেই দুর্নীতি-সহ একাধিক অভিযোগ ছিল। ফলে ক্ষুদ্ধ ছিলেন সেদেশের সাধারণ মানুষ। কিন্তু সম্প্রতি সেদেশে ফেসবুক, ইউটিউব, এক্স-সহ প্রায় সব ধরনের সোশাল মিডিয়া নিষিদ্ধ হওয়ায় আগুনে ঘি পড়ে। যার ফলেই আন্দোলনে নামে সেদেশের তরুণ প্রজন্ম। এক নেপালি যুবকের কথায়, “দেশজুড়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতি, স্বজনপোষণ এবং আর্থিক বৈষম্যের কারণে জনগণ হতাশ এবং ক্ষুদ্ধ ছিল। সোশাল মিডিয়ায় নিষেধাজ্ঞা আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ ছিল মাত্র।”
নেপালের একাধিক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে বহুদিন ধরেই স্বজনপোষণের অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, মন্ত্রী এবং সরকারি আধিকারিকদের ছেলেমেয়েদের বিলাসী জীবনে ক্ষুব্ধ নেপালবাসী। তাঁদের বক্তব্য, যেখানে দেশের সাধারণ মানুষ অর্থিক সমস্যায় ভুগছেন, সেখানে মন্ত্রী এবং সরকারি আধিকারিকরা ক্রমেই ধনী হচ্ছেন। দেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য চরম আকার ধারণ করেছে। অন্যদিকে, নেপালের কর্মসংস্থানের হারও যথেষ্ট খারাপ। সূত্রের খবর, দেশে কর্মসংস্থানের অভাবে প্রতিদিন বহু তরুণ বিদেশে পাড়ি দিচ্ছেন। এখানেই শেষ নয়। নেপালের জনগণের একাংশের অভিযোগ, দেশের সমস্যাগুলি নিয়ে সোশাল মিডিয়া সোচ্চার হলে, তা পছন্দ হয়নি সরকারের। তাই মানুষের কণ্ঠরোধ করতেই সোশাল মিডিয়াতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ওলি সরকার।
প্রসঙ্গত, গত ৪ সেপ্টেম্বর নেপালে নিষিদ্ধ হয় ফেসবুক, ইউটিউব, এক্স-সহ প্রায় সব ধরনের সোশাল মিডিয়া। সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা নেপাল প্রশাসনের সঙ্গে সরকারি ভাবে নথিবদ্ধ হয়নি। সাতদিনের ডেডলাইন দিলেও তা মেনে চলেনি ২৬টি সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের একটিও। তাই এই কড়া সিদ্ধান্ত নেয় কাঠমান্ডু সরকার। এমন সিদ্ধান্তেই বেজয় ক্ষেপেছে নেপালের ‘জেন জি’। সোমবার হাজার হাজার প্রতিবাদী কাঠমান্ডুর রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ দেখান। রাতের মধ্যে তা হিংসাত্মক চেহারা নেয়। এরপর মঙ্গলবার আন্দোলনের ঝাঁজ আরও বাড়ে। এই পরিস্থিতিতে জনরোষের মুখে পড়ে ইস্তফা দিতে বাধ্য হন ওলি।