এক্তিয়ারের দিকনির্দেশ

এক্তিয়ারের দিকনির্দেশ

ব্যবসা-বাণিজ্যের /BUSINESS
Spread the love


ভারতে রাজ্যপাল পদ নেহাতই আলংকারিক। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিয়মতান্ত্রিক কর্তব্য পালন ছাড়া রাজ্যপালের কিছু করার থাকে না। অথচ গত কয়েক বছর ধরে বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলিতে বারবার রাজ্যপাল বনাম রাজ্য সরকারের বিরোধ প্রকাশ্যে আসছে। ভারতের সংবিধান অনুযায়ী, রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রীর সমন্বয় রেখে চলাই দস্তুর। এর অন্যথা হলে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের কাজকর্মে প্রভাব পড়ে। তাই সুসম্পর্ক বজায় রাখার ওপর নজর রাখা উচিত রাজ্যপাল এবং রাজ্য সরকার- উভয়ের।

কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে একাধিক বিরোধী শাসিত রাজ্যে রাজভবন এবং রাজ্য সরকারের টানাপোড়েনে সেই সুসম্পর্কে ঘা লেগেছে। বিধানসভায় পাশ হওয়া বিল দিনের পর দিন আটকে রাখা নিয়ে তামিলনাডুর রাজ্যপাল আরএন রবির সঙ্গে ডিএমকে সরকারের বিরোধ নতুন নয়। মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন আগেও বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছিলেন। তাতে কাজ হয়নি।

অবশেষে সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যপালকে তিরস্কার করে সাফ বলে দিয়েছে, বিধানসভায় পাশ হওয়া বিল আটকে রাখা বেআইনি। রাজ্যপালের উচিত, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিধানসভায় পাশ হওয়া বিল নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। তামিলনাডুর রাজভবনকে সংবিধানের ২০০ নম্বর অনুচ্ছেদ স্মরণ করিয়ে শীর্ষ আদালত বলেছে, রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে রাজ্যপালের উচিত, জনসাধারণের ইচ্ছাকে মর্যাদা দেওয়া এবং রাজ্য মন্ত্রীসভার পরামর্শ মেনে কাজ করা।

সুপ্রিম কোর্টের এই কঠোর বার্তায় বিভিন্ন বিরোধী শাসিত রাজ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা রাজ্যপাল ও রাজ্য সরকারের বিরোধ মিটবে কি না পরিষ্কার নয়। বিরোধীদের অভিযোগ, আজকাল রাজভবনগুলি থেকে সমান্তরাল প্রশাসন চালানো হয়। যা কাম্য নয়। সংবিধান অনুযায়ী, রাজ্যপাল রাজ্য সরকারের অঙ্গ। তিনি রাজ্য মন্ত্রীসভার পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করবেন।

দেশের সমস্ত রাজ্যেই অবশ্য রাজভবন-রাজ্য সরকার বিরোধ চলছে না। বিজেপি কিংবা এনডিএ শাসনাধীন রাজ্যগুলিতে রাজভবনের অতিসক্রিয়তার বালাই নেই। ব্যতিক্রম বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলি। সুপ্রিম কোর্ট তামিলনাডুর রাজ্যপালের ভূমিকার সমালোচনা করেছে। কিন্তু ছবিটা পশ্চিমবঙ্গ, কেরলে প্রায় একই। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মীরে হালে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এসেছে। সেখানেও মুখ্যমন্ত্রী বনাম উপরাজ্যপাল সংঘাত বাড়ছে।

অতীতে দিল্লিতে আপ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন উপরাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীর বিরোধ রোজনামচায় পরিণত হয়েছিল। বিজেপি সেখানে ক্ষমতায় আসতেই সেসব অতীত হয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস কিংবা তাঁর পূর্বসূরি জগদীপ ধনকরের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রীসভার সংঘাতও নানা সময়ে চরম আকার নিয়েছে। তামিলনাডুর মতো পশ্চিমবঙ্গেও বিধানসভায় পাশ হওয়া একাধিক বিল রাজ্যপালের অনুমোদনের অপেক্ষায় পড়ে আছে।

আরজি কর মেডিকেলে চিকিৎসককে ধর্ষণ, মৃত্যুর পর বিধানসভায় অনুমোদিত অপরাজিত বিল কিংবা হাওড়া কর্পোরেশন সংক্রান্ত বিল সেই পড়ে থাকার তালিকার মধ্যে পড়ে। তামিলনা‌ডুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন সুপ্রিম কোর্টের রায়কে শুধুমাত্র তাঁর রাজ্যের নয়, দেশের সমস্ত রাজ্যের জন্য ঐতিহাসিক বলে দিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্ট পরিষ্কার ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে, আইনানুযায়ী সাংবিধানিক পদাধিকারীরা সাংবিধানিক মূল্যবোধ মেনে কাজ করতে বাধ্য।

তামিলনাডুর রাজ্যপাল আরএন রবির ভূমিকার সমালোচনা করে সর্বোচ্চ আদালতের বক্তব্য, রাজ্য বিধানসভায় গৃহীত ১০টি বিল রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠানোর মতো রাজ্যপালের পদক্ষেপ সংবিধান মতে অবৈধ এবং ভুল। রাজ্যপালের এক্তিয়ার কতটা, তিনি কীভাবে নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করবেন ইত্যাদির স্পষ্ট ব্যাখ্যা আছে সংবিধানে।

তারপরও একাধিক রাজ্যে রাজ্যপাল বনাম মুখ্যমন্ত্রীদের বিরোধ পুরোপুরি অবাঞ্ছিত, অনাকাঙ্ক্ষিত ও সংবিধান বিরোধী। রাজ্যপাল কী করতে পারেন আর কী করতে পারেন না, তা সুপ্রিম কোর্ট ফের স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী রাজ্য ও রাজ্যপালের ক্ষমতার সমন্বয় ও ভারসাম্য রক্ষায় শীর্ষ আদালতের এই রায় নিঃসন্দেহে উল্লেখযোগ্য মাইলফলক।

The put up এক্তিয়ারের দিকনির্দেশ appeared first on Uttarbanga Sambad.



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *