অর্ণব আইচ: ক্যান্সারের অব্যর্থ ওষুধের উপকরণ ‘কোলা নাট’। আর এই কোলা নাটের ব্যবসায় লগ্নি করতে পারলে মুনাফা হবে বিপুল টাকা। দিল্লিতে বসেই এই সাইবার জালিয়াতির ফাঁদ পেতেছিল বিদেশি জালিয়াতরা। ১ কোটি ১০ লক্ষের বেশি টাকার জালিয়াতির ঘটনায় আগেই পাঞ্জাব থেকে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিল আফ্রিকার তিন জালিয়াত। এবার দিল্লি থেকে এক মহিলা-সহ নাইজেরিয়ার তিন জালিয়াতকে গ্রেপ্তার করলেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। ধৃতদের থেকে প্রচুর মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ ও কিছু নথিও উদ্ধার হয়েছে।
যে বিদেশি জালিয়াতরা উত্তর ভারতের বিভিন্ন জায়গায় গা ঢাকা দিয়ে দেশজুড়ে জালিয়াতি করে চলেছে, তাদের ভিসার মেয়াদ ফুরিয়েছে কি? তা খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা। গোয়েন্দাদের মতে, শুধু কোলা নাট লগ্নির নতুন ‘মোডাস অপারেন্ডি’তে দক্ষিণ কলকাতার টালিগঞ্জের বাসিন্দার কাছ থেকেই যে এই সাইবার জালিয়াতরা টাকা হাতিয়েছে, এমন নয়। সাইবার জালিয়াতির অন্যান্য পদ্ধতিতেও অনেকের কাছ থেকে ধৃতরা টাকা হাতিয়েছে। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এইসব কাজ হয়েছে বলে মত গোয়েন্দাদের।
পুলিশ সূত্রে খবর ধৃত মহিলা নাইজেরিয়ানের নাম পিটার মার্সি ওলাউমি ওরফে সোফিয়া। এ ছাড়াও কিমকিউ কাওইলিংগস ও আলেকজান্ডার সাকসেস ডিভাইন নামে ধৃত বাকি দু’জনের বাড়ি নাইজেরিয়ার ডেটা রাজ্যে। তারা তিনজনই দিল্লির নিলোঠির চান্দের বিহারের একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে ডেরা বাঁধে। কেউ নিজেকে ব্যবসায়ী, আবার কেউ নিজেকে পড়ুয়া বলে পরিচয় দেয়। তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ছিল আফ্রিকার জিম্বাবোয়ের বাসিন্দা তিন সাইবার জালিয়াতের। ওই তিন বিদেশি পাঞ্জাবে গা ঢাকা দিয়েছিল। এই ঘটনায় পাঞ্জাবের মোহালিতে হানা দিয়ে তাদের আগেই পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
গোয়েন্দারা তদন্তে জানতে পারেন যে, দু’টি ইংল্যান্ডের হোয়াটস অ্যাপ নম্বর জালিয়াতরা ব্যবহার করে। যে মোবাইলের মাধ্যমে তারা সেগুলি ব্যবহার করে, সেগুলি নাইজেরিয়। তবে ভারতীয় নম্বরের লিংকে দিল্লির সার্ভার ব্যবহার করে যে ওই নম্বরগুলি ব্যবহার করা হয়, সেই ব্যাপারে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হন। তারা অনলাইন কলও ব্যবহার করে। তাদের জেরা করে ও মোবাইলের সূত্র ধরে সঙ্গী তিন নাইজেরিয়র সন্ধান মেলে। তাদের কাছ থেকে ১২টি স্মার্ট ফোন, তিনটি কি-প্যাড মোবাইল, একটি রাউটার, একটি ল্যাপটপ, ওই বিদেশি ওষুধ সংস্থা ও ‘হু’র ভুয়ো নথি উদ্ধার হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, একটি বিদেশি নামি ওষুধ সংস্থার নাম করে টালিগঞ্জের ওই ব্যবসায়ীকে অনলাইনে যোগাযোগ করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, ক্যানসারের ওষুধের উপকরণ ‘কোলা নাট’ লগ্নি করে তিনি বিপুল টাকা রোজগার করতে পারেন। তাঁকে ওই সংস্থা ও ‘হু’-র প্রচুর ভুয়ো নথি পাঠানো হয়। সাইবার জালিয়াতরা নিজেদের হেমচন্দ্র সুব্বা নামে এক ব্যক্তি বলে পরিচয় দিয়ে টালিগঞ্জের ওই ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাদের পাতা ফাঁদে পা দেন ওই ব্যবসায়ী। তিনি বেশ কয়েক দফায় ব্যবসায়ী বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১ কোটি ১০ লক্ষ ৪১ হাজার ২৫০ টাকা পাঠান। সেই টাকা সাইবার জালিয়াতরা হাতিয়ে নেয়। তারপরই যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ওই ব্যবসায়ী পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দারা দিল্লি থেকে ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। ধৃতদের কলকাতায় নিয়ে এসে জেরা করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।