কঠিন চ্যালেঞ্জ

কঠিন চ্যালেঞ্জ

আন্তর্জাতিক INTERNATIONAL
Spread the love


২০২৪-এর ৯ অগাস্ট আর ২০২৫-এর ২৫ জুন। ব্যবধান সাড়ে দশ মাসের। প্রথমটিতে ঘটনাস্থল ছিল আরজি কর মেডিকেল কলেজ। পরের ঘটনাস্থল দক্ষিণ কলকাতার একটি আইন কলেজ। গত বছর মেডিকেল কলেজের চারতলার একটি হলঘরে গভীর রাতে চিকিৎসক পড়ুয়াকে ধর্ষণ ও খুন করা হয়েছিল। এবার আইনের ছাত্রীকে কলেজেরই নিরাপত্তারক্ষীর রুমে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করা হয়েছে।

ধর্ষণের ভিডিও করেন অভিযুক্তরা। অভিযুক্ত তিনজনই তৃণমূল কর্মী। মূল পান্ডা মনোজিৎ ওই কলেজের প্রাক্তনী, কিন্তু এখন কলেজের অস্থায়ী শিক্ষাকর্মী। বাকি দুজন ছাত্র। এই তিনজন ছাড়া কলেজের এক নিরাপত্তারক্ষীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গণধর্ষণের ঘটনা গত ২৫ জুনের। জানাজানি হল ২৭ তারিখ রথযাত্রার দিন। অক্ষয় তৃতীয়ায় দিঘায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনের দিন টিভির চ্যানেলে চ্যানেলে কত প্রচার। ২৭ জুন রথযাত্রার দিনে টিভিতে দিনভর একটাই খবর, দক্ষিণ কলকাতার আইন কলেজে গণধর্ষণ।

অধিকাংশ টিভি চ্যানেলে দিঘার রথযাত্রা সেদিন ভালোভাবে সম্প্রচারই হয়নি। উলটে তৃণমূল কংগ্রেসের শশী পাঁজা, ফিরহাদ হাকিম, কুণাল ঘোষরা সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকলেন রাজ্য সরকার এই ঘটনায় কত দ্রুত পদক্ষেপ করেছে, ঢোল পিটিয়ে তা প্রচার করতে। ততক্ষণে সকলেই জেনে গিয়েছেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, মালা রায়দের সঙ্গে ছবিতে দেখা গিয়েছে মূল অভিযুক্ত মনোজিৎ ওরফে ম্যাঙ্গোকে।

ঘটনার কথা শোনামাত্র দিঘা থেকে কলকাতা পুলিশের কমিশনার মনোজ ভার্মাকে ফোন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক বছর হতে চলল, অথচ এখনও আরজি কর মেডিকেলের ঘটনার রেশ কাটেনি। সেই মামলায় সাজা ঘোষণা হলেও তাতে নির্যাতিতার বাবা-মা খুশি নন। তাঁরা মনে করেন, তাঁদের মেয়েকে ধর্ষণ ও খুন একজনের কাজ নয়। আরও অনেকে জড়িত। কিন্তু মাত্র একজনের সাজা হল।

সেইজন্য তাঁরা হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণে সিবিআই তদন্ত চেয়ে মামলা করেছেন।‌ সেই মামলা বিচারাধীন থাকাকালীনই দক্ষিণ কলকাতার আইন কলেজের ছাত্রীকে গণধর্ষণের ভয়ংকর ঘটনাটি ঘটে গেল। রাজ্যে একের পর এক নারী নির্যাতনের ঘটনায় বেশ বিপাকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। বিশেষ করে খাস কলকাতায় সাড়ে দশ মাসের ব্যবধানে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্ষণ এবং তাতে তৃণমূল-যোগের অভিযোগ ওঠায় বিরোধীরা সরকারকে কোণঠাসা করতে মরিয়া।

অথচ দিঘায় জগন্নাথ মন্দির নিয়ে উন্মাদনা, সৈকত শহরে পর্যটনের সম্ভাবনা, রথযাত্রায় লক্ষাধিক মানুষের ভিড়- সবই ছিল মুখ্যমন্ত্রীর কাছে খুশির বিষয়। কালীগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থীর বড় জয়ও ছিল খুশির খবর। যদিও বিজয় মিছিলের সময় বোমার আঘাতে নাবালিকার মৃত্যু শাসকদলকে চাপে ফেলেছে। তাহলেও এক বছরে ১১টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের সবক’টিতেই ঘাসফুলের জয়ে মুখ্যমন্ত্রী কিছুটা স্বস্তিতে ছিলেন।

কিন্তু এর মধ্যে কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন থেকে সামান্য দূরত্বে আইন কলেজে এমন হাড়হিম করা ঘটনা তৃণমূলের ভাবমূর্তিকে কালিমালিপ্ত করেছে। বিরোধীরা আন্দোলনে নেমেছে। ফের রাতদখল কর্মসূচির ভাবনাচিন্তা চলছে। মুখ্যমন্ত্রী ভালোই বুঝতে পারছেন, দলীয় কর্মী ও নেতাদের একাংশের ওপর দলের অনুশাসন, নিয়ন্ত্রণ নেই। শৃঙ্খলাও নেই। ক’দিন আগে বোলপুর থানার আইসিকে ফোনে অনুব্রত মণ্ডলের অশ্লীল গালিগালাজ তার বড় প্রমাণ।

আর দশ মাসের মধ্যে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, স্বাস্থ্যসাথীর মতো সামাজিক প্রকল্পের ওপর ভর করে একুশের বিধানসভা, চব্বিশের লোকসভা, ১১ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন তৃণমূল উতরে গিয়েছে ঠিকই। কিন্তু রাজ্যজুড়ে নারী নির্যাতনে তৃণমূল কর্মীদের যোগ মহিলা ভোটব্যাংকে ধস নামাতে পারে বলে আশঙ্কা আছে। তৃণমূল সম্পর্কে উৎসাহ হারাচ্ছেন শহরের অনেক বাসিন্দা। সময় থাকতে তাই আপাতত দলের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *