কালো জল ও একটি পরিযায়ী  আখ্যান

কালো জল ও একটি পরিযায়ী  আখ্যান

ব্লগ/BLOG
Spread the love


শুভময় সরকার

(১)

— কাউকে পুরোপুরি বিশ্বাস করবি না এই শহরে। সব শালা তোকে লেঙ্গি মেরে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে। কথাটা বললাম, মনে রাখিস। এখানে ক’দিন থাকলে নিজেও বুঝে যাবি।

কথাগুলো বলতে বলতে বেশ উত্তেজিত হয়ে ওঠে ভগীরথ। ভগীরথ সম্পর্কে সুরথের মামা, যদিও রক্তের সম্পর্ক বলতে যা বোঝায় সেসব কিছু নেই, গ্রামতুতো সম্পর্ক। এ শহরে ভগীরথের আসা প্রায় পনেরো বছর আগে, কাজের খোঁজে। শহরটাও তখন অন্যরকম। কাজের জায়গায় এত লেঙ্গি ছিল না, তবে হ্যাঁ, ছিল না যে একেবারেই তা নয় তবু যেন কোথাও আপনত্ব ছিল। ভগীরথ রিকশায় বসে দূরের পাহাড়টার দিকে তাকায়। বয়েস বাড়ছে, চুলে পাক ধরেছে। পাশে সুরথ। অনেকদিন পর গ্রামটার জন্য মনটা কেমন করে ওঠে,
– বড় পুকুরচালাটা একইরকম আছে রে…! নদীটা…

প্রশ্নটা আনমনেই করে ভগীরথ, পাহাড়ের আলোগুলো দেখতে দেখতে…

– হ্যাঁ মামা, একইরকম, শুধু একটা ছোট অফিসঘর হইসে, মঙ্গল আর বৃহস্পতিবার খোলে, খাজনা আর ট্যাক্স নেয়। বাকিদিন তালা মারা থাকে।

ভগীরথ আজ অন্য মুডে, কথাগুলো কানে যায় কি না বোঝে না সুরথ। অনেকদিন পর ভগীরথ যেন ওর ফেলে আসা আস্ত গ্রামটাকে ফিরে পেয়েছে। এই শহর থেকে ওর গ্রামে যাওয়া সাকুল্যে ঘণ্টা পাঁচেক কিন্তু গত পনেরো বছরে যতবারই ফিরে যাবার জন্য আকুল হয়েছে মন, ভারী হয়েছে বুক। নিজের ইচ্ছেটাকে আটকেছে। আজ অনেকদিন পর সুরথকে পাশে নিয়ে রাতের শহরে রিকশায় বসে কেমন হালকা লাগে ভগীরথের।

শহরের তিনটে স্টেশনের মধ্যে এটাই হালে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রবেশ দরজা। সময়ের সঙ্গে পাহাড়তলির এই শহর বড় হতে হতে এ অঞ্চলের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। বাণিজ্যে বসতি লক্ষ্মীর আপ্তবাক্যেই শহরের রমরমা। প্রতিবেশী জেলাগুলো ছাড়িয়ে রাজধানী শহর, এমনকি পড়শি রাজ্যগুলো থেকেও কাজের সন্ধানে ছুটে আসে মানুষ। কাজের সূত্রেই তো সুরথেরও এ শহরে আসা। মাসখানেক আগে লক্ষ্মীদির ফোনটা আসে রাতের দিকে। সারাদিনের কাজের পর ক্লান্ত শরীরটা সবে বিছানায় এলিয়ে দিয়েছে, ফোন বেজে উঠতেই খানিকটা বিরক্ত হয়ে ধরেছিল,

– ঘুমায় পড়চিস নাকি রে …!

ওপাশের গলাটা প্রথমটায় বুঝে উঠতে পারেনি ভগীরথ তবে মুহূর্তেই চেনা কণ্ঠ আর উচ্চারণে চিনে ফেলেছিল লক্ষ্মীদিকে। গ্রাম ছেড়ে আসার পর একমাত্র লক্ষ্মীদির সঙ্গেই যোগাযোগ রয়ে গিয়েছে। অনিয়মিত হলেও ফোনে কথাবার্তা হয়।

– না না, কাজের থেকে ফিরলাম একটু আগে, শুয়েছিলাম। এইটা তোমার কোন নম্বর, নাম উঠল না তো…!

– নতুন নম্বর রে…!

সুরথের ব্যাপারে সে’দিনই কথা হয়। লক্ষ্মীদির সেই অর্থে কোনও পিছুটান নেই একমাত্র সুরথ ছাড়া। বেশ কিছুটা সময় কথা হয় সেদিন, লক্ষ্মীদির কথা শুনে কোনও দ্বিধা না করেই সুরথকে চলে আসতে বলেছিল ভগীরথ,

– অত চিন্তা করতে হইব না, পাঠায় দ্যাও, আমি তো একলা মানুষ, আমার সঙ্গেই থাইকে যাবে।

সে রাতে লক্ষ্মীদিও নিশ্চিন্ত হয়ে ঘুমোতে গিয়েছিল। এ শহরে আসার পর নিজেদের গ্রামের চিরকালীন কথার টান আস্তে আস্তে পালটে ফেলেছিল ভগীরথ, রপ্ত করেছিল এই শহরের টান। অদ্ভুত এক মিশেল ভাষা চলে এখানে। পাশের অঞ্চল, জেলার ভাষার  সঙ্গে এখানে ঠিক মেলে না। কাজের তাগিদে যারা এই শহরে পা রাখে, আস্তে আস্তে তাদের ভাষায় এখানকার নিজস্ব টান চলে আসে, ভগীরথেরও এসেছে। তবে লক্ষ্মীদি বা কচিৎ-কদাচিৎ ওদের অঞ্চলের কারও সঙ্গে শহরে দেখা হয়ে গেলে বা ফোনে কথা হলে, পুরোনো টানটা ফিরে আসে। মাঝে প্রায় মাসখানেক, সুরথ চলে আসে, ভগীরথও যেন অপেক্ষায় ছিল, সুরথ আসার পর সেটা বেশ ভালোমতো অনুভব করে। সারাদিন কাজের পর বাড়ি ফিরে বড় একা লাগত এতদিন। কথা বলার কেউ নেই। খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়া তাড়াতাড়ি। সুরথ এখানে আসার পর থেকে ক’দিন ধরে ঘুম আর আসতে চায় না। ভাড়াবাড়ির বারান্দায় খাওয়াদাওয়ার পর মোড়া নিয়ে বসে গল্প করে দুজন, বহু রাত অবধি। কত কথা হয় দুজনের। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে গ্রামের সব খবর জানতে চায় ভগীরথ। কথার মাঝেই সুরথ জানতে চায় – মামা, তুমি গ্রামে আসো না ক্যান…! উত্তর দেয় না, চুপ করে থাকে ভগীরথ, ও ভগীরথের চোখ পড়তে পারে, চোখের কোনায় চিকচিক দেখতে পায়। কথা আর বাড়ায় না, অন্য কথা পাড়ে, তারপর দুজন শুয়ে পড়ে। ঘুমিয়ে পড়ে সুরথ। ঘুম আসে না ভগীরথের। রাত বাড়ে, কত কথা মনে পড়ে যায়, তারপর একসময় দু’চোখের পাতা লেগে আসে। শেষরাতে অজানা কোনও পাখির ডাকে ঘুম ভেঙে গেলে নিশ্চুপে দরজা খুলে বাইরে বেরোয়, শরতের ভোরের এই হালকা হাওয়ায় শিরশির করে শরীর। স্টেশন এখান থেকে কাছেই, ট্রেনের হুইসল ভেসে আসে। অদ্ভুত লাগে এই নিঃস্তব্ধ রাতে শব্দটা। দিনের কোলাহলে এত স্পষ্টভাবে হুইসল শোনা যায় না, সব চেনা শব্দগুলোই রাতে অন্যরকম। এই ভাড়া বাড়ির উঠোনে একটা শেফালি গাছ, শেষরাতে সাদা ফুলগুলো পাতার ফাঁকে ফাঁকে জ্বলজ্বল করে। ভোরের আগেই মাটিতে ঝরে পড়ে টুপটাপ…!

(২)

স্টেশন ঘিরে দালালি একটা বড় পেশা। শহরটা ট্যুরিস্ট স্পট আর ব্যবসার কেন্দ্র, ফলে স্বাভাবিক নিয়মেই দালালির ডালপালা ছড়িয়েছে অনেকদূর। এই কয়েক বছরে সেই দালালির পেশায় থেকে এর অলিগলি পথ হাতের রেখার মতো চেনা ভগীরথের। কলকাতা থেকে সকালের ট্রেনগুলো প্রায় পরপরই সব ঢোকে। দিনেরবেলায় দালালির কাজ দ্বিমুখী সাধারণত– গাড়ি এবং হোটেল। ভগীরথ এই দুটোর মধ্যে ‘যখন যা লাগবে’-তেই থাকে, হোটেলের ব্যবস্থা থেকে গাড়ি বুকিং সবরকম কাজই শিখে নিয়েছে ক’বছরে। অলিগলি পথের এই দালালির ব্যবসায় সময় একটা বড় ব্যাপার, সেটা বুঝতে হয়। দিনের আলো ফুরোলে চাহিদার ডালপালা নড়ে, দীর্ঘ হয় পেশার পরিধি। কাস্টমারের চাহিদা মুখ-চোখ দেখলেই বোঝা যায়। সময় যত এগিয়েছে, ভগীরথ কাস্টমারের চোখের ভাষা চিনতে শিখেছে। ও জানে রাত বাড়লে চাহিদার চোখ অনেকটাই পালটে যায়। তখন হোটেলের ঘর ঘণ্টা হিসেবে রেট হয়, আনাচে-কানাচেতে রুগ্ন, কালো হয়ে যাওয়া মেয়েগুলো অপেক্ষায় থাকে। এসব দেখতে দেখতে ভগীরথ কবে যেন গ্রামের কথা ভুলে গিয়েছে, ভুলে যেতে চেয়েছে, তবে মনে পড়লেই বুকের ভেতরে গুমরে ওঠে, গলার কাছে দলা পাকায়। সেসব গুমরে ওঠা দিনে কাজের শেষে জোর আড্ডা মারে ভগীরথ, ইউনিয়ন অফিসে যায়, ক্যারম খেলে, কোনওদিন তাস। বাড়ি ফিরে খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়ে জলদি। ঘুম আসে না। কত কথা মনে হয়, বুকের ভেতরটা ফের মোচড় দেয়, তারপর কখন যেন ঘুমিয়ে পড়ে…! ভোরে উঠে দেখে উঠোনজুড়ে  সাদা শিউলি। ফুলগুলো আলতো করে কুড়িয়ে ছোট্ট চিনেমাটির প্লেটে ঘরের টেবিলে রেখে দেয় অল্প জল দিয়ে। গন্ধে ভরে ওঠে ঘর।

গত ক’দিন বাড়ি ফিরে সুরথের সঙ্গে ছোট্ট বারান্দায় বসে গল্প হচ্ছে না। দিনকয়েকের জন্য বাড়ি গেছে সুরথ, ক’দিন পর ফিরবে। গিয়ে ফোন করেছিল– মামা, ঠিকঠাক পৌঁছাইসি। সুরথের এখনও এই শহরের মিশেল ভাষাটা রপ্ত হয়নি পুরোপুরি। ছেলেটা বড় মায়ায় জড়িয়েছে। পনেরো বছরের একা থাকার অভ্যেসটা পুরোপুরি বদলে গিয়েছে ক’দিনেই। সারাদিন কাজের শেষে বাড়ি ফিরে দুজন ছোট্ট বারান্দায়, কোনওদিন উঠোনে শিউলি গাছটার তলায় বসে গল্প করে। কত কথা। সুরথ চুপ করে মুগ্ধ শ্রোতা হয়ে একের পর এক গল্প শুনে যায় ভগীরথের। ওদের গ্রামের পুরোনো দিনের গল্প, এই শহরের গল্প, কাজের রাস্তার নানা মজার সব গল্প। সুরথও অপেক্ষায় থাকে কাজ থেকে ফিরে। ও ভগীরথের অনেকটা আগেই ফিরে আসে। রাস্তাঘাটও সব চিনে গিয়েছে এই মাস দেড়েকে। ভগীরথ সুরথকে স্টেশন এলাকারই একটা চেনাজানা মিষ্টির দোকানে কর্মচারীর কাজে লাগিয়েছে। মাইনে তেমন কিছু নয়, তবে দুপুরের খাওয়া ওখানেই। কাজও বেশি নয়, রাতে আটটার মধ্যে ওকে ছেড়ে দেয় মালিক। দোকানের মালিক বিশু ঘোষের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ভগীরথের। সুরথও বেশ মানিয়ে নিয়েছে কাজের সঙ্গে।

(৩)

অনেকদিন পর নদীটার কাছে গিয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নেয় সুরথ। ওদের গ্রাম ঘেঁষে বয়ে যাওয়া নদীটা বড় শান্ত। সারাবছর টলটলে জল, গ্রামেরই এক সদস্য যেন, তবে বর্ষার সময় রূপ একদম অন্য। এতদিন পর গ্রামে এসে সবকিছুই নতুন করে ভালো লাগে সুরথের। সব চেনা জায়গাগুলো নতুন লাগে। শহরে যে দোকানে কাজ করে তার ঠিক পেছনে, একদম লাগোয়া এক নদী। দোকানের পাশেই কংক্রিটের ছোট্ট ব্রিজ পেরিয়ে সে নদী গিয়ে মিশেছে বড় নদীতে। দুপুরে কাস্টমার প্রায় থাকে না, দোকানের পেছনের ছোট্ট ঘরটায় বসে খেতে খেতে কালচে নোংরা জলের নদীটাকে দেখে আর এই নদীর কথা মনে পড়ে। আজ সকালে ভগীরথের সঙ্গে কথা হওয়ার পর থেকেই মনটা ভার হয়ে আছে। ভগীরথই ফোন করেছিল,

– কবে আসবি রে সুরথ

– দেখি, সামনের সপ্তাহে মামা, কতদিন পর আসচি

– বল তালে আমি কতদিন যাই না, আমার মন কেমন লাগে। তুইও নাই, বাড়িটা ফাঁকা।

ভগীরথের ফোন আজ সুরথকে কেমন অস্থির করে তোলে, নইলে তো বেশ ভালোই কাটছিল এসে। কত গল্প সবার সঙ্গে। কেন যে মামাটা গ্রামে আসে না কে জানে, মাকেও জিজ্ঞেস করেছে, সে’রকম কোনও উত্তর পায়নি। তবে সুরথ এটুকু বোঝে, মানুষটা বড় একা আর মনের যত দুঃখ সব রাতে গুমরে ওঠে। একেকদিন রাতে গল্প করতে করতে বোঝে কী যেন একটা কথা, দুঃখ বলতে গিয়েও আটকে যায় ভগীরথের গলায়। এই গ্রামের সঙ্গে যতটুকু যোগাযোগ সেটা সুরথের মায়ের সঙ্গেই। মায়ের গ্রামতুতো ভাই আর সেই সূত্রেই ভগীরথকে মামা হিসেবেই চেনে। তবে লতায়পাতায় একটা আত্মীয়তাও নাকি আছে। এই গ্রামের কমবয়সিরা ভগীরথকে সেভাবে চেনে না, ওদের বাড়িটাও আর নেই। বিক্রি হয়ে গিয়েছে, অন্য লোক কিনে পাকা বাড়ি তুলেছে। তবে ভগীরথ যে খুব ডাকসাইটে মানুষ ছিল সে কথা মায়ের কাছেই শোনা। কত গল্প শুনেছে মায়ের কাছে। ফোনে যখন কথা হত, মাঝে মাঝে সুরথের সঙ্গে কথা বলিয়ে দিত মা। ছোট বয়েসে কয়েকবার দেখেছে কিন্তু নতুন করে দেখা বলতে বহুদিন পর কাজে গিয়েই। বছর কুড়ির আজকের সুরথ এখন ভাবে ভগীরথের জন্য। বড় আপন করে নিয়েছে মানুষটা ক’দিনেই। অনেকদিন পর নদীপাড়ে বসে বুক ভরে হাওয়া টানে, তারপর শান্ত ঘরোয়া নদীটার দিকে তাকায় সুরথ আর কষ্ট হয় ওই দোকানের পাশের কালচে নদীটার জন্য। যে নদীকে প্রতিদিন কুৎসিত আর নোংরা লাগে, আজ গ্রামের এই নদীটার দিকে তাকিয়ে কেমন মায়া হয় ওই কালো জলের নোংরা নদীটার জন্য।

(৪)

সুরথ দেশের বাড়িতে যাবার পর থেকেই বাড়ি ফিরে আর বেশি রাত করে না ভগীরথ, খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়ে, তবে গতকাল থেকেই ভোররাতে ঘুম ভেঙে যাচ্ছে আর তারপর বিছানায় শুয়ে থাকতে পারে না, দরজা খুলে বাইরে এসে দাঁড়ায় শিউলি গাছটার তলায়।  আজও ঘুমোচ্ছিল, অদ্ভুত একটা স্বপ্নে ঘুমটা ভেঙে যায় ভগীরথের। গ্রামের সেই পাকড়াশিদের বাগান লাগোয়া পুকুরপাড়টা ভেসে উঠেছিল স্বপ্নে। পাকড়াশিদের মেজ-বৌ এসেছিল চুপিসাড়েই সেদিন। জ্যৈষ্ঠের ঝিমধরা দুপুরে নির্জন বাগানটাই নিরাপদ ছিল। সেদিন মেজ-বৌয়ের চোখে আগুন মেশানো বিষণ্ণতা ছিল, খেয়াল করেছিল ভগীরথ। সে চোখের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারেনি, ভগীরথের হাতদুটো চেপে ধরেছিল মেজ-বৌ, আস্তে আস্তে উষ্ণ হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে ফিরে এসেছিল ভগীরথ। ফিরে গিয়েছিল মেজ-বৌ। ছোটবেলার বন্ধু ও বাড়ির মেজো ছেলের সঙ্গে বিশ্বাসভঙ্গের কাজটা করতে পারেনি। খানিক দূর দিয়ে বয়ে চলা শান্ত, স্নিগ্ধ নদীটার চলমান জীবনের ছন্দটাকে নষ্ট করে দিতে পারেনি, নিজের অসহায়ত্বকে শাস্তি দিতে নিজের জীবনের ছন্দটাকেই ভেঙে দিয়েছিল ভগীরথ। গ্রাম ছেড়েছিল, ভাসিয়ে দিয়েছিল নিজেকে, তারপর এই শহরের কালো জলের নোংরা নদীটার পাশেই চলে আসা, বেঁধে যাওয়া আবর্জনার মতো।

এ শহরকে, নতুন পেশাকে, এই ধান্দাজীবনকে ভালোবাসতে পারেনি। তবে আজ প্রথমবার এই শেষরাতে ট্রেনের হুইসল শুনতে শুনতে কালো জলের নদীটা আর স্টেশন চত্বরে কয়েকঘণ্টার জন্য বেসাতি হওয়া লিপস্টিক ঠোঁটের রুগ্ন মেয়েগুলোর জন্য বড় কষ্ট হয় ভগীরথের। শহরটাকে কি তবে ভালোবাসছে ভগীরথ…!



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *