ওরকম ‘মা’ ডাক আর শুনিনি

ওরকম ‘মা’ ডাক আর শুনিনি

খেলাধুলা/SPORTS
Spread the love


  • সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়

উত্তমকুমার যে আমাদের মধ্যে নেই, এই কথাটাই আমি বিশ্বাস করি না। নিজের কাজের মধ্যে দিয়ে এখনও তিনি বাংলা চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছেন। প্রতিদিন কোনও না কোনও প্রসঙ্গে তাঁর নাম উচ্চারিত হয়। উত্তমকুমারকে আজও উপেক্ষা করা সম্ভব নয়, আগামীতেও হবে না। এমন একটা দিন নেই যে, আমরা তাঁকে স্মরণ করি না। আমি বিশ্বাস করি, দেহ চলে যায়, কিন্তু আত্মার মৃত্যু নেই। মনের ভেতরে মানুষের স্মৃতি রয়ে যায়।

আমার অনেক আগে উত্তমকুমার সিনেমার দুনিয়ায় আসেন। হতে পারে সেই সিনেমাগুলো ততটা জনপ্রিয় হয়নি। কিন্তু আমি যখন সিনেমা শুরু করছি, ততদিনে উত্তমকুমার বেশ পরিচিত। এরপর একসঙ্গে একাধিক সফল সিনেমায় অভিনয় করেছি। দুজনেরই জনপ্রিয়তা বেড়েছে। উত্তমকুমার হুল্লোড়বাজ লোক ছিলেন। তাঁর সঙ্গে শুটিংয়ে হইহই করে সময় কাটত। সবসময় মজা করতেন। সহ অভিনেতাদের তাঁর বিভিন্ন ছবির গল্প বলতেন। সেজন্য সবাই তাঁকে খুব ভালোবাসত। উত্তমকুমারই বোধহয় একমাত্র অভিনেতা ছিলেন, যাঁকে সেই অর্থে কেউ অপছন্দ করতেন না। হয়তো এখনও করেন না। তাঁর মতো আর্টিস্টের সঙ্গে কাজ করা ভাগ্যের ব্যাপার। মানুষ হিসেবেও উত্তমকুমার বিরল।

শুটিংয়ের বাইরে উত্তমকুমারের সঙ্গে আমার বিশেষ একটা সময় কাটেনি। সিনেমার পাশাপাশি তাঁর সঙ্গে আমার মঞ্চে মানে, থিয়েটারে অভিনয়ের সুযোগ হয়েছিল। একবার নয়, একাধিকবার। স্টার থিয়েটারে ‘শ‍্যামলী’ নাটকে একসঙ্গে কাজ করেছি। পরিচালনায় ছিলেন শিশির মল্লিক ও যামিনী মিত্র। বড় বড় সব আর্টিস্ট ওই নাটকে অভিনয় করতেন। ভানু বন্দ‍্যোপাধ‍্যায়, জহর গঙ্গোপাধ্যায়, সরযূবালা দেবী, অনুপকুমার ইত্যাদি। ‘শ‍্যামলী’ নাটকে অনিলের ভূমিকায় অভিনয় করতেন উত্তমকুমার। একটা প্রজন্ম ছিল, যাঁরা ১০-১২ বার করে ওই নাটকটি দেখেছেন। সেই নাটকে উত্তমকুমারের অভিনয়ে মুগ্ধ হয়ে বহু মহিলা দর্শক এসে বলতেন, যদি আপনার মতো আমাদের একটা সন্তান থাকত! সে যদি এভাবে ‘মা’ বলে ডাকত, তাহলে আমরা ধন্য হয়ে যেতাম। তাঁর ‘মা’ ডাকের মধ্যে এমনই একটা কাকুতিমিনতি ছিল যে, সেটা শুধু অভিনয়ের পরিসরে সীমাবদ্ধ থাকত না।

স্মৃতির অতল সমুদ্রে ডুব দিলে আবার মনে পড়ে যায় ২৪ জুলাইয়ের কথা। সালটা ১৯৮০। আমি সবে ঘুম থেকে উঠেছি। আমার দিদি খবর দিল, উত্তমবাবু আর নেই। আমি বেশ খানিকক্ষণ থ হয়ে বসে রইলাম। বিছানা থেকে নামতে পারিনি। সারাটা দিন শুধু ভাবলাম, এই লোকটার মৃত্যু এত তাড়াতাড়ি না হলেও পারত। বাংলা সিনেমাকে তাঁর আরও অনেককিছুই দেওয়ার ছিল। উত্তমকুমারের আকস্মিক প্রয়াণে এক গভীর বিষাদ আমাকে গ্রাস করেছিল।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *