ক্রেতা নেই, জলের দরে বিকোচ্ছে বেগুন-বাঁধাকপি! বিপাকে উত্তরবঙ্গের চাষিরা

ক্রেতা নেই, জলের দরে বিকোচ্ছে বেগুন-বাঁধাকপি! বিপাকে উত্তরবঙ্গের চাষিরা

জ্যোতিষ খবর/ASTRO
Spread the love


সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ব্যুরো: দশ টাকা কেজি দাম হেঁকে গলা চড়াচ্ছেন বিক্রেতারা। আলু, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মূলো কী চাই। কিন্তু এত সস্তা বাজারেও খদ্দের মিলছে না! নিরুপায় বিক্রেতারা আরও কম দামে সবজি ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। অতিফলনের জেরে উত্তরের বিভিন্ন শহরের এখন এটাই ছবি। পাইকারি বাজারের অবস্থা আরও শোচনীয়।কৃষকদের আক্ষেপ খেতের টাটকা নিয়ে সাতসকালে হাজির হয়েও লাভ হচ্ছে না। কেউ দরদাম করছে না।

কে বলবে পুজোর মরশুমে আলুর দাম ৬০ টাকা কেজি শুনে ঢোক গিলতে হয়েছিল ক্রেতাদের। মূলো, বেগুনের দাম চলেছিল ৫০ টাকা কেজি! শসা ও টম্যাটো ৮০ টাকা। স্যালাড খেতে দশবার ভাবতে হয়েছিল ভোজন রসিক বাঙালিকে! শীতে আলু, পিয়াজ কলি ভাজা, সিম পাতুড়ি প্রত্যেকের প্রিয়। কিন্তু পছন্দের মেনু হলে হবে কি! পুজোর
পরও দামের জন্য পাতে তোলাই দায় হয়েছিল। পিয়াজ কলির দাম চড়েছিল ১২০ টাকা কেজি। সিম ৬০ টাকা। পালং, লেটুস, রাই-সহ প্রতিটি শাক ৬০ টাকা কেজি। সেই ছবি পালটে উত্তরের বাজারে এখন প্রায় প্রতিটি সবজির দাম নেমেছে দশ টাকা কেজিতে। সেটাও কেনার খদ্দের মিলছে না। ওই পরিস্থিতিতে বেশি বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।

পুজোর আগে থেকে বিক্ষিপ্তভাবে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির জেরে উত্তরে খেতেই সবজির চারা নষ্ট হয়েছে। আলু চাষ পিছিয়েছে। ওই লোকসান সামাল দিতে ধারদেনা করে অনেকেই ফুলকপি, বাঁধাকপি, মটরশুঁটি, বিনস, বেগুন-সহ রকমারি সবজি চাষের ঝুঁকি নিয়েছেন। এখন বিঘার পর বিঘা জমি সবজিতে ভরে আছে। আশা ছিল লাভ হবে। কিন্তু মুখে হাসি ফোটা তো দূরের কথা। কেউ সবজি চাষে খরচের টাকা তুলতে পারছেন না। ধারের টাকা কেমন মেটাবেন এখন সেই চিন্তায় ঘুম নেই কৃষকদের।

জলপাইগুড়ির ক্রান্তি এলাকার কৃষক আফসার আলি ও মনসুর আলি জানান, আলুতে লোকসান হয়েছে। ভেবেছিলেন সবজি চাষ করে কিছু লাভ হবে। কিন্তু এখন জলের দামে সবজি ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। পঞ্চাশ টাকা বস্তার ফুলকপি, বাঁধাকপিও কেউ নিচ্ছে না।

শিলিগুড়ি নিয়ন্ত্রিত বাজারের পাইকারি সবজি বিক্রেতা পরেশ দাসের কথায়, “বাজারে সবজির আমদানি অতিরিক্ত হয়েছে। তাই দাম নেমেছে। দামে সস্তা হলেও খুচরো বিক্রেতারা খুব বেশি কিনতে পারছেন না। কারণ, দিনের মধ্যে বিক্রি না-হলেই মুশকিলে পড়ছেন তাঁরা। শিলিগুড়ি শহরের ফুলেশ্বরী বাজারের খুচরো সবজি বিক্রেতা শ্যামল সাহা জানান, এখন সবজি জলের দরে সবজি বিক্রি হচ্ছে। মূলো, বেগুন সবই সস্তা। দাম কম তাই বেশি বিক্রি হবে এমন তো নয়। মানুষ কত সবজি খাবে?

কৃষিদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, পাহাড়, তরাই, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার জেলা মিলিয়ে উত্তরে সবজি চাষের এলাকা প্রায় ২১ হাজার বিঘা। এবারও ফালাকাটা, ধূপগুড়ি, ময়নাগুড়ি, ফাসিদেওয়া, খড়িবাড়ি, জলপাইগুড়ি সদর, রংধামালি, গজলডোবা, রাজগঞ্জ, মালবাজার, পাহাড়ের পেডংয়ে শীতের সবজি চাষ সময় মতো শুরু হয়েছিল। কিন্তু আচমকা বৃষ্টির জন্য পুজোর আগে কিছুই রক্ষা পায়নি। বিস্তীর্ণ এলাকার চাষের মাঠ জলে তলিয়ে ছিল। ডিসেম্বরের শুরু থেকে বাজারের পরিস্থিতি বেসামাল হয়েছে। কার্যত লাফিয়ে বেড়ে চলা আনাজপাতির দামে দিশাহারা দশা হয়েছিল উত্তরের সাধারণ মানুষের। এরপর নতুন চাষ শুরু হয়। ভালো আবহাওয়া মিলতে সেই উৎপাদন এতটাই বেশি হয়েছে যে এখন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *