কসবার মূল অভিযুক্তের মোবাইলে আরও ছাত্রীর অশ্লীল ভিডিও! তদন্তে পুলিশ

কসবার মূল অভিযুক্তের মোবাইলে আরও ছাত্রীর অশ্লীল ভিডিও! তদন্তে পুলিশ

জীবনযাপন/LIFE STYLE
Spread the love


স্টাফ রিপোর্টার, কলকাতা ও হাওড়া: শুধু নির্যাতিতাই নন। এর আগে আইন কলেজের বহু আইনের ছাত্রীর সঙ্গেই অশালীন আচরণ করে কসবা গণধর্ষণের ঘটনার মূল অভিযুক্ত। আর সেই অশালীন আচরণের অশ্লীল ছবি ও ভিডিও তুলে রাখত মনোজিতেরই সঙ্গীরা। ওই ভিডিওগুলি দেখিয়ে তাঁদের ব্ল‍্যাকমেল করা হত, এমন অভিযোগও উঠেছে। এবার সেই ছবি ও ভিডিওগুলির সন্ধানে তল্লাশি শুরু করল ‘সিট’। গত বুধবার কসবায় সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজে এক আইনের ছাত্রীকে আটকে রেখে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। রবিবার অভিযুক্ত প্রমিত মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে হাওড়ার চ্যাটার্জিহাটের বাড়িতে ‘সিট’ তল্লাশি চালায়। এছাড়াও অন্য দুই অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্র ও জায়েব আহমেদের বাড়িতে এক দফা তল্লাশি হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।

লালবাজারের সূত্র জানিয়েছে, প্রথমে বিশেষ তদন্তকারী দল বা ‘সিট’-এর পাঁচজন সদস্য কাজ শুরু করেন। এদিন ‘সিট’-এর সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হয়। এখন ন’জন ‘সিট’ সদস্য তদন্ত করছেন। নির্যাতিতা ছাত্রী ও তিন অভিযুক্তর রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলি ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। গত বুধবার কসবায় সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজে এক আইনের ছাত্রীকে আটকে রেখে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্র, তার দুই সঙ্গী জায়েব আহমেদ ও প্রমিত মুখোপাধ্যায়কে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ছাত্রীকে ধর্ষণ চলাকালীন মিনিট দু’য়েকের দু’টি ভিডিও তোলা হয় বলে প্রথমে ধৃতরা দাবি করে। ধর্ষণের সময় ছাড়াও তার আগে ছাত্রীকে বিবস্ত্র করা ও তার যৌন নিগ্রহের আরও কয়েকটি ভিডিও ও ছবি তোলা হয় বলে সন্দেহ পুলিশের। তদন্তে ‘সিট’-এর সদস্যরা জানতে পারেন, যাবতীয় অশ্লীল ভিডিও ও ছবি অভিযুক্তরা নিজেদের মোবাইল ছাড়াও অন্য ল্যাপটপ ও পেন ড্রাইভে কপি করে রেখেছে। সেগুলির সন্ধানেই এদিন অভিযুক্তদের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয় বলে জানিয়েছে পুলিশের সূত্র।

এছাড়াও গত বুধবার রাতে কলেজে ছাত্রীর গণধর্ষণের যে ভিডিওগুলি তোলা হয়, সেগুলি একটি সোশাল মিডিয়ার বিশেষ গ্রুপে শেয়ার করা হয়েছিল বলে খবর আসে পুলিশের কাছে। পুলিশ সেই তথ্য যাচাই করছে। ওই গ্রুপে রয়েছে মনোজিৎ, জায়েব, প্রমিত ও মনোজিতের খুব ঘনিষ্ঠ কয়েকজন। ওই গ্রুপের কেউ বাইরে ভিডিওগুলি ছড়িয়েছে কি না, সেই তথ্য পুলিশ জানার চেষ্টা করছে। তথ্য যাচাইয়ের জন্য গ্রুপের অন্য সদস্যদের পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করবে। পরীক্ষা করা হতে পারে তাঁদের মোবাইলও। শনিবার সন্ধ্যায় অভিযুক্তদের কলেজে নিয়ে গিয়ে ঘটনার পুনর্গঠন হয়। ইউনিয়ন রুম, গার্ড রুম-সহ কোথায় কী ঘটনা ঘটেছিল, তার বিবরণ দিয়েছে অভিযুক্তরা।

পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, গত কয়েক বছরে নতুন কলেজ-ছাত্রীদের টার্গেট করে তাঁদের প্রতি অশালীন আচরণ করাটা রীতিমতো ‘হবি’ হয়ে দাঁড়িয়েছিল মনোজিতের। ছাত্রীদের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর তাঁদের ইউনিয়ন রুমে বসার জন্য চাপ দিত মনোজিৎ। নিজের ইচ্ছামতো তাঁদের পদ দিত সে। আরও উঁচু পদের লোভ দেখানো হত। এর পর প্রায় প্রত্যেক ছাত্রীকেই বিয়ের টোপ দিত সে। বিভিন্ন সময় গার্ডরুমে নিয়ে যাওয়া হত ওই ছাত্রীদের। সেখানে মদ্যপান করে ছাত্রীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করত মনোজিৎরা। আবার কখনও কয়েকজন মিলে কোথাও আউটিংয়েও যেত। সেখানেও ছাত্রীদের বিভিন্ন ধরনের অশালীন আচরণের ছবি ও ভিডিও করত মনোজিতের সঙ্গীরা। ওই ভিডিও দেখিয়ে ব্ল‍্যাকমেল করা হত। কাউকে এই অশ্লীল আচরণের কথা জানালে বা অভিযোগ দায়ের করলে ওই ভিডিও ও ছবি ফাঁস করে দেওয়া হবে বলে হুমকিও দেওয়া হত ছাত্রীদের। ‘প্রভাবশালী’ মনোজিতের উপর কোনও কথা বলা বা মন্তব্য করার ক্ষমতা কোনও ছাত্র-ছাত্রীর ছিল না। ওই ভিডিওগুলি যে ল্যাপটপ ও পেন ড্রাইভে কপি করা হয় বলে অভিযোগ, সেগুলির সন্ধানে এদিন অভিযুক্তদের বাড়িতে চলে তল্লাশি।

এদিন অভিযুক্ত প্রমিত মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে রবিবার সকালে তার চ্যাটার্জিহাটের হরিনাথ ন্যায়রত্ন লেনের বাড়িতে যান ‘সিট’ সদস্যরা। কয়েকশো মানুষের ভিড়ের মধ্যে থাকা বাসিন্দারা মারমুখী হয়ে ওঠেন। তাঁরা পুলিশের সামনেই অভিযুক্তের কঠিনতম শাস্তির দাবি জানাতে থাকেন। তার প্রতিবেশীরা জানান, প্রমিত আর জি করে অভয়া কাণ্ডের বিচার চেয়ে রাস্তায় নেমে রাত জেগেছিল। তার বাবা লাইব্রেরিয়ান। মা আবৃত্তি শেখান। দিদিও উচ্চশিক্ষিতা। মূলত প্রমিতের বৈদ্যুতিন গ্যাজেটের উপরই নজর ছিল পুলিশের। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈদ্যুতিন নথি উদ্ধারও হয়েছে বলে পুলিশের কাছে খবর। সূত্রের খবর, কালীঘাটে মনোজিৎ ও তিলজলায় জায়েবের বাড়িতেও একইভাবে তল্লাশি চালিয়ে ল্যাপটপ ও পেন ড্রাইভের সন্ধান চলছে। ইতিমধ্যেই তিনজনের পোশাক, জুতোও পুলিশ উদ্ধার করে ফরেনসিকে পাঠায়। এ ছাড়াও ঘটনাস্থল তথা কলেজের ইউনিয়ন রুমের বাথরুম ও গার্ডের রুমে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ ও ফরেনসিক ছেঁড়া চুল, রক্তের দাগ-সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী উদ্ধার করেছে। নির্যাতিতাকে পরীক্ষা করে যৌন নিগ্রহ ছাড়াও যে তাঁকে মারধর করা হয়েছিল, সেই প্রমাণও পুলিশ পেয়েছে।

এদিকে, গত বুধবার নির্যাতিতাকে ধর্ষণের আগে পরিকল্পনা করা হয় বলে জেনেছে পুলিশ। বেশ কিছুদিন ধরে ছক কষার পর দুই সঙ্গী জায়েব ও প্রমিতকে সঙ্গে রেখে এই কুকীর্তি করে মনোজিৎ। পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে মনোজিতের বিরুদ্ধে আরও বহু অভিযোগ। গত বছর সহ-আইনজীবীদের সঙ্গে মারপিটের ঘটনার পর মনোজিৎ কসবা থানায় গিয়ে থানার আধিকারিকদের হুমকি দেয়। থানায় তাণ্ডবও চালায়। সেই অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছিল। তবে আলিপুর আদালত থেকে সে জামিন পেয়ে যায়।

আইন কলেজ ছাড়াও দক্ষিণ কলকাতার অন্য একটি কলেজে সে কিছুদিনের জন্য ভর্তি হয়েছিল। সেই সুবাদে মনোজিতের যাতায়াত ছিল ওই কলেজে। কলেজটিতে গ্র্যাজুয়েশন অনার্সে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার নাম করে দুই ছাত্রর কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাঁদের প্রতারণার অভিযোগও উঠেছিল মনোজিতের বিরুদ্ধে। এ ছাড়াও ২০২২ সালে মনোজিতের বিরুদ্ধে যে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছিল, সেই তদন্তের অগ্রগতিও জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *