কোন হাসপাতালে ভর্তি হবে চন্দন? সবুজ সংকেত দিয়েছিল শেরুই, তদন্তে সামনে নয়া তথ্য

কোন হাসপাতালে ভর্তি হবে চন্দন? সবুজ সংকেত দিয়েছিল শেরুই, তদন্তে সামনে নয়া তথ্য

জীবনযাপন/LIFE STYLE
Spread the love


সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: প্রেমে বাধা এলেই খালাস! বিহারের গ্যাংস্টার চন্দন মিশ্র খুনে অন্যতম মূলচক্রী পুরুলিয়া সংশোধনাগারে থাকা শেরু সিং-র মনস্বত্ব এমনই। এই ঘটনায় ধৃতদেরকে জেরা করে এই তথ্যই হাতে পেয়েছে বিহার পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স। অপরাধ জগতে হাত পাকানো ওঙ্কারনাথ সিং ওরফে শেরুর কিলিং শুরু হয় বিহারের এক বিচারককে ‘খতম’ করে। ওই বিচারকের ভাইঝির সঙ্গে প্রণয় ছিল শেরুর। কিন্তু বিচারকের পরিবার বাধা হয়ে দাঁড়ালে তাঁকেই সরিয়ে দেয় শেরু সিং। তখন অবশ্য নিহত গ্যাংস্টার চন্দন মিশ্রের সম্পর্কীয় বোনের সঙ্গে প্রেমালাপ হয়নি শেরুর।

এখন অবশ্য চন্দনের সেই বোনই লাকি মিশ্র শেরুর সহধর্মিনী। শেরুর সঙ্গে চন্দনের সম্পর্কীয় বোনের প্রেম মিশ্রাজী মেনে না নেওয়াতেই এই দুই গ্যাংস্টারের পথ বদলে যায়। আর তখন থেকেই অর্থাৎ প্রায় তিনবছর আগে শেরুর চোখে ‘দুশমন’ হয়ে যায় চন্দন। তার অসুস্থতা সারাতে এমন একটি হাসপাতালে চন্দনকে ভর্তি করানো হয়। যাতে সহজেই চন্দনকে একেবারে সরিয়ে দিতে পারে শেরু। তাই তার কথাতেই চন্দনের ১৫ দিনের প্যারোলে পাটনার ওই বেসরকারি হাসপাতালে নিহত গ্যাংস্টারকে ভর্তি করানো হয়। বিহার এসটিএফর হাতে এই তথ্য আসায় তারা নিজেরাই কপাল চাপড়াচ্ছেন। পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে, এই গ্যাংস্টার খুনে সর্ষের মধ্যেই ভূত! আসলে দুই গ্যাংস্টারের পথ আলাদা হতেই কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার কাজ শুরু করে বিহার পুলিশ! এই ঘটনার তদন্তে এমন তথ্যই হাতে পেয়ে রীতিমতো চমকে যাচ্ছে বিহার এসটিএফ। একইভাবে পুরুলিয়া শহরের সেনকো লুটে বিহারের আদর্শনগর বেউড় জেলে শেরু যে ডাকাতির অপারেশন সাজিয়েছিল। তা অনেকাংশেই বিহারের ওই সংশ্লিষ্ট দপ্তর জানত। এই তথ্য আগেই হাতে পেয়েছে রাজ্য পুলিশ।

আসলে ‘ক্রিমিনাল ইজ হিরো’! বিহারজুড়ে এমন কথা চাউর রয়েছে। সমস্তিপুর, হাজিপুর, বক্সার, রৌতাস, পাটনা, আরা এলাকায় একচ্ছত্র অধিপতি চালিয়েছিল এই শেরু সিং। ২০১১ সালের ২১ আগস্ট চন্দন ও শেরু মিলে বক্সারের চুন ব্যবসায়ী রাজেন্দ্র কিশোরীকে খুন করে। শেরু শুটার হওয়ায় নিম্ন আদালত তাকে ফাঁসির সাজা শোনায়। কিন্তু উচ্চ আদালতে গেলে তা রদ হয়ে যায়। একজন দুষ্কৃতী হয়েও প্রশাসন থেকে বিচারব্যবস্থার অন্দরে কতখানি মজবুত নেটওয়ার্ক তাঁর। তা হদিস পেয়ে হতবাক এই রাজ্যের পুলিশ। তাই তো শেরু জেলে বসেই খুন, ডাকাতির মতো অপারেশনের নকশা সাজাতে পারেন। যেদিন আদালতে তার হাজিরার দিন আসে, সেদিন অন্যান্য কয়েদিদের ভুরিভোজ দেয় বলে অভিযোগ।

বিহারের আদর্শনগর জেলে থাকার সময় তার আদালতে ওঠার দিন এলেই ওই ওয়ার্ডে থাকা সমস্ত কয়েদিদেরকে রীতিমতো বিরিয়ানি খাওয়াত শেরু। ফোন পে থেকে ওই খাবারের অর্ডার চলে যেত ফুড অ্যাপ সংস্থার ঘরে। পুরুলিয়ার জেলে বসে শেরু সিং যে এমন কাজ করছে না তা নয়! গ্যাংস্টার চন্দন মিশ্র খুনই তার প্রমাণ। কয়েদিদের রসেবশে রাখার চেষ্টা করে শেরু। কিন্তু কারারক্ষীদের নজর এড়িয়ে ওই কাজ করতে গিয়ে ওই সংশোধনাগারে ধাক্কা খেতে হয় ওই বক্সারের কিংকে!

বিহার এসটিএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, নিহত চন্দনের ১৫ দিনের প্যারোল মঞ্জুর হওয়ার পর তার বিশ্বস্ত অনুচরের সঙ্গে চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে মতামত নেয়। কিন্তু চন্দনের ওই বিশ্বস্ত যে কখন শেরুর দলে নাম লিখিয়েছে, তা জানত না নিহত গ্যাংস্টার। ফলে একসময় চন্দনের ওই বিশ্বস্ত অনুচরেরও খোঁজ শুরু করেছে বিহার পুলিশ। অভিযোগ শেরু ধৃত তৌসিফ রাজা ওরফে বাদশার কাছে জানতে চেয়েছিল, কোন হাসপাতালে খুব সহজে এই কাজটা করা যাবে! ধৃত বাদশা-ই জানিয়েছিল পাটনার ওই বেসরকারি হাসপাতালের কথা। কারণ শেরুর কাছ থেকে সুপারি পাওয়া বাদশার জন্ম, সেইসঙ্গে বড় হয়ে ওঠা পাটনার ওই এলাকাতেই।

তাছাড়া এই গ্যাংস্টার খুনের কিছুদিন আগে বেসরকারি হাসপাতালেই বাদশার এক বন্ধু সুস্থ হয়ে ভর্তি ছিলেন। যাকে দেখতে বাদশা সেখানে একাধিকবার যায়।ওই হাসপাতালেই চন্দনকে ভর্তি করানোর কথা বাদশা শেরুকে জানায় বলে বিহার পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। আর তারপরেই ‘দুশমন’কে সরিয়ে দেওয়ার নকশা শেরুর। শেরুর পাশাপাশি বিহারের গয়া জেলে বন্দি তার একেবারে বিশ্বস্ত সহযোগী হিরো ওরফে অমিত সিংকেও জেরা করবে বিহার এসটিএফ। কারণ, চন্দন সম্প্রতি একটি রিলস বানিয়ে বিহারে নিজের ক্ষমতা জাহির করে। আর তাকে সরিয়ে দেওয়ার পর পাল্টা রিলস বানাই হিরো ওরফে অমিত সিং। যা ভাইরাল হয়। আর তাতেই এই ঘটনার তদন্তকারীদের নজরে পড়ে যায় গয়ার ওই বিচারাধীন বন্দি।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *