সুনীপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: স্কুলচত্বরে ঘুরছে হাতি। ঢুকে পড়ছে স্কুলঘরের ভিতরে। টেনে বার করছে চাল, ডাল, মুড়ি। ভেঙে ফেলছে ক্লাসরুমের চেয়ার, টেবিল বেঞ্চ। সাম্প্রতিক অতীতে ঝাড়গ্রামে বেশ কিছু স্কুলে এই ঘটনা দেখা যায়। হাতির হানার আতঙ্কে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে পড়ুয়ারাও। বিশেষজ্ঞদের মতে খাবারের টানে দলবদ্ধ হাতি হানা দিচ্ছে স্কুলে। এবার জঙ্গললাগোয়া স্কুলগুলিকে হাতির হানা থেকে বাঁচাতে সৌরবিদ্যুৎচালিত বেড়া দেওয়া হচ্ছে বনদপ্তরের থেকে। প্রাথমিক পর্যায়ে ১০টি হাতি অধ্যুষিত এলাকার স্কুল ক্যাম্পাসে এই বেড়া দেওয়া হবে বলে খবর।
ইতিমধ্যে ঝাড়গ্রাম শহর লাগোয়া গড়শালবনি এলাকায় বিকাশ ভারতী ওয়েল ফেয়ার সোসাইটির অধীন অনাথ আশ্রম শিশু বিকাশ কেন্দ্রের চত্বর সৌরবিদ্যুৎচালিত বেড়া দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। অনাথ আশ্রম ক্যাম্পাসটির প্রায় সাতশো মিটার বেড়া দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, এখানেই ১৪ জুন তিনটি হাতি ঢুকে পড়েছিল। ক্যাম্পাসজুড়ে তাণ্ডব চালানোর পাশাপাশি আশ্রমের রান্নাঘরে ঢুকে চাল, মুড়ি টেনে বার করে খেয়েছিল। প্রায় ঘণ্টা তিনেক হাতির তাণ্ডবে তীব্র আতঙ্কে ছিলেন আশ্রমের আবাসিকরা। এই ঘটনার পরেই ঝাড়গ্রাম বনদপ্তরের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে জঙ্গল লাগোয়া স্কুলগুলিকে সৌরবিদ্যুৎচালিত বেড়া দিয়ে ঘিরে ফেলা হবে। বিকাশ ভারতী আশ্রমটির পরে এবার লোধাশুলি রেঞ্জের চণ্ডী ২ বিটের জারুলিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বেড়া দেবে বনদপ্তর। যেসব স্কুলের এই বেড়া প্রয়োজন, যেন বনদপ্তরের কাছে আবেদন করা হয়। সেই বার্তাও দেওয়া হয়েছে দপ্তরের তরফে।

উল্লেখ্য, হাতি ও মানুষের সহবস্থান বজায় থাকা, ক্ষয়ক্ষতি-মানুষের প্রাণহানি যাতে না হয়, সেজন্য বনদপ্তর একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। সৌরবিদ্যুৎচালিত বেড়ার মাধ্যমে জঙ্গল লাগোয়া গ্রাম ঘিরে ফেলা এবং বেড়া সংরক্ষণের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। ঝাড়গ্রাম, মানিকপাড়া, গিধনি রেঞ্জের বিভিন্ন গ্রাম এবং জঙ্গল ধরে বেড়ার জন্য ৭০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। ঝাড়খণ্ড সীমানা এলাকার জামবনি ব্লকের ৪০ কিমি জঙ্গল ঘেরার জন্য ৬০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ পেয়েছে বনদপ্তর। জামবনি ব্লকের গিধনি রেঞ্জের প্রায় সাড়ে চার হাজার হেক্টর জঙ্গল ঘিরে খাদ্য, জলের পর্যাপ্ত সংস্থান করে হাতির দলকে কয়েক মাস আটকে রাখার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।
এই বিষয়ে ঝাড়গ্রামের ডিএফও উমর ইমাম বলেন, “বিকাশ ভারতী হোমটিতে সৌরবিদ্যুৎচালিত বেড়া দেওয়া হয়েছে। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে আরও ১০টি স্কুল ক্যাম্পাসে একইভাবে বেড়া দেওয়া হবে। হাতি অধ্যুষিত এলাকার মানুষজন আবেদন করলে আমরা সেই জায়গার স্কুলেও একইরকমভাবে বেড়া করে দেব।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন