- সুদেষ্ণা মৈত্র
১
উৎসব
ব্যথা কি দুঃখের কোনও নাম?
তোমায় ছুঁলেই বুকে শীতল চাবুক এসে পড়ে
ঠোঁটে রাখা অসমাপ্ত খই জমতে জমতে
কিছু বালি হয়
চিকচিকে রোদে কাল বালিশ রেখেছি,
শুকোলে শোওয়ার ঘর দেব
এ ঘর তোমার ডাকে উলুধ্বনি দেয়
ফাঁকা শাঁখে শ্বাস ছাড়ি রোজ
তোমায় ছুঁয়েছি
এরপর ছোঁব না কখনও
বালি খুঁড়ে জল নেমে আসে
জল কি ব্যথার কোনও নাম?
ব্যথা কি সুখের মতো উৎসবময়?
২
চেনা
তোমার নিয়ত চেনা হই
অচেনা ছিলাম ভেবে
এই ব্রহ্ম,
আতপ বাহার,
ছাই হয়ে যায়
আমাদের দেখাকল্প,
আমাদের ছেড়ে রাখা পথ
আবার হাঁটব বলে ক্রমে
পিছু হতে হতে
নেই
এভাবেও চেনা হওয়া যায়?
তুমি যেন সব চিনে ফেলে,
পায়ের সরলরেখা ধুয়ে ফ্যালো,
খুলে দাও আচ্ছন্ন আঁধার
খামোখা তোমার চেনা,
তোমাকে চিনিয়ে দেয়
অচেনা আরোপ।
৩
অপেক্ষা
যেন শেষে রিক্ত ঋতুতে থেমে গেলে
এনেছি ফসল-ভাষা, ভিক্ষাভাণ্ডে জমানো খরাজ
রাজস্ব সময় ছেড়ে তুমি আমি হাতে নেব
ন্যুব্জ ধানের ছড়া, দোয়াবের ঘ্রাণ
শীতগ্রহ যায়নি এখনও? শিলাখণ্ডে অহল্যার কণা,
তুমি আর ঘিরে রাখছ না, ইকতা-বছর,
পিছিয়ে দিচ্ছি কাল, বটপাকুড়ের বুকে
দুধজল, লুকোনো ছায়ায়, আকাঙ্ক্ষা বেতফলে
হাওয়া হয়ে ঝরে-
শ্রাবণের আগে যেন শূন্যতা কাটে।
৪
আধখানা
সে তুমিও বিরল কলস
যতখানি ভরি, তার অর্ধেক শূন্যতা টানে
ভিন্ন গাত্রে জল ঢেলে দিবস ফুরোয়
অবশেষে নীল নভঘন অন্ধ হতে হতে
মুঠোয় বদ্ধ শুদ্ধ হাওয়াটুকু
পাতা নড়ে, কলসের ঘ্রাণ
দিগন্ত বিস্তৃত ঋতু কুসুমপ্রসাদ
বাকি আধখানা ‘তুমি’ রিদ্ধ করে, অতঃপর
দূরত্ব বাড়ায়।
৫
ছায়াদেবতা
কতখানি মিথ্যে গেঁথে বৃক্ষদেব ছায়া দিতে রাজি?
তোমার নিপুণ রোদে শামিয়ানা যথার্থ বিরাজে
এভাবে আকাশ রেখো, মেঘ রেখো, সন্ধ্যা টাঙিয়ে
বৃদ্ধ সময় এসে জুড়িয়েছে ডানা আর কপালের ঘামও
তুমি তো স্নেহের গৃহ, রোজ গড়ে তোলা পক্ষপিঠ
পিঠের ওপাশে কাদা, আধভাঙা নৌকো, নাবিক
ওসব দেখি না প্রিয়, শুয়ে পড়ি, তোমার সোপানে
রাখি মধু, ঘৃত, দেহ, সপুষ্পক চন্দনের ঘ্রাণে।
The publish কবিতাগুচ্ছ appeared first on Uttarbanga Sambad.