নব্যেন্দু হাজরা: শুধু কবি সুভাষ স্টেশনই নয়। রাইটসের দেওয়া সমীক্ষা রিপোর্ট ধরেই আরও একাধিক মেট্রো স্টেশনের পরিকাঠামো বদল করা হতে পারে। মাটির উপরের পাশাপাশি সুড়ঙ্গের ভিতরের একাধিক স্টেশনেরও সংস্কার করা হবে। ইতিমধ্যেই শহরের লাইফলাইনের সুরক্ষায় রাইটসকে দিয়ে সমীক্ষা করিয়েছে মেট্রো কর্তৃপক্ষ। সেই রিপোর্টও জমা পড়েছে মেট্রোভবনে। এবার দিল্লির রেলবোর্ডে তা পাঠানো হবে। সেখান থেকে সবুজ সঙ্কেত পেলেই সংস্কারের কাজ শুরু হবে। মেট্রোর এক কর্তার কথায়, কবি সুভাষ থেকে টালিগঞ্জ পর্যন্ত মেট্রোর লাইন গিয়েছে আদিগঙ্গার উপর দিয়ে। তাই আদিগঙ্গার উপর তৈরি প্রতিটি পিলারের স্থায়িত্ব প্রশ্নের মুখে। কবি সুভাষ থেকে গীতাঞ্জলির মাঝে একাধিক পিলারে ‘চিড়’ ধরা পড়েছিল আগেই। তবে সেই সময় বিষয়টা নিয়ে খুব একটা কেউ মাথা ঘামাননি। তারই ফল এখন ভুগতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
কবি সুভাষ স্টেশনের শেড খোলার কাজ বৃহস্পতিবার চলেছে। দুর্বল হয়ে মাটিতে বসে যাওয়া আপ প্ল্যাটফর্ম ভেঙে নতুন করে তৈরি করা হবে। আপাতত কবি সুভাষ স্টেশন ন’মাসের জন্য বন্ধ। ফলে দক্ষিণ শহরতলির মানুষ সমস্যায় পড়ছেন। মেট্রো নেই, তাই যাত্রী নেই। কবি সুভাষ সংলগ্ন টোটোস্ট্যান্ডও ফাঁকা। নিউ গড়িয়া থেকে যাত্রীদের মেট্রো ধরতে আসতে হচ্ছে শহিদ ক্ষুদিরাম স্টেশনে। ফলে খরচ বেড়েছে। চল্লিশ বছর পার করেছে কলকাতা মেট্রোর সুড়ঙ্গ। স্বাভাবিক নিয়মেই তার পরিকাঠামোগত কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। কোথাও ফাটল, কোথাও চিড় নজরে এসেছে। তাই সুড়ঙ্গের সুরক্ষায় রাইটসকে দিয়ে সমীক্ষা করিয়েছে মেট্রো। একইসঙ্গে সমস্যা রয়েছে বুঝতে পেরে উত্তম কুমার থেকে কবি সুভাষ মাটির ওপরের স্টেশনগুলোরও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। স্টেশনের বয়স মাত্র পনেরো বছর পার করতেই তাতে ধরা পড়েছে নানা জায়গায় ত্রুটি। সমস্যা মেটাতে কোন প্রযুক্তি, তা নিয়ে ডিটেল প্রোজেক্ট রিপোর্ট দিয়েছে রাইটস। দিল্লির তরফে অর্থ বরাদ্দের পর সেই কাজে হাত দেবে মেট্রো। মেট্রোর এক কর্তা জানান, গতবছরই অনুভব করা গিয়েছিল শহরের লাইফলাইনের পরিকাঠামোগত কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে। তার মেরামতের দরকার। তাই রাইটসকে দিয়ে সমীক্ষার সিদ্ধান্ত।
রাইটস কবি সুভাষের বিষয়েও তার মতামত জানিয়েছিল। তা মেনেই ঠিক হয়েছিল, পুজোর পরই ওই স্টেশনের কাজে হাত দেওয়া হবে। তবে তার আগেই হয়ে গেল বিপত্তি। এদিকে যতদিন না কবি সুভাষ নতুনভাবে তৈরি হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত শহিদ ক্ষুদিরাম (ব্রিজি) প্রান্তিক মেট্রো স্টেশন হিসাবে কাজ করবে। তবে এখন যাত্রী নিয়ে না গেলেও কবি সুভাষ থেকেই লাইন বদল করে ট্রেন। কিন্তু যদি কবি সুভাষের প্ল্যাটফর্ম ভাঙার ফলে লাইনের ক্ষতি হয়, সেক্ষেত্রে শহিদ ক্ষুদিরাম থেকেও পরিষেবা চালানো সম্ভব না। শহিদ ক্ষুদিরাম স্টেশনের পরিকাঠামো বদল প্রয়োজন। কারণ, টালিগঞ্জের পর একমাত্র কবি সুভাষ স্টেশনেই মেট্রো রেক আপ কিংবা ডাউনের জন্য অভিমুখ বদল করতে পারে। শহিদ ক্ষুদিরামেও পরিকাঠামো ও প্রয়োজনীয় কারিগরি ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হতে পারে। ট্র্যাকের যে অংশের মাধ্যমে রেকগুলি লাইন বদল করে, সেই পয়েন্ট তৈরি করতে হবে এখানে। বসাতে হবে পৃথক সিগন্যালও। তারপরেও প্রয়োজন থাকবে কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটির ছাড়পত্রের।