সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সরে দাঁড়িয়েছিল বিশ্ব ব্যাঙ্ক। কিন্তু একক আর্থিক ক্ষমতায় ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে পদ্মা সেতু। যার উদ্বোধন হয় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে। কিন্তু এখন সেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক চিত্র সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে। ‘গণ অভ্যুত্থানে’ গদি হারিয়ে হাসিনা দেশত্যাগ করেছেন। দুর্নীতি, গণহত্যা-সহ শতাধিক মামলা দায়ের হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এবার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মহম্মদ আবদুল মোমেন পদ্মা সেতু প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে তদন্ত শুরু করার কথা জানালেন।
এক যুগের বেশি সময় আগে পদ্মা সেতু প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের যে অভিযোগ উঠেছিল, তা নতুন করে তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন। দুদক চেয়ারম্যান মোমেন এ তথ্য জানিয়ে বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে অনিয়মের যথেষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও ‘গায়ের জোরেই’ মামলাটি থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগে যে বিভ্রান্তি ও অনিয়মের অভিযোগ ছিল, সেসবের যথেষ্ট প্রমাণ থাকলেও শেষ পর্যন্ত আদালতে চূড়ান্ত এফআরটি দিয়ে মামলার নিষ্পত্তি করা হয়। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর বিষয়টি পুনর্মূল্যায়ন করা হয়। মামলার জন্য নতুন করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।
বলে রাখা ভালো, পদ্মা সেতু নির্মাণে কানাডার সংস্থা এসএনসি–লাভালিনকে পরামর্শক নিয়োগে ঘুষ লেনদেনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে ২০১২ সালে এ প্রকল্পে অর্থায়ন স্থগিত করেছিল বিশ্ব ব্যাঙ্ক। এরপর একই বছরের ১৭ ডিসেম্বর এ বিষয়ে বনানী থানায় মামলা করে দুদক। মামলায় মোট সাতজনকে আসামি করা হয়। তাঁদের মধ্যে প্রধান আসামি ছিলেন তৎকালীন সেতু বিভাগের সচিব মহম্মদ মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। তাঁকে গ্রেপ্তার করে সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও পরে জামিনে মুক্তি পেয়ে তিনি চাকরিতে ফেরেন।
মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে ছিলেন সেতু বিভাগের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কাজী মহম্মদ ফিরদৌস, সওজের (সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের) নির্বাহী প্রকৌশলী রিয়াজ আহমেদ জাবের, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড প্ল্যানিং কনসালট্যান্ট লিমিটেডের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এসএনসি-লাভালিনের স্থানীয় প্রতিনিধি মহম্মদ মোস্তফা, এসএনসি-লাভালিনের প্রাক্তন পরিচালক মহম্মদ ইসমাইল, আন্তর্জাতিক প্রকল্প বিভাগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট রমেশ সাহ এবং প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট কেভিন ওয়ালেস। প্রায় দুই বছর তদন্তের পর ২০১৪ সালে এ মামলায় আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। আসামিরা সবাই অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেয়ে যান। নতুন তদন্তে কেউ দায়ী প্রমাণিত হলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দুদক চেয়ারম্যান।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২৫ জুন হাসিনা বহু প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন। হাসিনা নিজে মাওয়া প্রান্ত দিয়ে টোল প্রদান করে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতুতে গিয়েছিলেন। পরদিন থেকেই সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত এই সেতুকে সরকারের তরফ থেকে দেখানো হয় বাংলাদেশের সক্ষমতার স্মারক হিসেবে। আন্তর্জাতিক মহলেও এই সেতু ঘিরে রয়েছে আলোচনা আর কৌতুহল।