বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: বাতানুকুল গাড়িতে উত্তরের আধপাকা কাঁঠাল পাড়ি দিল্লি, মুম্বইতে। যাচ্ছে বিহার, উত্তরপ্রদেশেও। প্রতিদিন উত্তরের বিভিন্ন হাট থেকে প্রায় তিনশো টন কাঁঠাল ভিন রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছে। গ্রীষ্মকালীন ওই ফলকে ঘিরে বিভিন্ন নিয়ন্ত্রিত পাইকারি বাজার জমজমাট।
ময়নাগুড়ি নিয়ন্ত্রিত বাজার জুড়ে কাঁঠালের পাহাড়। গ্রাম ও চা বাগান এলাকার লোকজন গাড়ি বোঝাই করে কাঁঠাল নিয়ে হাজির সেখানে। ভিড় করেছেন বিহার, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লির ক্রেতারা। ওজনের পরে কাগজে মুড়ে বিশেষ ভাবে প্যাকেট করে গাড়িতে তোলা হচ্ছে। জানুয়ারি মাস থেকে শুরু হয়েছে ওই কারবার। চলেছে এপ্রিল মাস পর্যন্ত। জুন থেকে যাচ্ছে আধপাকা কাঁঠাল। পাইকারি ব্যবসায়ী সুবল দাস এক গাল হেসে বলেন, “এতদিন ধারণা ছিল কেবল বাঙালিরা কাঁঠাল পছন্দ করে। গত তিন বছরে ধারনা পাল্টেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ভোজন রসিকদের কাছে ক্রমশ কাঁঠালের কদর বেড়ে চলেছে।” বিহারের সিমান এলাকার ব্যবসায়ী দিনালাল শর্মা বলেন, “পরিবহনের খরচ ধরে খুচরা বাজারে ওই কাঁঠাল ১৫ টাকা থেকে ২০ টাকা কেজি দামে বিক্রি হবে।”
উদ্যান পালন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার এবং শিলিগুড়ি মহকুমায় প্রায় দু’হাজার হেক্টর জমিতে ‘অ্যাট্রকার্পাস’ গোত্রের ‘মালবেরি’ পরিবারভুক্ত কাঁঠাল গাছ রয়েছে। বিজ্ঞানের পাতায় ‘অ্যাট্রকার্পাস হেটারোফাইলাস’ নামে পরিচিত ওই ফলের এখানে বার্ষিক গড় উৎপাদন প্রায় ৫ হাজার মেট্রিক টন। শিলিগুড়ির উদ্যান পালন দপ্তরের এক আধিকারিক জানান, ভিন রাজ্যে উত্তরের কাঁঠালের চাহিদা বেড়েছে। তবে বিদেশের বাজারে এখানকার কাঁঠাল যাচ্ছে, এমন খবর তাঁদের কাছে নেই। জলপাইগুড়ি জেলায় সবচেয়ে বড় কাঁঠালের পাইকারি বাজার গড়ে উঠেছে ময়নাগুড়িতে।
মালবাজার, নাগরাকাটা, মেটেলি, ওদলাবাড়ি থেকে এখানে প্রতিদিন কাঁঠাল আসছে। একদল যুবক গ্রামে ঘুরে কাঁঠাল কিনে পাইকারি বাজারে পৌঁছে দিয়ে রোজগারের পথ খুঁজে নিয়েছেন। স্থানীয় ব্যবসায়ী জ্যোতি অধিকারী জানান, ময়নাগুড়ি নিয়ন্ত্রিত বাজার, রোডহাট, রাজারহাট থেকে প্রতি সপ্তাহে অন্তত একশো ট্রাক কাঁঠাল ভিন রাজ্যে পাঠানো হয়। জেলার ধূপগুড়ি নিয়ন্ত্রিত বাজার, ফাটাপুকুর থেকেও কাঁঠালের গাড়ি বিভিন্ন রাজ্যে যাচ্ছে। কচি কাঁচা কাঁঠালের কদর বেশি নেপাল, বিহারের সিমান, দ্বারভাঙ্গা, সীতামারি, পাটনা এলাকায়। এছাড়াও উত্তরপ্রদেশ এবং মুম্বাইতে যাচ্ছে। পাকা কাঁঠালের চাহিদা বেশি দিল্লিতে। পাইকারি ব্যবসায়ী বলরাম সর্দার বলেন, “সপ্তাহে দশটি বাতানুকুল ট্রাকে আধ পাকা কাঁঠাল দিল্লিতে পাঠানো হয়।”