কবিতা

কবিতা

শিক্ষা
Spread the love


এখন বসন্ত

 অরণি বসু 

 

এখন বসন্ত। এখন গাছে গাছে রংবেরঙের ফুল, আর

সারাদিন সারারাত ঝরাপাতার বৃষ্টি।

হাওয়ায় হাওয়ায় ঝরাপাতারা লুটোপুটি খায়,

তার সরসর শব্দে ওলটপালট খায় মন।

 

মন নিজেকে এনে দাঁড় করায় নদীর মুখোমুখি।

এখন বসন্ত। এখন নদী নিজেকে কিছুটা গুটিয়ে নিয়েছে।

তোমার শোকের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া আকুল হাওয়া

তোমাকে ক্রমশ নীরব করে দেয়।

 

এখন বসন্ত। এখন কেউ কেউ সবার রঙে রং মেলাতে বেরিয়ে পড়ে,

কারও কারও যাত্রা ভিতরপানে।

 

কথাটুকু

অজন্তা রায় আচার্য

 

কিছু একটা বলবে বলে এই মৃদুভাষ ভোর ঝরনা খুলেছে

কথাটুকু কি হারিয়ে গেল কোলাহলে!

তোমার অসহ্য যন্ত্রণার কথা জানি

এক অশরীরী মায়াকন্যা  তোমার দেহাতের চারপাশে নিভৃতে নিরীক্ষণে—

 

শরীর খোঁজো — কেবলমাত্র শরীর খোঁজো–

ঠোক্কর খাও

অপূর্ণতার তীব্র হাহাকারের মধ্যে যে জল, সৃজন সাধনে নিষিক্ত হয়।

 

অপূর্ণ থেকো — অপূর্ণ থেকো

বীজপত্রের মাঝখানের জীবন টুকু

আগলে রেখো তাকে

মমত্ব তোমাকে নিয়ে যাবে অনন্ত পর্যন্ত।

 

 

বিমল মালীর ঢোল

সুবীর সরকার

 

এক বৃষ্টির দিনে আপনার সাথে প্রথম দেখা হয়েছিল।

আপনি হেঁটে যাচ্ছিলেন মাটিয়াবাগের দিকে

কাঁধে ঢোল, দু’চোখে লাল টিয়ার ছায়া।

রাজকুমারীর গানের সুর আপনাকে উড্ডীন এক

দুপুরের ভেতর টেনে নিয়ে যাচ্ছিল

এরপর কত কত দৃশ্যের মধ্যে আপনি রূপকথা রচনা

করে গেলেন!

আপনার কাঠিঢোল জাদুকরের রুমালের মতো

কিংবদন্তি হয়ে গেল

আপনি থাকবেন।

গদাধরের পারে পারে দেখব গান আর ঢোল নিয়ে

হেঁটে যাচ্ছেন আমাদের বিমল মালী

 

 

আত্মিক

বাপ্পাদিত্য রায় বিশ্বাস

বাবার জানলার বাইরে

একটা খুব ফরসা সোনালি রঙের বিড়াল

দেয়ালের উপর হাঁটছে

আমি আজকাল বাবার খাটটায় বসে লিখি

বিড়ালটা হাঁটছে,

এদিক থেকে ওদিক

ওদিক থেকে এদিক

বেশ রোগা, ছোট হয়ে যাওয়া একটা বিড়াল

হাঁটছে, পাঁচিল বরাবর

আমার চোখে পড়েছে ওর আসা

খাতা থেকে চোখ তুললেই

চোখে পড়ছে ওর যাওয়া

শান্ত করুণ মুখের বিড়ালটা

একবারও আমার চোখে চোখ রাখেনি…

 

আমি আজকাল মাথা নামিয়ে বাবার খাটে বসে লিখি।

 

দু’মুঠো আবীর 

           মৌসুমী মজুমদার

আগুন জ্বালানো রং ছড়িয়ে ঝরা পাতার দল,

মাটির বুকে আলগোছে আঁচল বিছিয়ে;

রূপ বদলের মায়াবী গল্প শোনায়।

ভালোবাসার আবেশে গাঁথা কাব্যে,

রাগে অনুরাগের সংগীত লহরিতে মন উচাটন –

দখিনা বাতাসের সহসা আলিঙ্গনে প্রকৃতিতে প্রেমের গুঞ্জন;

প্রজাপতি- মৌমাছিদের আনাগোনা কীসের টানে?

বাহারি ফুলের মধু না প্রেমের আবেশ?

শিমুল পলাশ কৃষ্ণচূড়ার হাতছানিতে,

শাল মহুয়ার বনে রঙের বান–

বসন্তের মিষ্টি সুবাসে এ কোন মাদকতা?

অভিমান ভাঙাতে ভ্রমরের আলাপ,

অন্তরার শেষে সঞ্চারীর মূর্ছনায়–

রংধনুর ভেলায় ভেসে, স্বপ্নের জাল বোনা শুরু –

ভুল বোঝাবুঝির বরফ সরিয়ে, মনের জানলা খুলে,

দু’মুঠো আবিরে রাঙা হয়ে উঠুক ভালোবাসার আকাশ।

 

ফাগুন এলে
আশিস চক্রবর্তী
সামনে বয়ে চলা শীর্ণতোয়া নদীটির নাম যাই হোক না কেন
কানুপ্রিয়া বোষ্টুমি তাকে যমুনা বলে ডাকে
ফাগুন এলে কৃষ্ণচূড়া গাছটি লাল আবির ছড়িয়ে দেয়
রাধাচূড়া গাছটির গায়ে আর রাধাচূড়া গাছটি হলুদ রং ছড়ায়

বোষ্টুমির গোবর লেপা উঠোনের চারপাশে কত রংবাহারি ফুল
পলাশ শিমুল রঙ্গনের লাল আভায় রক্তিম হয় আখড়া
ফাগুন এলে বোষ্টুমি দেখে খোলকরতাল আর কত রঙের আবিরে
রাঙানো তার ছোট্ট উঠোনজুড়ে এক নতুন বৃন্দাবন উঠে এসেছে।

 

আতস-কাচ 

হৃষীকেশ ঘোষ

 

জলছবি আর সাতখুন মাফ

আমি আয়নায় দেখি– তুমি কাচ ভাঙার ভয় পাও।

 

রোজ রাতে ঝড় আসে,

তাই বুঝি তুমি জানলা বন্ধ রাখো৷

 

মোম গলে মোম হয়৷

আর চোখের জল?

 

কতজনের এপিটাফে কবিতা লেখা থাকে?

হিসেব ছেড়ে আঁকতে বসি–

কতরাত ঘুম ভেঙে তুমি চুল বাঁধো।

 

রাত ফুরানোর অপেক্ষায়

আমি কখনও বাড়ি ফিরিনি।

 

8

চা বলয়ের ইতিবৃত্ত  

স্মৃতিকণা মুখোপাধ্যায়

ডিমডিমা নদীতীরে ওলাউলি গ্রাম

সে গাঁয়েই বসতভিটে ফুলকি সোরেনের,

ঘরে চাল বাড়ন্ত, মাথায় নেই খড়বিচালি

ফুটো চাল, ফুটো হাঁড়ি মাটি লেপে

ভাত ফোটে, পাতা নেভে পেটে জ্বলে আগুন —

পাতা তোলা বন্ধ,

হাড় জিরজিরে শরীর

কোটরে চক্ষু জিভ-তালু শুকনো,

বাঁচনের তাগিদের চেয়ে

মরণের হাতছানি প্রবল। তবু ক্ষুধা পায়,

পেট জিরোতে দেয় না। এই নিয়েই জীবন।

 

 

The submit কবিতা appeared first on Uttarbanga Sambad.



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *