কবিতা – Uttarbanga Sambad

কবিতা – Uttarbanga Sambad

শিক্ষা
Spread the love


নীল বনে ঝড়

অসীম শর্মা

জখম হবার পর এখন মাংসাশী হয়ে উঠেছে

জখম হবার পর চোখ দুটো আরও ঘোলাটে

জখম হবার পর ঘাড়ের কাছটায় শিরশির দীর্ঘ রোম ঝুলে পড়ে শ্বাপদ অহংকারে,

খুর আর শিং গলে থাবার গায়ে গায়ে নখ বড় হয়

চোখ ফেলে রাখে দূর জঙ্গলের ভেতর

ওখানে পড়ন্ত বিকেলে ছায়ার চলাফেরা

দু-দুটো শান্ত চোখ নীলচে সবুজ

কাচের ওপার থেকে ফিরে দেখে

উদাসীন হাওয়া বয় বনে

মাংসাশী নখ দিয়ে ছিঁড়ে খাই কবিতার মগজ

অস্থিগান আর পাঁশুটে চামড়ায় ঝড় ওঠে চলে

মধ্যিখানে ধুলো জড়ো হয়

আকাশের দিকে ওড়ে আর ঝাপসা করে চোখ

রেটিনা পাথরের মতো শক্ত হয়

নীল হরিণীর গায়ে আজ রঙিন ছোপছোপ

কস্তুরী কার কাছে রেখে আস দূরে?

 

স্মৃতি

মণিদীপা বিশ্বাস কীর্তনিয়া

কী যেন ভেঙে গেল চোখের ভেতর
তুমি দেখবে কি?
অতদূর পৌঁছাবে কি তুমি
যখন ঘুমিয়ে পড়েছে পৃথিবী
মিথ্যে কথা থেকে হাঁটতে হাঁটতে এতটা এলাম
ভালবাসতে পারোনি বলে দুঃখ নেই
এমনই হয়
পাহাড়ি রাস্তায়
মোহ থেকে সবটুকু নীল নিয়ে
দাঁড়িয়ে থাকে খাদ
পাথরে দোল খায় সংসার
জেরেনিয়াম ফুলের সাথে
রোদে পিঠ দিয়ে হিসেব লেখে হাওয়া
কী যেন ভেঙে পড়ল একটু আগেই
চশমা খুললে যেই
তোমার চোখে দেখি পড়ে আছে ভাঙা শহর
বুনো জেরেনিয়াম আমাদের হিসেব লেখার রোদ্দুর।

 

ছাপহীন

মহুয়া রুদ্র

এতটা নিঃশব্দ হেঁটে যাওয়া

ঠিক পোকার মতো- কোনও ছাপ পড়ল না,

একটা করে মেঘের দিনলিপি ভেসে গেলে

বুড়ো মহীরুহর শিরা একটু করে শুকোয়

সন্ধ্যার বিষণ্ণ বেগুনি আলোয় কখনও

আরও একটু আঁধারে

হলুদ পাতারা কখন খসে পড়ে

কেউ টের পায় না।

তবু পিঁপড়েরা নিয়ম করে সার বেঁধে এগিয়ে যায়,

ছেঁড়া কাগজে বিবর্ণ দিনলিপি পড়ে থাকে

ফেলে যাওয়া রাস্তার পাশে অবহেলায়।

মহীরুহের নীচে হলুদ পাতার আস্তরণ জমে….

কখনো-সখনো কোনও পিঁপড়ে একেবারে দলছুট হয়।

 

বর্ষা 

মনোয়ারা নৌরিন 

কোনও কোনও কাছে আসায় ছেড়ে যাওয়া লেখা থাকে।

রোদের লুকোচুরি অজুহাত। গায়ে মাখি না।

না ছুঁয়ে বেরিয়ে যায় রাস্তা, কোলাহল। বয়ে যায় হাতের ঢেউ।

এই না ছোঁয়ার অভিমান শুধু যতক্ষণ তুমি থাকো।

কমছে গভীরতা। ব্যথারা জমতে জমতে দ্বীপপুঞ্জ।

তোমার প্রবাসী চোখ, আমার স্বরচিত কবিতা।

ছেড়ে যাওয়া লেগে থাকে। ফিরে আসার একক রাস্তায়।

 

বিন্দু অথবা

নবনীতা সরকার

বৃত্তের অহংকার ছোট হতে হতে
কবে যেন বিন্দু হয়ে যায়
পরিধি মিলিয়ে যায় গোপনেই
কিছু নেই…আর কিছুই বাকি নেই জেনেও
দু’হাতের মুঠোয় আটকে রাখতে চাই
জীবনের ছোটখাটো ভিড় অথবা ছাইভস্ম–
কখনও বা বিন্দুর বাইরে ছিটকে পড়ে
সংকোচ….তিক্ততা

টেনে তুলে এনে জড়ো করি অকুলান স্থানে।

অস্তিত্ব নামক বস্তুটি আদতে বড় বালাই…
সবকিছুর ভেতরে ও বাইরে
নিয়তই অভিমানের পর্দা বিছিয়ে রাখে
ভরিয়ে রাখে ভ্রমে….

আমাদের জীবন আসলে বৃত্ত থেকে
বিন্দু হয়ে যাওয়ার,
আবার সেই বিন্দু থেকে শূন্যে
মিলিয়ে যাওয়ার একটা
অবিরাম প্রক্রিয়া মাত্র;

আমরা ভুল করি নদী ভেবে…

 

কাহন

অমিতাভ সরকার 

আমাদের সবার জীবনে একটা করে ছাদ আছে

ভালো-খারাপ যেমনই লাগুক

ক্লান্ত হলে আজও খোলা আকাশের নীচে গিয়ে দাঁড়াই

বয়স যত বাড়ে সিঁড়িগুলোই বেশি আপন মনে হয়

একদিন ইচ্ছেগুলোও ঢাকা পড়ে,

ভালোবাসা মুছে গিয়েও রয়ে যায়,

সময়ও সব মনে রাখতে রাখতে ক্লান্ত হয়ে ওঠে,

কিন্তু ছাদ সেই একইরকম যত্নের গাছগুলোকে একলা গান শুনিয়ে চলে-

রোদ আছড়ে পড়ে

জল ছাপিয়ে ওঠে

মেঘ আসে, সরেও যায়, কোনো কথায় কেউই কারোর ধার ধারে না

তখনও ছাদ ছাদই থাকে

আসব না ভেবে চলে গিয়েও তাই বারবার ফিরে আসি

একেকটা রাতের ঢল- আরেকটা নতুন দিন

ঘুম-জাগার এই লুকোচুরি খেলায় বুঝতেই পারি না,

কখন আমি সেই পুরো আকাশটাকেই পার করে ফেলেছি…

 

বটগাছের ছায়া

পিনাকী রঞ্জন পাল

পুকুরপাড়ের পুরোনো বটগাছটা

আমাকে চেনে-

আমি যতবার এসেছি,

সে ততবার পাতার ফাঁকে

রোদ ছেঁকে দিয়েছে আমার জন্য।

হাওয়া এসে

আমার চুলে খেলেছে,

ডালে বসা শালিক

চোখ মিটমিট করে দেখেছে-

কেউ যেন নীরবে বলেছে,

‘তুমি একা নও।’

মানুষের ভিড়ে হারিয়ে গিয়ে

যখন ফিরে আসি এই নীরব কোণে,

বুঝি-

প্রকৃতি সবসময় অপেক্ষায় থাকে

নিঃশব্দ বন্ধুর মতো।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *