প্রথম ইনিংস
ইংল্যান্ড ৩৮৭ (রুট ১০৪, বুমরাহ ৫/৭৪)
ভারত ৩৮৭ (রাহুল ১০০, ওকস ৩/ ৮৪)
দ্বিতীয় ইনিংস
ইংল্য়ান্ড ১৯২ (রুট ৪০, ওয়াশিংটন ৪/২২)
ভারত ১৭০ (রাহুল ৬১, আর্চার ৫৫/৩)
ভারত হারে ২২ রানে।
সিরিজে ২-১ ব্যবধানে পিছিয়ে ভারত।
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এভাবেও হেরে যাওয়া যায়? লর্ডসে তৃতীয় টেস্টের শেষ ইনিংসে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে জিততে ভারতের দরকার ছিল ১৯৩ রান। পিচে সামান্য অসমান বাউন্স আছে, বল অল্পবিস্তর মুভ করছে। কিন্তু ভয় ধরানোর কিছু নেই। সেখানে একের পর এক উইকেট হারিয়ে ২২ রানে হারল ভারত। জোফ্রা আর্চাররা বল ভিতরে এনে সমস্যায় ফেললেন ঠিকই, কিন্তু তার থেকেও বেশি ভোগাল চাপ না নিতে পারার ব্যর্থতা। একা কুম্ভের মতো লড়ে গেলেন রবীন্দ্র জাদেজা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তীরে এসে তরী ডুবল। লর্ডসে হেরে ফের সিরিজে পিছিয়ে পড়লেন শুভমানরা।
অথচ ইংল্যান্ড ব্যাটিংয়ের দ্বিতীয় ইনিংস দেখে মনে হয়নি ছবিটা এরকম হতে পারে। চতুর্থ দিনের অন্যতম অর্জন ১৯২ রানে ইংল্যান্ডকে বেঁধে ফেলা। লর্ডসে আগ্রাসনের ছিল নাম মহম্মদ সিরাজ। ‘সুন্দর’ বোলিংয়ের আরেক নাম ওয়াশিংটন। ট্রেডমার্ক ইয়র্কার নিয়ে মঞ্চে প্রবেশ করেন জশপ্রীত বুমরাহও। মাত্র ১৯২ রানে ইংল্যান্ডকে বেঁধে ফেলে ভারত। হতে পারে চতুর্থ দিনের শেষ লগ্নের পিচ। তবু ভারতের তারকাখচিত ব্যাটিং বিভাগের সমস্যা হওয়ার তো কথা নয়। এই দলটা প্রথম টেস্টে ৮০০-র উপর রান ও দ্বিতীয় টেস্টে ৭০০-র কাছাকাছি রান করেছে। লর্ডসে প্রথম ইনিংসে করেছে ৩৮৭। শুভমান গিল, ঋষভ পন্থরা আগুনে ফর্মে আছেন। সেখানে ১৯৩ রান এমন কী বড় ব্যাপার!
কিন্তু লর্ডসে শেষ ইনিংসের চাপ ভালোমতোই টের পেল ভারত। জোফ্রা আর্চারের বলে অফ স্টাম্পের বাইরে বলে বাউন্সারে পুল মারতে গিয়ে শূন্য রানে ফিরলেন যশস্বী জয়সওয়াল। ম্যাচের তুল্যমূল্য পরিস্থিতিতে এমন শট খেলা ‘ক্রিমিনাল অফেন্স’। শুরুতে খানিক নড়বড়ে দেখাল রাহুলকেও। ৫ রানের মাথায় নিজের বলে রাহুলের সহজ ক্যাচ ছাড়লেন ওকস। এর পর ব্যক্তিগত ১৪ রানের মাথায় ব্রাইডন কার্সের বল ছাড়তে গিয়ে প্যাডে লাগিয়ে আউট হন করুণ। ‘প্রিয়’ ক্রিকেটের থেকে আর বোধহয় তিনি সুযোগ পাবেন না। বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারলেন ভারতীয় অধিনায়ক শুভমান গিলও। ফলে রাহুলকে সঙ্গে দিতে মাঠে নামেন নৈশপ্রহরী আকাশ দীপ। ১ রান করে আউট হন তিনি। চতুর্থ দিনের শেষে ভারতের রান ছিল ৪ উইকেট হারিয়ে ৫৮।
পঞ্চম দিনে ঋষভ পন্থ ও কেএল রাহুলের কাঁধে ছিল ভারতকে জেতানোর দায়িত্ব। আর্চারের বলের লাইনই বুঝতে পারলেন না পন্থ। বোল্ড হয়ে ফিরলেন মাত্র ৯ রানে। রাহুল ফিরলেন ৩৯ রানে। ভারতের আশাভরসা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন তিনি। বেন স্টোকসের এলবিডব্লু হওয়ার পরই কার্যত ভারতের হাত থেকে ম্যাচ বেরিয়ে যায়। ৮১ রানে ৬ উইকেট হারানো ভারতের কাছে অবশ্য ওয়াশিংটন সুন্দর, নীতীশ রেড্ডিরা ছিলেন। সুন্দর বোলিংয়ে যতটা ভরসা দিয়েছেন, ব্যাটিংয়ে তার ধারেকাছেও গেলেন না। রানের খাতা না খুলে জোফ্রা আর্চারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেলেন। অন্যদিকে রবীন্দ্র জাদেজার সঙ্গে অনেকক্ষণ ধৈর্য ধরে ব্যাট করছিলেন নীতীশ রেড্ডি। কিন্তু লাঞ্চের ঠিক আগেই আউট হয়ে গেলেন তিনি।
সেখান থেকে জশপ্রীত বুমরাহকে নিয়ে দীর্ঘ সময় একা কুম্ভের মতো লড়ে যান রবীন্দ্র জাদেজা। বুমরাহও স্টোকস-আর্চারদের সামলে দিচ্ছিলেন। কিন্তু স্টোকসের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। আশ্চর্যজনকভাবে আউট হলেন মহম্মদ সিরাজ। যখন আশা করা হচ্ছিল, সিরাজ ঠিক লড়ে যাবেন, তখনই বিপর্যয়। সোয়েব বশিরের বল তিনি ডিফেন্স করলেন ঠিকই, কিন্তু তা ঘুরে উইকেটে আঘাত করল। আলতো করে বেলটিও পড়ে গেল। ভেঙে গেল ভারতের স্বপ্নও। জাদেজা অসহায়ের মতো অপরাজিত রইলেন ৬১ রানে। ভারতের ইনিংস শেষ হয় ১৭০ রানে। অক্লান্ত পরিশ্রমে আর্চার তুললেন ৩ উইকেট। যোগ্য সঙ্গ দিলেন স্টোকস-কার্সরাও। লর্ডস টেস্ট জিতে সিরিজে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে গেল ইংল্যান্ড।