রামধনু
পার্থসারথি চক্রবর্তী
শহরের প্রভাতি আলপনায় মেঘের আনাগোনা
নিয়নের ঘোর কাটিয়ে অপেক্ষা সূর্যের
কৃষ্ণচূড়ায় লেগেছে আগুনের রং
বৃষ্টিভেজা নদী নামে সুন্দরী সাজে।
প্রাণের যৌবন, নতুন স্পন্দন জাগে তুলির ছোঁয়ায়
বর্ষার সুর বাজে নূপুরের চেনা তানে
দুপুরের নিঃশ্বাস, বর্ষার স্পর্শে হয় সুরেলা
রিমঝিম বৃষ্টিতে কত জলছবি আঁকা হয়।
কত পথ, ঘাট জলে ভরে যায়
পৃথিবী আবার প্রাণসবুজ হয়ে ওঠে
সময়ের শস্যখেত সোনায় ভরে যায়
আকাশের ক্যানভাসে রামধনু দেখা দেয়।
শব্দের ভেতর অনেক শব্দ
টিপলু বসু
একটি যুদ্ধের ভেতর অনেক যুদ্ধ
জীবন্ত লাশের দল পাখি খুঁজছে
দেখছে অশ্লীল শব্দ করে উড়ছে ড্রোন
শব্দের ভেতর অনেক শব্দ
হুংকার ঝনঝনি কান্না হাহাকার আর্তনাদ ও উল্লাস
তুমি আমি কখন কোন শব্দের ভেতর ঢুকে যাব
সময় একদিন অবশ্যই বলবে সে কথা
আপাতত কান পেতে আছি
অশ্লীল শব্দগুলি পেরিয়ে
ফুল ফোটার শব্দ শোনার জন্য
গুনগুন শব্দ করে কবে যে মৌমাছিরা
পরাগ মিলন ঘটাবে তোমার আমার
দ্বিধা-দ্বন্দ্ব
পার্থ সরকার
ভাবছি,
কী ভাবছি,
কী কারণে ভাবছি কী জন্য ভাবছি
এইটেই জানি না।
এ দ্বিধা আমার কাটে না
এ দ্বন্দ্ব আমার পিছু ছাড়ে না।
সব দিকে শুনি মোটিভেশনের কথা
জানি এসব ক্ষণকালের কথা
সবই হচ্ছে সেল্ফ মোটিভেশনের ব্যথা।
ভাবছি শুধু
আমিই ভাসছি দ্বিধা-দ্বন্দ্বে,
তারপর দেখি সবাই ফেঁসেছে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে,
আরে দেশটাও দেখছি ভাসছে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে।
জীবনতরী
দেবাশীষ গোপ
ছিলে যে বড় আশায়
সাধ মিটল কঠিন পরীক্ষায়
জীবনশৈলী অবহেলায়
কখনও বা শুধরায়
বাঁধ ভাঙা উচ্চাশা
দিতে পারে হতাশা
নবপ্রজন্ম আজ
সবদিকেই ফানুস, কেঁচে গণ্ডূষ
জীবন জোয়ারে ভেসে বেড়াই
জীবনসায়াহ্নে পথ হারাই
সুখের সন্ধানে ব্রাত্য জনে
হাজার প্রেমে আগুন জ্বলে
শিষ্টাচার লুটোপুটি
হাওয়ায় ভাসে খুনশুটি।
উত্তরণ
জয়ন্তকুমার দত্ত
কোনও এক বৃষ্টিদুপুরে তুমি আসবে বলে
আসন পেতে রেখেছিলাম উত্তর কোণে।
বৃষ্টি ছাপিয়ে নদী হয়ে উন্মুক্ত করেছিলাম দুয়ার প্রান্ত।
কিন্তু বৃষ্টি এল কোথায়!
নিয়ন বাতির নীল আলোর আড়ালে রাত-রাত
ধরে যে কলঙ্ক তুলেছি সিঁথিতে
বৃষ্টিতে তা ধুয়ে যাবে বলে মাথা বাড়িয়েছি।
কিন্তু বৃষ্টি এল কোথায়!
বরং ঈশানকোণে কালো মেঘের
আড়ালে রৌদ্র উঁকি মারে হঠাৎ।
আমি নিয়ন বাতির তার ছিঁড়ে ফেলি।
তবুও আমার বৃষ্টি চাই।
শব্দ
সৈকত পাল মজুমদার
প্রত্যেক শব্দ যখন রং মাখে
কিছু শব্দ যখন পোশাক পরে
তখন শব্দের জোনাকি, বাক্যের
চারপাশে বারবার উজ্জ্বল হয়।
যেভাবে মৈত্রেয় জাতক, মেঘাবৃত
আকাশ উজ্জ্বল করে হয়, প্রস্রবণের
সুন্দর, সজল, প্রকৃত আহ্বায়ক।
প্রত্যেক শব্দ গৌতম গোত্রজাত
প্রত্যেক বাক্য হিমালয় থেকে নেমে আসা
রং-রূপ-রসের চিরকালীন রিভিউ।
তবু বরফের সুতোয় কুয়াশা মুড়ে
লতা নিংড়ানো পথে, রাই শাকের ভিড়ে
একা বসে, একা বসে তথাগত।
প্রতিদান
কণিকা দাস
এই হাতের দিকে তাকিয়ে বলো
এখানে আছে কি কোনও কলঙ্কের চিহ্ন?
কত অনায়াসে ধরেছিলে এই হাত
রাশি রাশি আত্মবিশ্বাস আর
অনুভূতির সুখটুকু নিয়ে পায়ে পা মিলিয়েছিলাম
এই কি তার যোগ্য প্রতিদান!
অহমিকার প্রাসাদ খসে পড়বে যেদিন
সেদিন বাড়িয়ে দিও তোমার হাত
দয়া নয়, প্রেম লিখে দেব দেখে নিও।
অবিশ্বাস ঘন হলে
প্রশান্ত দেবনাথ
কেবল নিজের কথা ভাবি আর সং সেজে থাকি
দিনরাত ঘুঘু ডাকে, ঝরে যায় গোলাপের কুঁড়ি
কুঁড়িগুলো পায়ে দলে রঙিন উৎসব, এখানেই
রং পালটে শুদ্ধ হয় গলি থেকে উঠে আসা কারা
তাদের পিছনে আলো, সামনে আলো, তাদের রঙিন
প্রতিশ্রুতি শুনে হাসে মঞ্চ, হাসে চায়ের দোকান
হাসির আড়ালে থেকে সন্তানের ভবিষ্যৎ দেখি
অবিশ্বাস ঘন হলে, আমরা খামচে ধরি নিজেকেই
The submit কবিতা appeared first on Uttarbanga Sambad.