একের পর এক যুদ্ধ, রাষ্ট্রসংঘ কেন নীরব দর্শক?

একের পর এক যুদ্ধ, রাষ্ট্রসংঘ কেন নীরব দর্শক?

স্বাস্থ্য/HEALTH
Spread the love


একের-পর-এক যুদ্ধ, অথচ রাষ্ট্র সংঘ নীরব দর্শক। মানবতার পাশে দাঁড়াতে চায় আদৌ? সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের মতো হবে না তো এর ভবিষ‌্যৎ?

বর্তমান বিশ্বের উত্তাল যুদ্ধ পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র সংঘের ভূমিকা এক গভীর প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়েছে। একের পর এক সংঘাত, লক্ষ-লক্ষ মানুষের বাস্তুচ্যুতি, মানবাধিকার লঙ্ঘনের করুণ চিত্র– এসবের মাঝে রাষ্ট্র সংঘ যেন শুধুই বিবৃতি দেওয়া, আর উদ্বেগ প্রকাশের একটি প্রতীকমাত্র হয়ে উঠেছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ থেকে গাজা-ইজরায়েল সংকট, সিরিয়া, সুদান, মায়ানমার কিংবা ইয়েমেন– প্রত্যেক ক্ষেত্রেই রাষ্ট্র সংঘের কার্যকর কোনও হস্তক্ষেপ দেখা যায়নি। নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যদের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, ভেটো নীতির অদূরদর্শিতা এবং রাজনৈতিক সুবিধাবাদের ছায়া আন্তর্জাতিক শান্তির এই প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্যকেই যেন তামাশায় পরিণত করেছে।

রাষ্ট্র সংঘ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভগ্নস্তূপের উপর দাঁড়িয়ে বিশ্বশান্তি, নিরাপত্তা ও মানবাধিকারের রক্ষক হিসাবে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে তা ক্রমশ একটি আমলাতান্ত্রিক, জটিল ও দায়হীন প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়েছে। যারা মানবাধিকারের শপথ নিয়েছে, তারা-ই আবার নিরাপত্তা পরিষদে অস্ত্র রফতানির স্বার্থে যুদ্ধকে মদত দিয়েছে, শান্তির নামে যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে। এ এক নির্মম বাস্তবতা।

একটু ইতিহাসের দিকে তাকানো যাক। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতার পর প‌্যারিস শান্তিচুক্তি অনুসারে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ‘লিগ অফ নেশন’ বা ‘সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ’। প্রতিষ্ঠাকালীন ‘কভেন‌্যান্ট’ অনুযায়ী বিশ্ব সংস্থাটির উদ্দেশ‌্য ছিল সম্মিলিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও অসামরিকীকরণের মাধ্যমে যুদ্ধ এড়ানো এবং সমঝোতা বা সালিশির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক দ্বন্দ্বের নিরসন। অল্প কিছু সাফল্য এবং শুরুর দিকে বেশ কয়েকটি ব্যর্থতার পর অবশেষে গত শতাব্দীর ত্রিশের দশকে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ অক্ষশক্তির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দঁাড়াতে প্রচণ্ডভাবে ব্যর্থ হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতেই এটা প্রমাণ হয়ে যায় যে, আর-একটি বিশ্বযুদ্ধ এড়াতে জাতিপুঞ্জ সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ ভেঙে যায়। সেই আদলে প্রতিষ্ঠা হয় ‘ইউনাইটেড নেশনস’ বা ‘রাষ্ট্র সংঘ’। এ সময় রাষ্ট্রসংঘের নিজস্ব শান্তিরক্ষী বাহিনী রয়েছে। তারা বহু দেশে নিযুক্ত থাকলেও, তাদের ক্ষমতা সীমিত, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া জটিল এবং প্রায়শই রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে কার্যকর হতে পারে না। ফলে বিশ্বজুড়ে নিরীহ মানুষের উপর বোমা পড়ে, শিশুদের মৃতদেহ ভেসে আসে সৈকতে, নারীদের উপর চলে নিপীড়ন। কিন্তু রাষ্ট্র সংঘের পদক্ষেপ হয় একরকম দেরিতে আসা ‘দুঃখপ্রকাশ’।

রাষ্ট্র সংঘ যদি বর্তমান গঠনতন্ত্রে ও নীতিতে পরিবর্তন না-আনে, যদি বৃহৎ শক্তির প্রভাব থেকে মুক্ত করতে না-পারে নিজেকে, তবে তার অস্তিত্ব প্রশ্নের মুখে পড়বে। একটি ন্যায়ভিত্তিক, বিকেন্দ্রীকৃত ও দায়িত্বশীল রাষ্ট্র সংঘ ছাড়া এই বিশ্ব আর কোনও দিনই স্থায়ী শান্তির মুখ দেখবে না। তাই প্রশ্ন জাগছে– রাষ্ট্র সংঘ সত্যিই চায় তো মানবতার পাশে দাঁড়াতে? না কি তারা কেবলই নীরব দর্শক হয়ে থাকবে? রাষ্ট্র সংঘের ভবিষ‌্যৎও সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের মতো হবে না তো?



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *