সুলয়া সিংহ: দুর্গাসুন্দরীর কণ্ঠহার চুরি গিয়েছে। সকলের মনখারাপ। পুলিশ কি পারবে সেটা খুঁজে বের করতে? ক্লাব প্রেসিডেন্ট বললেন, ”পুলিশ দিয়ে হবে না। ডাকো ব্যোমকেশ বক্সীকে।” না, ‘বিশুপাল বধ’-এর মতো এটা শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আরও একটি অসমাপ্ত ব্যোমকেশ কাহিনি নয়। আসলে পুজোর মণ্ডপ সাজাতে এক্কেবারে নতুন একটা ব্যোমকেশ কাহিনি রচনা করেছেন শিল্পী অনির্বাণ দাস। দমদম পার্ক তরুণ সংঘের পুজো মণ্ডপ সেজে উঠবে সেই কাহিনিকে বর্ণনা করতেই। ক্লাবের ৪০ তম বর্ষের পুজোয় অভিনব থিম ‘এক প্যান্ডেল ব্যোমকেশ’। এবার পুজোয় সেখানেই হবে সম্পূর্ণ রহস্যভেদ। সত্যান্বেষীর দেখাও মিলবে মণ্ডপেই!
শিল্পীদের অভিনব চিন্তাধারায় বাঙালির দুর্গাপুজো পেয়েছে অন্য মাত্রা। দু’বছর আগেই যেমন অনির্বাণ দাস হাতিবাগান নবীন পল্লিতে ‘আবোল তাবোল’কে স্মরণ করিয়ে হইহই ফেলে দিয়েছিলেন। আবার গতবার পুজোয় শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন প্রখ্যাত পরিচালক তপন সিনহাকে। আর এবার তাঁর চমক ব্যোমকেশ। কলকাতার পুজোয় সম্ভবত প্রথমবার ‘পা রাখছে’ সত্যান্বেষী। এমন থিমভাবনার কারণ কী? সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল-এর সঙ্গে কথা বলার সময় শিল্পী জানান, ”আবোল তাবোল আর ব্যোমবেশ কিন্তু একেবারে আলাদা। আবোল তাবোল ছিল একটা বইয়ের সেলিব্রেশন। আর এবার আমি ব্যোমকেশের গল্প বলব কমিক্সের আকারে। যেভাবে অরণ্যদেব, ম্যানড্রেক পড়ি আমরা, সেভাবেই গোটা মণ্ডপ ঘুরে সত্যান্বেষীর নতুন অভিযানটা পড়ে ফেলতে পারা যাবে। পপ আর্টের সঙ্গে এখানে থাকবে পপ আপও।”
গতবার তরুণ সংঘে এই শিল্পীই করেছিলেন ‘মুক্তধারা’। এবার ব্যোমকেশ। কিন্তু কেন? অনির্বাণ বলছেন, ”আমি ভেবেছিলাম এমন একজন বাঙালিকে নিয়ে কাজ করব যে সবার মনের মধ্যে রয়েছে। অথচ সে ছাপোষা। সাধারণের ভিড়ে অনায়াসে মিশে যায়। কিন্তু সে অনন্য। এমন একটা চরিত্রের কথা ভাবতে বসলে ব্যোমকেশ ছাড়া আর কার কথা মনে পড়বে? সে কিন্তু শার্লক হোমস বা ফেলুদার মতো হিরো নয়। সে ভীষণ সাধারণ। সংসারী। বিয়ে থা করেছে। সন্তান আছে। ফলে রয়েছে অর্থচিন্তাও। ঠিক যেন আমাদেরই প্রতিনিধি। তাই ব্যোমকেশকে বেছে নেওয়া।”
তবে কেবল কমিক্সের আর্ট নয়, একেবারে রক্তমাংসের ব্যোমকেশকেও চাক্ষুষ করা যাবে মণ্ডপে এলে। এমনটাই জানালেন শিল্পী। ”মণ্ডপটা ঘুরিয়ে দেখাবে ব্যোমকেশ, সত্যবতী, অজিতই। মিশে যাবে মানুষের ভিড়ে।” কমিক্স ও অভিনয়ের যুগলবন্দির সঙ্গে জমজমাট আবহসঙ্গীতও। এভাবেই শরদিন্দুর অমর চরিত্রকে অভিনব ভাবে উদযাপনের পরিকল্পনা। অনির্বাণের কথায়, ”প্রত্যেকটা চেনা বাড়ির একটা করে অচেনা গল্প আছে। প্রত্যেকটা মনের আছে একটা করে অন্ধকার কোণ। আর আছে আমাদের সবার ব্যোমকেশ বক্সী।” শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল, তরুণ সংঘের মণ্ডপে এসে ঠাকুর দেখার সঙ্গে সঙ্গে ব্যোমকেশের নতুন রহস্যের মুখোমুখি হওয়াটা যে দর্শনার্থীদের জন্য অভিনব অভিজ্ঞতা হতে চলেছে সেটা এখন থেকেই হলফ করে বলে দেওয়া যায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন