সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রায় প্রতিটা রান্না ঘরেই আজকাল ছোট কনভেকশন ওভেন খুঁজে পাওয়া যায়। তেল ছাড়া রান্নার জন্য ‘এয়ার ফ্রায়ার’-এর ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। চিকেন নাগেট, মিটবল, চিকেন উইংসের মতো লোভনীয় খাবার তৈরিতে ‘এয়ার ফ্রায়ার’-এর জুড়ি মেলা ভার। এছাড়া যেকোনও খাবার মুচমুচে করার জন্য এই ওভেনের গুরুত্ব অপরিসীম। গরম বাতাস সঞ্চালনের মাধ্যমে কম তেলে খাবারকে মুচমুচে ও সুস্বাদু করে তোলার এই কায়দাকে নতমস্তকে গ্রহণ করেছে খাদ্যপ্রেমীদের ভাঁড়ার ঘর। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে ন্যূনতম তেল ব্যবহার করে কিংবা তেল ছাড়াই এই রান্না পদ্ধতি আগামী দিনে স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি নিয়ে আসবে না তো? চলুন, জেনে নেওয়া যাক এর ভালো-মন্দ দিকগুলি।
ভালো দিক:
১. তেলের ব্যবহার হ্রাস: এয়ার ফ্রায়ারের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল রান্নার জন্য অত্যন্ত কম তেলের ব্যবহার। সাধারণত ডিপ ফ্রায়িংয়ে খাবারকে তেলে ডুবিয়ে ভাজতে হয়, যার ফলে খাবারে ক্যালরি ও ফ্যাটের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। কিন্তু এয়ার ফ্রায়ার গরম বাতাস ব্যবহার করে খাবারের চারপাশে ঘুরিয়ে খাবারকে মুচমুচে করে তোলে। এই পদ্ধতিতে তেলের প্রয়োজন পড়ে না। কিংবা খুব সামান্য তেলেই রান্না করা যায়। ফলে স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ কম তেলে একই স্বাদ পেতে যেকোনও খাবারই রান্না করার জন্য এয়ার ফ্রায়ারকেই বেছে নেবেন, এটাই স্বাভাবিক।
২. স্বাস্থ্যকর রান্নার পদ্ধতি: ডুবো তেলে রান্না করা খাবার সাধারণত স্থূলতা, হৃদরোগ ও অন্যান্য শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এয়ার ফ্রাইং আপনাকে অতিরিক্ত তেল ছাড়াই ভাজাভুজি ও অন্যান্য রান্নায় একই স্বাদ দেয়। অথচ শরীরে ফ্যাটের সমস্যা বৃদ্ধি করে না। ট্র্যাডিশনাল ওভেনে রান্না করে ডুবো তেলে আলুভাজা খেলে যে স্নেহপদার্থ আপনার শরীরে জমতে পারে, এয়ার ফ্রায়ারে সেই একই রান্নায় খাবারে ফ্যাটের পরিমাণ ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব।
৩. বিভিন্ন রান্নায় ব্যবহার: ভাজাভুজি ছাড়াও বেকিং, গ্রিলিং, রোস্টিং এমনকী বাসি খাবার গরম করার জন্যও এয়ার ফ্রায়ার ব্যবহার করা যায়। ফলে এতে রান্না করার সুবিধা রয়েছে অনেকগুণ বেশি।
৪. সময় সাশ্রয়ী: অন্যান্য ওভেনের চেয়ে দ্রুত খাবার রান্না করা যায়। যা আজকের ব্যস্ত জীবনে অনেকটা সময় বাঁচায়। দ্রুত গরম বাতাস সঞ্চালনের ফলে খুব কম সময়ের মধ্যেই খাবার রান্না করা যায়। ফলে সময় অনেকটা সাশ্রয় হয়।
মন্দ দিক:
১. খাদ্যের প্রকৃত পুষ্টিগুণ কমে যেতে পারে: কম তেল ব্যবহার করে রান্না করে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি অনেকটাই কমানো যায় একথা সত্যি। কিন্তু এয়ার ফ্রায়ারে রান্না করলে অন্য একটি সমস্যাও দেখা যায়। আমরা জানি জলে দ্রবণীয় ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট তাপের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। এয়ার ফ্রায়ারের উচ্চ তাপমাত্রায় খাদ্যের কার্যকারিতা কমে যায়। খাদ্যের পুষ্টিগুণ অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়। খাদ্যে অবস্থিত ভিটামিনগুলো নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েই যায়।
২. অস্বাস্থ্যকর যৌগিক পদার্থ উৎপাদন: অ্যাক্রিলামাইড হল একটি রাসায়নিক যৌগ যা উচ্চ তাপমাত্রায় স্টার্চযুক্ত খাবার রান্না করার ফলে তৈরি হয়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে এই যৌগটি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। এয়ার ফ্রাইং, বিশেষ করে আলু বা অনুরূপ স্টার্চযুক্ত খাবারের ক্ষেত্রে অ্যাক্রিলামাইড যৌগ তৈরি হতে পারে। তবে তার মাত্রা সাধারণত ডিপ ফ্রাইংয়ের চেয়ে কম হয়। এক্ষেত্রে অ্যাক্রিলামাইড উৎপাদনকারী খাবার পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করা এবং প্রাত্যহিক জীবনে সুষম খাদ্য বজায় রাখাই বাঞ্ছনীয়।
৩. সীমিত রান্নার ক্ষমতা: বাজারে বিভিন্ন ধরনের এয়ার ফ্রায়ার পাওয়া যায়। সবচেয়ে বড় মডেলগুলোরও রান্নার ক্ষমতা অন্যান্য বাজারচলতি ওভেনের তুলনায় সীমিত। তাই বেশি মানুষের জন্য রান্না করার ক্ষেত্রে অসুবিধা দেখা দেয়। সেক্ষেত্রে কয়েক দফায় রান্না করতে হতে পারে।
৪. খাবারের স্বাদ পরিবর্তন: যদিও এয়ার-ফ্রাইড খাবার মুচমুচে ও সুস্বাদু, তবে তা পুরোপুরি ডিপ-ফ্রাইড খাবারের স্বাদ কখনওই আপনাকে দিতে পারবে না। স্বাদের পার্থক্য থাকবেই।