কবিতা

কবিতা

শিক্ষা
Spread the love


চিলাপাতা জঙ্গলে দেখি

সুবীর সরকার

 

ভয় পাই, তবুও নদীতে নামি।

হাঁসের পেছনে হাঁটি, সামান্য দূরে

রবারবন

শীত ঘন হয়ে আসে।

দুঃখ ঘন হয়ে আসে।

মহিষ আছে, মৈশাল নাই

বাথানে বাথানে ঘোরে মৈশাল বন্ধুর গান।

বুকের ভেতর বাঁশি বাজে।

বুকের ভেতর গাড়িয়াল, নদীর পাড় ভাঙবার শব্দ

চিলাপাতা জঙ্গলে দেখি নিঃসঙ্গ দাঁড়িয়ে থাকা

বিবাগী বাইসন

 

 

চতুরঙ্গ

প্রিয়া মজুমদার

 

নীরব ছাদের ধারে, ধোঁয়ার মতো স্বপ্নে

বসে আছে অনুরাধা— চশমার আড়ালে ঝড়।

তার শাড়ির ভাঁজে আটকে আছে এক

অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি— যেখানে নারী নিজেই প্রশ্ন।

 

দেয়ালের ফাটলে ফিসফিস করে তুলিকা,

বলে— ‘ভালোবেসে ভুল করেছি? নাকি ভুলেই ছিল ভালোবাসা?’

তার রঙের বাক্সে আজ কালো রঙই বেশি,

পালটে গেছে তুলির টান, বদলেছে শরীরের ভাষা।

 

অঞ্জনাদের ঘরে নিঃশব্দ আত্মহত্যা ঘটে রোজ,

দু’চোখে যার অনিচ্ছা— জন্ম দিতে, ভালোবাসতে, বাঁচতে।

সে গর্ভধারিণী, সে নির্বাক সাক্ষী—

বলে ওঠে, ‘মা হওয়া মানেই কি সব মাফ?’

 

শিউলি, শেষ চর— তীব্র, তীক্ষ্ণ, আর খাপছাড়া,

জীবনের স্ক্রিপ্টে সে নিজেই থ্রিল—

একদিন পুলিশের ঘুসি, একদিন প্রতিবাদের রিল,

অন্তঃসারশূন্য সম্পর্কের শহরে তার সাহসে ফাটে কাচ।

জীবন তাদের ঘূর্ণির মতো,

চুলের গোছায় লেগে থাকে শহরের ধুলো।

তবু তারা হাঁটে, জেদে, মেঘে, নিভৃত উত্তাপে—

নিজেকে নিয়ে, একে অপরকে নিয়ে।

 

তাদের গল্প পিচঢালা রাস্তায় লেখা থাকে—

সিগারেটের ধোঁয়ায়, লিপস্টিকের কোণে,

একটা মুঠোফোন চুপ করে সাক্ষী হয়

তাদের প্রতিদিনের বিপ্লবের।

 

তারা তো এই শহরের সবচেয়ে অব্যক্ত,

তবু সবচেয়ে সত্য ছায়া।

 

তবু শহরের জানালায় হঠাৎ বাতাস ঢোকে,

চায়ের কাপ ঠান্ডা হয়, কথা ফুরোয় না।

একেকজন চলে যায়—

অন্য কারো নাম না বলে,

কোনো গল্প শেষ না করে।

 

পিছনের গলির এক কাচভাঙা আয়নায়

তাদের ছায়া আজও হেঁটে চলে—

একটু বেঁকে, একটু ধোঁয়াটে,

তবু বড্ড চেনা চেনা।

 

বরষণ মুখরিত 

শর্মিষ্ঠা (শেলী) চক্রবর্তী 

 

যেমন করে ছুঁয়ে আছো এই প্রহর

কাঠগোলাপের হলুদ স্বাভিমান-

যেমন করে ভালোবাসার এই শহর

কদম ফুলের সন্ধেবাতির গান।

 

তেমন স্বগত কথা ছিল না মিতা,

সুর ভেজানো গল্প বিজন ঘর-

বরষণ মেঘ বিজলী বহ্নিলতা

জল স্পর্শে মন বাদলে ঝড়।

 

সবুজ ঘাসে করতল পেতে রাখি,

বিজ্ঞাপনে অস্মি বৃষ্টি স্নান-

জলবিলাসে ভেজে অরণ্য পাখি

সোঁদা মাটির নিষ্পাপ শিশু ঘ্রাণ।

 

বাদল বড়ো কোমলমতি হৃদয়

মসৃণ তার তানপুরা আলাপন-

মেঘমৃদঙ্গে অন্তরা জলপ্রণয়,

দেশ বন্দীশে নিষাদ আলিঙ্গন।

 

উচ্চারণ ভ্রমে

প্রশান্ত ভট্টাচার্য 

 

এই অনন্ত না-হওয়ার দোলাচলে

ভূগোলের সীমানা ছাড়িয়ে

কিছু কথা বলেছি তোমাকে

একা একা হেঁটে তোমার ধরেছি হাত

বহুদূর গিয়েছি হেঁটে ভ্রূমধ্যসাগরে

 

আবার চলেছি একা উচ্চারণ ভ্রমে

কত কথা আছে বাকি বলিনি পাহাড়ে

বলিনি তো ঝাউগাছ একা হলে থমথম করে

ডাল ফুটতে দেরি হয় কবিতা এলে

 

বোঝোনি তো ভালোবাসা প্রকৃত প্রস্তাবে

সুচারু মানসলোকে স্বর্গচ্যুত ফুল লেনদেন

মেলাতে না পারা অধিবৃত্ত

অক্ষরবৃত্তের জালে কমিক রিলিফ

 

আত্মপ্রতিকৃতি থেকে রোদ সরে গেলে

প্রকৃত সমর্পণের ঋতু

হাসি আর উপহাস সহোদর বলে

দহনের ছায়াপথে ফুলের বাগান

 

আগুন মারিয়ে এসো দেহসংস্করণে

 

 

নীল বসন্তের দূত

মৌ চট্টোপাধ্যায়

 

নীল পায়রা এসে বসেছে

আমার ঝুল বারান্দার কার্নিশে,

তার মণি দু’খানি, আর একটা নীল

আকাশ লিখে দিচ্ছে মুক্তির ঠিকানা।

 

আমি এঁটো বাসন তুলি,

ঘরের ধুলো ঝাড়ি,

পাঁচফোড়নের ঝাঁঝ বয়ে যাওয়া গন্ধে

নীল পায়রার দুটো চোখ শুধু দেখি।

 

আমার ঘরের দেওয়াল নীল,

আমার প্রিয় শাড়ি নীল,

আমার বইয়ের মলাটে নীল-নীল আভা আছে–

শুধু নীল বসন্ত কোনোদিন দেখিনি।

ওই সমুদ্র রঙা নীল পায়রার দুটি চোখ

কী সেই নীল বসন্তের গোপন দূত!

 

বাতিঘর

রাজু রায়

 

মাহেন্দ্রক্ষণ বেশিক্ষণ থাকে না, মিলিয়ে সকাল হয়ে যায়

আকাশ ভরা তারা, বাঁকা চাঁদের হাসি

জোনাকি ভরা মেঠো পথ

কত সহস্র কীটপতঙ্গের উচ্চরব, নিঃসঙ্গ রাত–

যে বিরাট জীবনের পুলক এনে দেয়

মুহূর্তে মেঘে ঢাকা পড়ে যায়

হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ে নুন ভাতের চিন্তা

ঠিক মেলাতে পারি না যেন রাতের সঙ্গে দিন

আমার জগতের সঙ্গে তোমার জগতের

ভারসাম্য বজায় রাখা বড্ড কঠিন

দিশেহারা মাঝসমুদ্রে দিক হারিয়ে ফেলা

নাবিকের মতো তখন বাতিঘর খুঁজি

গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে ছায়াপথ পেরিয়ে

ব্যোম পথে আমার যে এখনও পথ চলা বাকি।

 

খবর হোক শাশ্বত জল

তাপসী লাহা 

 

রাঙা আলোয় বুদ্ধের  ধ্যানরত মুখ

প্রদীপটি টিমটিম, কাঁপা সতর্কে ক্ষয় সময়

উঠে দাঁড়ায় মেঘ

নীল বঙ্কিম কোণে শিষ্যভাব জেনে প্রজ্ঞায় স্থির থাকা

এভাবেই হোক শ্বাপদের স্ফূর্তিপদে ঝিম লেগে যাওয়া….

 

কশেরুকা ছুঁয়ে ভ্রম মৃন্ময়, ওঠানামা করে

সিঁড়িবেয়ে মতিভ্রম বালকের কাঁচা পদচারণা।

পুড়ে যায় সৌধের মতো কাষ্ঠল সব নাম

প্রতিষ্ঠার মায়াগাছেরা!

 

অনড়পদে সায় নেই শুধু তরল হোক আলো ও প্রেম

আততায়ী আসে সমুখে

প্রভু পানে মুখ থির রাখি তবু।

 

পবিত্র জ্ঞানাধার, ওহে নিষ্কামনার বীজ, চির বসন্তবৌরি জীবন

একটিবার, ওহে প্রভু, জীর্ণ হৃদবনে আসনতম এসো পুণ্যধর

ভক্তি গেঁথে আজ গলে দিই তুলে

স্বনিবেদিত যা কিছু মূক দৃঢ়ে জেনেছি নিজ বলে।

 

 

 

 

 

 

 

The submit কবিতা appeared first on Uttarbanga Sambad.



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *