যতদিন যাচ্ছে ততই বাড়ছে ক্যানসার। কেন ঊর্ধ্বমুখী কর্কট রোগ? সম্ভাব্য কারণ জানালেন সার্জিক্যাল অঙ্কোলজিস্ট ডাঃ অর্ণব গুপ্ত।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-র সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২২ সালে বিশ্বজুড়ে নতুন করে প্রায় ২ কোটির বেশি মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যুর সংখ্যাও প্রায় ১ কোটির কাছাকাছি। আশঙ্কাজনকভাবে, ২০৫০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা ৭৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে সতর্কতা জারি করেছে WHO। ভারতীয় কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (ICMR) জানিয়েছে, ভারতে ২০১২ সালের তুলনায় ২০২২ সালে ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা ৩৬ শতাংশ বেড়েছে। প্রতি ৮ জনের মধ্যে একজন জীবনের কোনো এক পর্যায়ে ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন। ২০৫০ সালে সংখ্যাটা দ্বিগুণ হবে। প্রতি ৪ জনে একজন ক্যানসারে আক্রান্ত হবে। বর্তমানে এদেশে প্রতি বছর প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন। এদেশে কেরালা, মিজোরাম ও অসমে ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সর্বাধিক।
ক্যানসার বৃদ্ধির কারণ কী?
এক্ষেত্রে বর্তমান জীবনযাপন সর্বাধিক দায়ী। কারণ, দেখা গিয়েছে ক্যানসারের সাথে অন্তত ৪০-৫০ শতাংশ সম্পর্ক রয়েছে জীবনযাপনের। তামাক সর্বপ্রধান ভিলেন। অন্যতম হল ধূমপান, জর্দা, খৈনি, পানমশলা অর্থাৎ তামাক দ্রব্য সেবন। ফুসফুস, মুখ, প্যাংক্রিয়াসের ক্যানসার, ব্লাডার ও মুত্রথলির ক্যানসার ডেকে আনে তামাক। তার পাশাপাশি রয়েছে অ্যালকোহল বা মদ্যপান। যা থেকে খাদ্যানালি, লিভার, স্তন ক্যানসার বাড়ছে।
মিষ্টি বেশি খান? সাবধান
ফাস্টফুড, মিষ্টি, প্রসেসড খাবার, রেড মিট শরীরে ক্যানসার সেলকে বাড়তে সাহায্য করে। আজকের প্রজন্ম এগুলিই খেতে বেশি পছন্দ করে।
জীবনে স্ট্রেস, শরীরে বিপদ
এর পাশাপাশি আরও একটি বড় শত্রু মানসিক চাপ। অনেক গবেষণাও হচ্ছে। ক্যানসারের সঙ্গে সরাসরি প্রমাণ না পেলেও এর খারাপ প্রভাব শরীরে মারাত্মক কিছু ঘটাতে পারে, তার প্রমান মিলেছে। শরীরের ইমিউনিটি কমে যায়, ফলে ক্যানসার সেল ধ্বংস হতে পারে না। ঝুঁকি বাড়ে।
*ওজন বৃদ্ধি সব রোগের মূলে। ক্যানসার সেল এদের শরীরে অজান্তেই বাড়তে থাকে।
আয়ু বাড়ছে, রোগও বাড়ছে।
*বর্তমানে মানবজীবনে আয়ু বেড়েছে। তাই বয়স্কদের মধ্যে ক্যানসারের হার অনেক বেড়েছে। এর পাশাপাশি মানুষের মধ্যে সচেতনা একটু হলেও বাড়ছে, নানা প্রকার টেস্ট বেরিয়েছে। সেগুলির সুবাদে আজকার ক্যানসার নির্ণয় হচ্ছে বেশি ও বৃদ্ধির পরিসংখ্যাও তাই ঊর্ধ্বমুখী। *যে ক্যানসারগুলি বাড়ছে, তা হল স্তন ক্যানসার, বৃহদান্ত্রের ক্যানসার, প্রস্টেট, ফুসফুস, কিডনি ক্যানসার ইত্যাদি।
দায়ী ভাইরাসও
হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস, ভাইরাস ঘটিত ক্যানসারের মধ্যে অন্যতম। এটা সাধারণত যৌন মিলনের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়। যা থেকে জরায়ুর মুখের ক্যানসার হয়। এদেশে স্তন ক্যানসারের পর এই দ্বিতীয় অন্যতম ক্যানসার। এই ক্যানসার সেহেতু ভাইরাসঘটিত তাই ভ্যাকসিন দ্বারা প্রতিহত করা যায়।
*এছাড়া হেপাটাইটিস বি ও ই ভাইরাস থেকেও লিভার ক্যানসারের ঝুঁকি থাকে। রোদ থেকে সাবধান।
*অতিরিক্ত রোদে থাকাও কিন্তু ক্যানসারের কারণ হতে পারে। বিশেষ করে ত্বকের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। যদিও পাশ্চাত্যে খুব ফর্সা যাঁরা তাঁদের ঝুঁকি বেশি।
প্লাস্টিক থেকে সাবধান
চায়ের কাপ থেকে খাবারের প্লেট সবেতেই প্লাস্টিকের পাল্লা ভারী। যখনই এতেই গরম পানীয় বা গরম খারাব দেওয়া হয় তখন প্লাস্টিক থেকে কার্সিনোজেনিক উপাদান শরীরে মেশে। যা কিন্তু আজকের দিনে ক্যানসার বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। এমনকী প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগের ব্যবহার মানব শরীরে পরোক্ষভাবে প্রভাব ফেলে।