কবিতা – Uttarbanga Sambad

কবিতা – Uttarbanga Sambad

ব্যবসা-বাণিজ্যের /BUSINESS
Spread the love


শ্যামচন্দ্র নাহি রে
তৃষ্ণা বসাক

সবুজ আর হলুদ গলে গলে চুইয়ে আসে স্ক্রিন থেকে,
আমার ভেতরে একটা মাঠ ঢুকে যায়, আমার ভেতরে দু’-তিনটে পুকুর,
তার যাবতীয় খলবল সহ ঢুকে যায়,
আর কিছু না, একটা ছলাং মারা দরকার শুধু-
তাহলেই সেনসেক্স উঠে যাবে-
আমাদের সব আছে-
শুধু দুজনের হাঁটার মতো রাস্তা,
পেছন থেকে জড়িয়ে ধরবার মতো আকাশ,
পায়ে পায়ে চলা পুকুর-
হলুদ বাড়ির খোলা সবুজ জানলা-
শুধু আমাদের শ্যামচন্দ্র নাহি রে, কোথাও নাহি রে!
#
আমাদের হ্যাপ্পি নিউ ইয়ার আছে, এক টুকরো বাবানের কেক,
পাড়ার দোকান, ছুড়ে দেওয়া, লুফে নেওয়া কুকুরের দল,
আমাদের মানিক, জয়ন্ত, ইরম্মদময় বজ্র,
মিঠে রোদ, হিমেল হাওয়া, মধুপুরের বাড়ি, বিমল কর,
মাঝে মাঝে বেরিয়ে পড়া, মাঝে মাঝে বীর্যপাত,
স্খলন, লোকার্পণ, পাপ, আর লিপস্টিক।
স্ট্রবেরি স্বাদ, স্ট্রবেরি স্বাদে একটু কফি, আহা!
সব আছে,
২০৬ বাসস্ট্যান্ড, বাস আর চলে না, তবু নামটা-
শুধু আমাদের শ্যামচন্দ্র নাহি রে, কোথাও নাহি রে।

 

ওপারের চিঠির অপেক্ষায়

অজিত ত্রিবেদী

 

শিকল ওঠে, নেমে যায়—-

অদৃশ্য গারদ পা থেকে শূন্য অবধি

মাঝখানে বাঁজাগাছ ফুল ফোটাচ্ছে সূর্য ওঠাচ্ছে,

সপ্তাশ্ব নেমে আসছে, মাটি ছুঁয়ে চাঁদ হাঁটছে

ঘুমিয়ে পড়তে শেষবার,

তবু শিকল থামে না, গারদ বেড়ে যায়

পাতাল ছাড়িয়ে…

পর্দার আড়ালের বাজিগর সমস্ত জোয়ার-ভাটার ভেতর

পায়চারি করছে স্বাধীন,

দৃশ্যের দর্পণে পিছলে যাচ্ছে যাবতীয় উত্থান—

পতন পার হতে গিয়ে পুনরায় ব্যূহে, সময়ের ডাকঘরে

থমকে থাকা ওপারের চিঠির অপেক্ষায়!

 

 

রাই

প্রবীর ঘোষ রায়

 

হয়তো তুমিই ঠিক,
আমার বোঝায় শুধু ভুল,
ভালোবাসা আর কিছু নয়
সবুজ ঘাসের বুকে
ঝরে পড়া সহজ বকুল।

হয়তো তুমিই ঠিক,
যুদ্ধে যায় না জেতা মন,
ভালোবাসা তটিনীর মতো
অবাধ নিবিড় তার চলা
অনুভব গভীর গহন।

জোয়ারে যে ঘর ভেসে যায়
ফেরানো যায় না তাকে আর,
ভালোবাসা হয়তো বা পারে
জেগে ওঠা কোন নয়া-চরে
গড়ে দিতে বসত আবার।

চলো ফের হাতে হাত রাখি
উদয়ের দিকে হেঁটে যাই,
আলো দিলে নতুন সকাল
আমি হব গোঠের রাখাল,
তুমি চির-জন্মের রাই।

 

 

ক্ষোভে আর শোকে

 

সিদ্ধার্থ সিংহ 

 

থমকে গিয়েছে সব আজকে হঠাৎ

হয়েছে সকাল, তবু উঠছে না সূর্য

বাতাসও গুম মেরে বসে আছে ঘরে

বৃষ্টিকে বুকে নিয়ে মেঘ থমথমে।

 

টিভিতে খবর দেখে ক্ষোভে আর শোকে

ফুটছে না বেল, জুঁই, টগর, মালতী

নদীতেও খেলছে না তিরতিরে ঢেউ

পাখিরা ঝিমিয়ে আছে এ ডালে ও ডালে।

 

রাজনীতি এ রকম! এত ভয়াবহ!

দোয়ায়নি গোরু কেউ, লেপেনি উঠোন

উনুন জ্বালেনি কেউ, কাটেনি আনাজ

শিশুরা যায়নি মাঠে, পুকুরে নামেনি।

 

ঘেন্নায় ফিরিয়ে মুখ সব সরে গেছে

প্ল্যাকার্ড-ব্যানার নেই, মিছিল-টিছিল

শুনসান পথঘাট, জ্বলছে না চিতা

বুকের গভীরে জ্বলে কুশপুত্তলিকা।

 

 

এখন বিদায়

 অলোক বন্দ্যোপাধ্যায়

 

এইভাবে শব্দহীন দৃশ্যের মিছিলে যাব কথা ছিল

কথা ছিল শর্তহীন সমর্পণ আমাকে সঙ্গ দেবে ভোরবেলা

সামুদ্রিক মাছগুলি কাচের খাঁচায় আর থাকবে না বেশিদিন

বিদায় বেলার কালে দেখা হল অলৌকিক অন্দর মহলে

তারপর অ্যালবাট্রস পার হল দিকচক্রবাল

 

শরীরের শেষ দ্রোহ আজও কেন মাথা তোলে ঘুমের গভীরে

ছায়াসূর্য ইতিউতি উঁকি দেয় পর্দা ফাঁক করে

বিচিত্র রঙের মৃদু আলো, মায়াবী পানীয় আজও কেন হাতছানি দেয় অসময়ে

 

এখনই তো শেষ হবে অন্তিম আজান

ছুটি চাই, অভিকর্ষ ছিঁড়ে ফেলে পাড়ি দেব দূর নীলিমায়

এখন বিদায়।

 

দুর্বা ঘাস চাপা পড়ে গেছে

রমা ঘোষ

দুয়ারে প্রখর প্রতাপ অসময়ের এ কী পূর্বাভাষ

চাষির খোয়াব মরে গেছে, শুষ্ক শূন্য মৃত্তিকার বাধ ফাটলে

আলের ঘাস চাপা পড়ে গেছে কংক্রিটের মায়াজালে

রোদে পুড়ে জলে ভিজে চাষির পা দু’খানি আজও বড় মজবুত।

এ কংক্রিট চায় না চাষি হালের বলদের দূর্বা ঘাসের পরিবর্তে

মরা নদী আজ বালি আর বেলাভূমিতে ভরে গেছে,

ধেয়ে আসুক উল্কাপিণ্ডের নবাগত বিচ্ছুরণ

শতাব্দীর লাঞ্ছনা আর কলুষিত ইতিহাস ধুয়ে মুছে সাফ করে দিয়ে

পাপের পুরীকে করুক দূষণমুক্ত।

ফুলে ফুলে ছয়লাপ করে ব্যর্থতার মজবুতিতে করুক করাল আঘাত

সত্য নির্ভীক বলে, জেগে থাকা ‘তাঁরা’দের সঙ্গী করে এক হয়ে উঠুক

ভেঙে দিক অসময়ের মেঘেদের সব ছল চাতুরিয়ানা

একটা রেনেসাঁস এবার চাই-ই চাই।

আকাশে আকাশে যুদ্ধ, হঠাৎ মেঘেদের সংঘাত

জঞ্জাল আর জোচ্চুরিয়ানা

সব টুকরো টুকরো করে ভেঙে দিয়ে ভেস্তে নাজালে হোক

সব অনাচারী মেঘেদের আর দুরাগত অভিসন্ধির পর্দাফাঁস।

 

যুদ্ধ 

মণিদীপা সান্যাল

যুদ্ধ দামামা বাজে

পথ জুড়ে সেনা পোশাকের ঝড়

নাগরিক তার কাজে

 

অস্ত্রের ঝনঝনি

বিষধোঁয়া পাকে পাকে জড়িয়েছে

বাসন্তী, কামদুনি

 

ঘর আগলানো কাজ

ভিতরে কামান দাগে এক ও অপর

যুদ্ধ থামে না আজ

 

নিয়তি

শান্তা চক্রবর্তী

 

জীবন বড় অনিশ্চিত—

তিনটি ফুলের মতো শিশু আর মা

ছ’বছর একা থাকা একজন স্বপ্নদর্শী বাবা

পুরোনো পিনকোড বদলে

সবাই একসাথে থাকতে চেয়েছিলেন,

নিয়তির কী নিষ্ঠুর পরিহাস…

পৌঁছোনো হল না সেই নতুন ঠিকানায়—

 

ডাক্তারি পড়া ছেলেগুলো লাঞ্চ করতে বসেছিল

ওরা জানত না এটাই ওদের শেষ খাওয়া,

স্বপ্নগুলো মুহূর্তে ছাই হয়ে উড়ে গেল শূন্যে…

যারা ভাবে, পরে করব, কে জানে জীবন

কাকে কতটুকু সময় দেবে!

 

The submit কবিতা appeared first on Uttarbanga Sambad.



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *