প্রত্যাবর্তন
প্রশান্ত গুহমজুমদার
বঙ্কিম বটে, তথাপি অস্বচ্ছ নহে। স্বেদবিন্দু, নজরেই আসে, অধিক বিশ্রাম শেষে
যেরূপ ওষ্ঠে, ঘাসের, আলোর প্রভাতে। এই দ্বিধা হইতে যেরূপ, তাহা নহে।
এই বাক্যালাপ-ও নহে। অসম্বৃত শব্দে কেবল রাত্রি বাজিবে। আসিবে কি না,
বয়স্যসকল তাহার বুঝিবে। চক্ষু দুইটি দেখি আমি। ক্ষীণ স্রোতা এক দেখি।
তাহার ওপারে কিছু পাখি। আবশ্যক। বরাভয়ে করতল পাতি। ধারণা করিব বলিয়া
কিছু আহরণ করি। মৃত্যু এইখানে কেবল অসত্য।
প্রত্যাবর্তন, তাই মোমবাতি জ্বালি। শোক নহে।
ইতিহাস
সেইসব পাতা আর গুল্মের ইতিকথা এই। এবং ভস্মের। একদিন। উত্থান
নানাবিধ মৃত্তিকার সমূহ উপায়ে। যেরূপ অগ্নি। অন্তরালের এক প্রাচীন নৃত্য।
বোধ করি, এক যাত্রার। অপূর্ব ইতিহাস এক।
বিরহ
চিরঞ্জিৎ ভাণ্ডারী
শুধু পুড়তে থাকি তবু ছাই হতে পারিনি–
যদি আসো পথ ভুলে,
কে তখন আঁচল দিয়ে ঘাম মুছিয়ে দেবে।
তোমার থাকাটা বারবার ছুঁয়েছি
ততবেশি গাঢ় হয়েছে সোহাগ আদরের রঙ।
কেবল তো দূরে সরে যাওয়া;
তা বলে কি বিলুপ্ত চোখে চোখ রাখা–
মুছতে গিয়ে গড়েছি তাই অনুপম সুন্দরে
পরম নিষ্ঠায় পায়ের ধুলোকে করেছি অঙ্গরাগ।
জানি সে তো এক আত্মা
এক দেহ শোক নিলে
এক দেহ রাখে নির্জলা উপোস।
বিরহ আসলে একে অপরের প্রতি কতখানি পাগল
তা যাচাইয়ের সোনালি সময়
মিলনের সম্ভাবনা যেখানে ভোরের আলোর মতো চিরবাঙ্ময়।
অবশেষে
সংকলিতা সান্যাল
কে ফেলে যায় ঘুমের পাশে গোলাপ?
শরীরজুড়ে বাসি ফুলের গন্ধ,
কোন ঘরে ওই কথায় কথা বাড়ে,
কোন ঘরে আজ কথার দরজা বন্ধ?
কার জন্য নিকষ কালো রাত,
জানলা ধরে দাঁড়িয়ে থাকে রোজ–
হারিয়ে গেছে ছায়াপথের বাড়ি
কেউ পাবে না ধ্রুবতারার খোঁজ।
কারোর আছে নীলচে এক জীবন,
যত্নবিহীন, বড্ড শিথিল মন;
কে যেন খুব বুক ফাটিয়ে কাঁদে-
‘আমার গল্প একবারটি শোন।’
মেঘলা আকাশ, অভিমানের বাড়ি
চোখের পাতায় বাষ্প ঘিরে আসে–
সব পেয়াদা এমনি হেরে গেল,
কেউ বুঝি আর রইল না তার পাশে।
গান
সুবীর সরকার
ভয় পাই, তবুও নদীতে নামি।
হাঁসের পেছনে হাঁটি, সামান্য দূরে রবারবন
শীত ঘন হয়ে আসে।
দুঃখ ঘন হয়ে আসে।
মহিষ আছে, মৈশাল নাই
বাথানে বাথানে ঘোরে মৈশাল বন্ধুর গান।
অনন্তের পথে
ঝুটন দত্ত
শীত আসেনি,
তবু্ও দাঁড়িয়ে আছি পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে
গায়ে লেগেছে ঘন দুধের মতো কুয়াশার চাদর।
অন্ধকারের প্রকোপ সরে যেতে
জেগে থাকা নক্ষত্রেরাও আড়াল হয়,
ঝলমলে রোদের সাথে চলতে থাকে আমার কথার ট্রেন।
অনন্তের পথে কী নামে ডাকব বলে না নদীর স্বচ্ছ ঢেউ,
জন্মান্ধ চোখ আলোর ইশারায় শুধু খুঁজে চলে তোমাকে।
যাপন
জয়ন্ত সরকার
শব্দহীন এক মীমাংসার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছি আমি।
যুক্তির একেকটা স্পর্শে ছুঁয়ে দেখছি
সুখ-দুঃখের যত বাঁক।
অনুষ্ণ সম্পর্ক নিয়ে জেগে আছে একাকী দাম্পত্য।
অনেকটা অন্ধের মতো বেঁচে আছি আজও ভালোবাসায়
চোখ জুড়ে ফোঁটায়-ফোঁটায় গোধূলি চুইয়ে পড়ছে।
মৃত্যু সত্য
সুব্রত দেবনাথ
(উৎসর্গ- জুবিন গর্গ)
(১)
মৃত্যু চরম সত্য— শব্দগুলো কাচের মতো খসে পড়ে মুখে,
শব্দ করে নদী চলে যায় পিছন থেকে, নীরব অথচ সজীব;
রাতের ফাঁকে জীবনের আলো একটাও ফেলে রাখে না, সবই তুলে নেয়,
হাতের রেখায় লেখা কাহিনী শেষের দিকে হাঁটে ধীরে ধীরে— কোনও তর্ক নেই।
আমি দাঁড়িয়ে দেখি শবযাত্রীর নীরব চলা, মানুষের হাসি ভাঙে ধুলোয়,
ফুল জানে : ভোরে ফুটে মৃত্যুর রহস্য বুকে নিয়ে হাসে গোপনে,
সব স্মৃতি এক ঝুড়িতে ভরে রাখে পৃথিবীর ঠোঁট, কালো আর সাদা মিলিয়ে,
মৃত্যু চরম সত্য— আমরা সবাই সেই নীরব প্রত্যাশায় হাঁটি, খালি পায়ে।
(২)
চোখে চোখ রেখে বলল সে— সব কথা শেষ হবে একসময়,
সূর্যের মতো নিঃশব্দ, অচেনা, অদেখা কিন্তু অনিবার্য।
ঘর ভাঙে, ছবি মাটিতে পড়ে কাচ হয়ে ভেঙে যায়,
কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে থাকা মুহূর্ত একদিন ছেড়ে যাবে;
তবু এই সংক্ষিপ্ত বেঁচে থাকা— এক ধোঁয়ার মাঝে জ্বলন্ত নাচ,
মৃত্যু চরম সত্য— কিন্তু সে সত্য না থাকলে প্রেমের স্বাদ কি হত?
আমরা হাসি, চুম্বন দিই, বাতাসে গোপন আশ্বাস ছুঁয়ে যাই,
শেষে সব কিছু মিলিয়ে যায় এক রঙে— শান্ত, সরল, অনিবার্য।
The put up কবিতা appeared first on Uttarbanga Sambad.